বিতর্ক আর তাঁর দূরত্ব যৎসামান্য। তিনি যা বলেন, যা করেন, তাতেই তৈরি হয় বিতর্ক। এ বার অবসাদ কাটাতে ইলন মাস্ক যে ওষুধের কথা জানিয়েছেন, তাই নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৩ ১৫:২৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
বিশ্বের সব থেকে ধনী ব্যক্তিও ভোগেন অবসাদে! এমনটাই দাবি করেছে আমেরিকার সংবাদমাধ্যম। তারা জানিয়েছে, টুইটার কর্তা ইলন মাস্ক অবসাদে ভোগেন। তবে অবসাদ কাটাতে তিনি যে ওষুধ ব্যবহার করেন, তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
০২১৭
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, অবসাদ কাটাতে কিটামাইন ব্যবহার করেন মাস্ক। এটি এক ধরনের সাইকেডেলিক ড্রাগ যা মেজাজ পরিবর্তন করতে পারে।
০৩১৭
সংবাদমাধ্যমের আরও দাবি, টেসলা কর্তা নাকি পার্টি করার সময়ও কিটামাইন সেবন করেন।
০৪১৭
এই দাবি নিয়ে মাস্ক বা তাঁর মুখপাত্র মুখ খোলেননি। যদিও অতীতে তিনি কিটামাইনের হয়ে সওয়াল করেছিলেন। এ-ও দাবি করেছিলেন, অবসাদ কমাতে এটি ব্যবহার করা উচিত।
০৫১৭
দিন কয়েক আগে মাস্ক একটি টুইটে লিখেছিলেন, আমেরিকায় অবসাদের বাড়বাড়ন্ত। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এটা মস্তিষ্কের রসায়নের বিষয়। তার পরেই মাস্কের পরামর্শ, ‘‘আমি দেখেছি বন্ধুবান্ধবদের ক্ষেত্রে, মাঝেমধ্যে কিটামাইন নেওয়া ভাল বিকল্প।’’
০৬১৭
এই কিটামাইন আসলে কী? অ্যানাসথেশিয়া বা রোগীদের অসাড় করার কাজে এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়। আমেরিকার খাদ্য এবং ওষুধ নিয়ামক সংস্থা (এফডিএ) জানিয়েছে, এটি এক ধরনের স্কেডিউল-৩ ওষুধ, যা শরীর এবং মনের উপরও প্রভাব ফেলে। তবে এর অসাড় করার ক্ষমতা স্কেডিউল-১ এবং স্কেডিউল-২-এর অন্তর্ভুক্ত ওষুধের থেকে কম।
০৭১৭
চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী আরও বিশদে বুঝিয়েছেন এর ব্যবহার। তিনি জানিয়েছেন, কিটামাইন আসলে হালকা মাত্রার অ্যানাসথেশিয়া। সাময়িক ভাবে ব্যথা-যন্ত্রণা ভুলে থাকা যায়। ফোঁড়া কাটতে হলে বা ছোটখাটো অস্ত্রোপচারে রোগীকে অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহার করা হয় কিটামাইন।
০৮১৭
চিকিৎসকদের মতে, চিকিৎসার কাজে এই কিটামাইন নিয়ন্ত্রিত ভাবে ব্যবহার করা হয়। তবে অনেক মানুষ বিনোদনের জন্য এই ওষুধ ব্যবহার করেন।
০৯১৭
কেন বিনোদন বা নেশার জন্য কিটামাইনের ব্যবহার বাড়ছে? চিকিৎসক সুবর্ণের দাবি, ‘‘এই ওষুধ প্রয়োগের কিছু ক্ষণ পর জ্ঞান আসে। কিন্তু মস্তিষ্ক কাজ করে না। রোগী ভুল বকেন। তাই অনেকেই নেশার জন্য এই ওষুধ ব্যবহার করেন। এই ওষুধ মাত্রার বেশি প্রয়োগ করা হলে দীর্ঘ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।’’
১০১৭
আমেরিকান সংবাদমাধ্যমের দাবি, কিটামাইন সেবন করলে অলীক কিছু দৃশ্য (হ্যালুসিনেশন) ভেসে উঠতে পারে চোখের সামনে। মানুষ ভুল দেখতে পারেন। যেমন নিষিদ্ধ রাসায়নিক এলএসডি (লিসারজিক অ্যাসিড ডাইথাইলামাইড) নিলে হতে পারে।
১১১৭
সংবাদমাধ্যমের আরও দাবি, কিটামাইন নিলে বাস্তবের সঙ্গে যোগ ছিন্ন হয়ে যায়। মনে হয় অন্য কোনও জগতে রয়েছেন তিনি।
১২১৭
একটি মেডিক্যাল ওয়েবসাইট ওয়েবএমডিতে দাবি করা হয়েছে, এই কিটামাইন হল ‘ডেট-রেপ ড্রাগ’। অর্থাৎ, এই ড্রাগ সেবন করলে মানুষের মধ্যে ধর্ষণের ইচ্ছা জাগতে পারে। ‘ধর্ষণের মতো বিষয়ও সহজ’ করে দেয় এই ড্রাগ। যদিও অনেক চিকিৎসক এই দাবি মানতে চাননি।
আমেরিকান সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, কিটামাইন আইনি ভাবে মূলত রোগীকে অসাড় করার কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে কোনও কোনও চিকিৎসক মাঝেমধ্যে অবসাদের চিকিৎসার জন্য কিটামাইন সেবনের পরামর্শ দেন। যদিও চিকিৎসক সুবর্ণ তা মানেননি। তিনি জানিয়েছেন, অবসাদ নিরাময়ের জন্য কিটামাইন ব্যবহার করা হয় না।
১৫১৭
অনেক চিকিৎসক ব্যথা নিরাময়ে রোগীকে কিটামাইন খেতে বলেন।
১৬১৭
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দাবি, মাস্ক একা নন। গুগলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সেরগেই ব্রিনও অবসাদ কাটাতে কখনও কখনও ‘ম্যাজিক মাশরুম’ খান। এ ধরনের মাশরুম খেলেও হালকা নেশা হতে পারে। সংবাদমাধ্যমের এ-ও দাবি, আমেরিকার তথ্যপ্রযু্ক্তি শিল্পের কেন্দ্রস্থল সিলিকন ভ্যালিতে অনেক কর্মী এবং কর্তাই এই ধরনের সাইকেডেলিক ওষুধ নেন, যা তাঁদের কাজে মনোনিবেশে সাহায্য করে।
১৭১৭
পরিসংখ্যান বলছে, ক্রমেই বাড়ছে এই সাইকেডেলিক গোষ্ঠীর ওষুধের বাজার। ২০২১ সালে এর বিক্রি ছিল ২৯০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। মনে করা হচ্ছে, ২০২৯ সালে তা বেড়ে হতে পারে ৮০০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা। পরিসংখ্যান দেখে একাংশ মনে করছেন, আধুনিক জীবনযাপনে এই ধরনের ওষুধ সেবনের প্রবণতা বাড়বে। বাড়বে অবসাদও।