What is India’s stand on Israel Hamas conflict dgtl
India on Israel Palestine Conflict
ইজ়রায়েলকে সমর্থন, কিন্তু হামাসকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা নয়, ভারত কি মধ্যস্থতাকারী হতে চাইছে?
ভারত বরাবর পশ্চিম এশিয়ার যাবতীয় বিতর্কে নিরপেক্ষ থেকেছে। কিন্তু সম্প্রতি ইজ়রায়েল এবং হামাসের দ্বন্দ্ব ভারতের বহু দিনের সেই অবস্থানকে কিছুটা নাড়িয়ে দিয়েছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:০৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইজ়রায়েল আক্রমণ করার পর যুদ্ধ শুরু হয়েছে পশ্চিম এশিয়ায়। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে পাল্টা প্রত্যাঘাত করেছেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
০২২২
সোমবার ইজ়রায়েল-হামাসের যুদ্ধ ২৩ দিনে পড়ল। গত ২৩ দিনে মৃত্যুমিছিল দেখেছে গাজ়া-সহ সমগ্র পশ্চিম এশিয়া। গাজ়ায় আট হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। ইজ়রায়েলে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১৪০০।
০৩২২
যুদ্ধে প্রথম থেকেই আমেরিকাকে পাশে পেয়েছে ইজ়রায়েল। তাদের সমর্থন করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ এবং পশ্চিমি দুনিয়া। এই পরিস্থিতিতে ইজ়রায়েল-হামাস দ্বন্দ্বে ভারতের অবস্থান চর্চার কেন্দ্রে এসেছে।
০৪২২
ভারত বরাবর পশ্চিম এশিয়ার যাবতীয় বিতর্কে নিরপেক্ষ থেকেছে। কোনও ক্ষেত্রেই ভারতকে আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্দিষ্ট কোনও পক্ষ নিয়ে মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।
০৫২২
একেবারে প্রথম দিকে প্যালেস্তাইনকে ভেঙে ইজ়রায়েল নামে ইহুদিদের নতুন রাষ্ট্র গঠনে ভারতের সমর্থন ছিল না। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতাই করেছিল সদ্য স্বাধীন ভারতের সরকার।
০৬২২
মহাত্মা গান্ধী এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের বিরোধিতা করেছিলেন। তবে প্যালেস্তাইনের ইহুদিদের প্রতিও তাঁরা সহানুভূতিশীল ছিলেন।
০৭২২
১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইহুদি রাষ্ট্র ইজ়রায়েল গঠিত হয়। পরে ১৯৫০ সালে ভারত ইজ়রায়েলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়। তবে ইজ়রায়েলের সঙ্গে প্যালেস্তাইন এবং আরব দেশগুলির বিতর্কে ভারত বরাবর নিরাপদ দূরত্বে থেকেছে।
০৮২২
সম্প্রতি ইজ়রায়েল এবং হামাসের দ্বন্দ্ব ভারতের সেই বহু দিনের অবস্থানকে কিছুটা নাড়িয়ে দিয়েছে। ইজ়রায়েলে হামাসের আক্রমণের পরেই প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ খুলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যা অতীতে দেখা যায়নি।
০৯২২
এক্স হ্যান্ডেলে মোদী ইজ়রায়েলকে সমর্থন করেন এবং হামাসের হামলার বিরোধিতা করেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘ইজ়রায়েলে সন্ত্রাসবাদী হামলার খবরে আমি অত্যন্ত বিস্মিত। নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও যাঁদের মৃত্যু হল, আমি তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। এই কঠিন সময়ে আমরা ইজ়রায়েলের পাশে আছি।’’
১০২২
মোদীর মন্তব্য শুনে অনেকেই মনে করেছিলেন, পশ্চিম এশিয়া প্রসঙ্গে ভারত তার চিরাচরিত অবস্থান হয়তো বদলাচ্ছে। হয়তো আমেরিকা ঘনিষ্ঠ ইজ়রায়েলের পক্ষেই এ বার থেকে কথা বলবে নয়াদিল্লি।
১১২২
কিন্তু যুদ্ধ যত এগিয়েছে, তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ ভারতের অবস্থান সম্পর্কে আরও বেশি জটিলতা তৈরি করেছে। ভারত ইজ়রায়েলের পক্ষে এবং হামাসের বিপক্ষে, চোখ বুজে সে কথা বলা যাচ্ছে না।
১২২২
হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের তকমা দিয়েছে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি। ভারত সেই তালিকায় নেই। মোদীর মন্তব্যের ঠিক পাঁচ দিন পর ভারতের বিদেশ মন্ত্রক যে বিবৃতি দিয়েছে, তা অন্য রকম।
১৩২২
ইজ়রায়েল-প্যালেস্তাইন দ্বন্দ্বে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি স্থাপনের কথা আগেও বলেছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্যও তেমন ছিল। ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্তাইনের সরাসরি আলোচনার বসা উচিত বলে জানিয়েছিল ভারত।
১৪২২
বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী, অবিচল। ভারত সবসময়েই চেয়েছে নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্তাইনের সহাবস্থান এবং তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আলোচনা।’’
১৫২২
কিছু দিন আগে রাষ্ট্রপুঞ্জে ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে ভোটাভুটি হয়েছিল। তা থেকে বিরত ছিল ভারত। গাজ়ায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনা হয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জে। ভারত সেখানে কোনও ভোট দেয়নি।
১৬২২
আরব দেশগুলির তরফে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল জর্ডন। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১২০টি সদস্য দেশ। বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ১৪টি দেশের প্রতিনিধিরা। ভারত-সহ ৪৫ সদস্যরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত ছিল।
১৭২২
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাবে ইজ়রায়েলের উপর হামাসের হামলার উল্লেখ না থাকার কারণেই ভারত ভোটদানে বিরত থেকেছে। জর্ডনের ওই প্রস্তাবের সঙ্গে ‘হামাসের আক্রমণের’ প্রসঙ্গ সংযোজনের জন্য একটি সংশোধনী প্রস্তাব এনেছিল কানাডা। ভারতের তরফে সমর্থন করা হলেও সংশোধনী প্রস্তাবটি ভোটাভুটিতে খারিজ হয়ে যায়।
১৮২২
গাজ়ায় যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে ত্রাণও পাঠিয়েছে ভারত। প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে সমবেদনা জানিয়েছেন মোদী। তার পরেই ৩৮ টন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গাজ়ায় উড়ে গিয়েছে ভারতের বিমান।
১৯২২
প্যালেস্তাইন ভেঙে ইজ়রায়েলের জন্মলগ্নে ভারত এই দেশভাগকে সমর্থন করেনি। কারণ, নেহরুরা মনে করেছিলেন, ইহুদি রাষ্ট্রকে সমর্থন করলে আরব দেশগুলির বিরাগভাজন হতে হবে। ভারতেও প্রচুর সংখ্যক মুসলমান বাস করেন। তাঁদেরও চটাতে চায়নি নয়াদিল্লি।
২০২২
ক্রমে ইজ়রায়েলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মধুর হয়। ১৯৯২ সালে তেল আভিভে দূতাবাস খোলে নয়াদিল্লি। ২০১৪ সালে মোদী ক্ষমতায় আসার পর তাঁর সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ইজ়রায়েল থেকে ঘুরেও এসেছেন মোদী।
২১২২
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত ইজ়রায়েল বা হামাস কোনও একটি পক্ষ নিচ্ছে না। যা নয়াদিল্লির অবস্থান সম্পর্কে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কৌতূহলী করে তুলেছে। দু’পক্ষের সঙ্গেই ভাল সম্পর্ক রেখে কি ভারত মধ্যস্থতাকারী হিসাবে উঠে আসতে চাইছে? অনেকে সে কথাও বলছেন।
২২২২
পশ্চিম এশিয়ায় মধ্যস্থতাকারী হিসাবে পরিচিত নাম কাতার। তারা বিশ্বের প্রায় সবক’টি বড় বড় সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে। তবে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে না। আমেরিকা বা অন্য কোনও দেশের সঙ্গে ওই সংগঠনের মতবিরোধ তৈরি হলে দু’পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মধ্যপন্থা তৈরি করে দেয় কাতার। ভারত সেই অবস্থান নিতে পারে কি না, তা নিয়ে চর্চা চলছে।