গত ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইনের মাটি যুদ্ধের হুঙ্কারে কেঁপে উঠছে বার বার। এই যুদ্ধে চিনের অবস্থান যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:১৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ ১৮ দিনে পা রেখেছে। ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সংঘর্ষে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে এশিয়ার পশ্চিম প্রান্তের বাতাস। মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র এবং গোলাবর্ষণ চলছে।
০২২২
গত ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালায় হামাস। তার পরেই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে প্রত্যাঘাত করেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
০৩২২
সেই থেকে ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মাটি যুদ্ধের দামামায় কেঁপে উঠেছে বার বার। সাধারণ মানুষকে মাটির নীচে বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে হয়েছে। গাজ়ায় খাদ্য, জলসঙ্কট চরমে পৌঁছেছে।
০৪২২
পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতিমধ্যেই। শুধু গাজ়াতেই মৃতের সংখ্যা ছ’হাজারের কাছাকাছি। আহত ১৬ হাজারের বেশি।
০৫২২
ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে পশ্চিম এশিয়া বরাবরই আন্তর্জাতিক মহলের আলোচনার কেন্দ্রে থাকে। সেখানকার যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ চিন কী ভাবছে?
০৬২২
পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতিতে না চাইতেই চিনের অংশগ্রহণের চেষ্টা সাম্প্রতিক অতীতে কারও নজর এড়ায়নি। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে বেজিংয়ের সক্রিয় বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ দেখা গিয়েছে।
০৭২২
চিন বরাবরই পশ্চিম এশিয়ায় শান্তির কথা বলে এসেছে। এই অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে বন্ধুত্বের মাধ্যমে শান্তিস্থাপনের জন্যই তাদের যাবতীয় পদক্ষেপ, অতীতে জানিয়েছে বেজিং।
০৮২২
কিন্তু ইজ়রায়েল এবং হামাসের সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বে চিনের অবস্থান গোলমেলে। তারা প্রথম দিকে প্যালেস্টাইনের পক্ষে কথা বললেও পরে সুর খানিক বদলেছে।
০৯২২
পশ্চিম এশিয়ায় চিনের প্রাথমিক লক্ষ্য, আরবীয় দেশগুলির পাশাপাশি ইজ়রায়েলের স্বার্থও লালন করা। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারলেই ‘দালাল’ হিসাবে চিনের স্বার্থও সুরক্ষিত হবে।
১০২২
পশ্চিম এশিয়ায় বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী চিন। তাই আরব দেশগুলির বিরাগভাজন হওয়া জিনপিংয়ের কাম্য নয়। ইতিমধ্যে পশ্চিম এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের সঙ্গেই অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলেছে চিন।
১১২২
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে চিনের বিনিয়োগের পরিমাণ যথাক্রমে ৫,৬২৮ কোটি এবং ৪,০৮১ কোটি ডলার। গত এক দশক ধরে ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সঙ্গীও এই চিন। আগামী ২৫ বছরে ইরানে চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
১২২২
ইরানের সঙ্গে চিনের এই ঘনিষ্ঠতাকে ব্যবহার করে যুদ্ধ থামাতে চিনের হস্তক্ষেপ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছিল আমেরিকা। চাইলেই চিন সেই ভূমিকা নিতে পারত।
১৩২২
যুদ্ধে হামাসের পক্ষ নিয়েছে ইরান। কিন্তু তাদের পক্ষ নিলে ইজ়রায়েলের মন জুগিয়ে চলা সম্ভব নয়। তাই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলে চিনের অবস্থান কী হবে, তার দিকে নজর ছিল গোটা বিশ্বের।
১৪২২
চিন প্রথম থেকে প্যালেস্তাইনের পাশে থাকার কথা বলে আসছিল। সম্প্রতি হঠাৎ বেজিংয়ের অবস্থান বদলের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। যা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
১৫২২
হামাসকে শুরু থেকেই সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে উল্লেখ করেনি চিন। উল্টে পশ্চিম এশিয়ার দ্বন্দ্বে ইন্ধন দেওয়ার জন্য আমেরিকার দিকে আঙুল তুলেছে তারা।
১৬২২
জিনপিং প্যালেস্তিনীয় যোদ্ধাদের সমর্থন করে মিশর এবং অন্যান্য আরব দেশর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে অবিলম্বে সংঘর্ষ বিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব প্যালেস্তাইন সমস্যার একটি ন্যায্য এবং স্থায়ী সমাধানের জন্য চাপ তৈরি করতে হবে।’’
১৭২২
মঙ্গলবার অবস্থান বদলের ইঙ্গিত দিয়ে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই গাজ়ায় ইজ়রায়েল সেনার হামলাকে যেন সমর্থনই করে বসলেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক দেশেরই আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।’’ তবে সেই সঙ্গেই তাঁর বার্তা, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলা উচিত। অসামরিক নাগরিকদের যাতে ক্ষতি না হয়, সে দিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’’
১৮২২
কেন পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে এত নড়বড়ে অবস্থান চিনের? কেউ কেউ মনে করাচ্ছেন অতীতের কথা। ষাটের দশকে চিন প্যালেস্তাইনকে সমর্থন করত এবং সেখানকার যোদ্ধাদের অস্ত্র সরবরাহ করত। পরে নব্বইয়ের দশকে ইজ়রায়েলের সঙ্গে চিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
১৯২২
তার পর থেকে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিবাদে নিরপেক্ষ থাকার নীতিই নিয়েছিল চিন। কোনও বিবাদে হস্তক্ষেপ করলেও তা চলত শান্তিরক্ষার আবরণের আড়ালে। আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি পশ্চিম এশিয়ায় চিনের এই সক্রিয়তাকে কখনওই ভাল চোখে দেখেনি।
২০২২
পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে, তত চিনের সমস্যা বাড়বে। কারণ ওই এলাকার দেশগুলিতে যে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ বেজিংয়ের রয়েছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যুদ্ধের কারণে।
২১২২
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে তাকিয়েও শিক্ষা নেওয়া দরকার চিনের। ওই যুদ্ধে চিন রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছিল। যুদ্ধের ফলে বিপুল অর্থক্ষয়ের আঁচ লেগেছে চিনা অর্থনীতিতেও।
২২২২
যুদ্ধ থামাতে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চাইছে না চিন, মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আবার যুদ্ধ চলতে থাকলেও তাদের ক্ষতির আশঙ্কা। তাই অনেকের মতে, চিন দুই নৌকায় পা দিয়ে চলতে চাইছে। তাতে ফল কতটা হবে, আদৌ পশ্চিম এশিয়ার উত্তাপ কমবে কি না, নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।