লোকসভা ভোটের আবহে ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা অনুপ্রবেশ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। তবে, গত সপ্তাহে শাক্সগাম উপত্যকায় বেজিংয়ের সড়ক নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় দিল্লি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৪ ০৮:১৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
লাদাখে সিয়াচেন হিমবাহের পূর্ব প্রান্তের শাক্সগাম উপত্যকায় সড়ক এবং সুড়ঙ্গ নির্মাণ করছে চিনা পিপল্স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। এমন খবর প্রকাশ্যে এসেছিল সপ্তাহখানেক আগেই। বিদেশি সংস্থার তোলা উপগ্রহচিত্রও প্রকাশ্যে এসেছিল।
০২১৯
এ বার শাক্সগাম উপত্যকায় চিনের তৈরি সেই রাস্তা নির্মাণের সামরিক প্রভাব খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিল ভারত। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে তেমনটাই।
০৩১৯
শাক্সগাম উপত্যকায় চিনের দখলদারি সিয়াচেন হিমবাহে ভারতীয় প্রতিরক্ষাকে কতটা হুমকির মুখে ফেলতে পারে, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে খবর।
০৪১৯
পাক অধিকৃত ভারতীয় ভূখণ্ডে শাক্সগাম এলাকায় (সামরিক পরিভাষায় 'ট্রান্স কারাকোরাম ট্র্যাক্ট') চিনের সড়ক এবং সুড়ঙ্গপথ নির্মাণ নিয়ে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছিল নতুন উপগ্রহচিত্র।
০৫১৯
উপগ্রহচিত্রে দেখা গিয়েছে, সেখানে স্থায়ী নির্মাণ চালাচ্ছে চিনা ফৌজ। তৈরি হচ্ছে সড়ক এবং সুড়ঙ্গপথ!
০৬১৯
১৯৪৮ সালেই অবিভক্ত জম্মু ও কাশ্মীরের ওই এলাকা দখল করেছিল পাক সেনা। এর পর ১৯৬৩ সালে সিয়াচেন হিমবাহের পূর্ব প্রান্তের শাক্সগাম উপত্যকার ৫১৮০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা অবৈধ ভাবে চিনের হাতে তুলে দিয়েছিল পাকিস্তান।
০৭১৯
লোকসভা ভোটের আবহে ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা অনুপ্রবেশ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। তবে গত সপ্তাহে শাক্সগাম উপত্যকায় বেজিংয়ের সড়ক নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় দিল্লি।
০৮১৯
বৃহস্পতিবার বিদেশ মন্ত্রকের তরফেও বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘শাক্সগাম উপত্যকা ভারতের অংশ।’’
০৯১৯
ভারতের ধারণা, ভবিষ্যতে সংঘাতের পরিস্থিতির মোকাবিলার লক্ষ্যে শি জিনপিংয়ের সেনা এই সড়ক নির্মাণ করছে।
১০১৯
পশ্চিম চিনের শিনজিয়াং প্রদেশের কাশগড় থেকে দক্ষিণ পাকিস্তানের গ্বদর বন্দর পর্যস্ত বিস্তৃত কারাকোরাম হাইওয়ে (যার পোশাকি নাম— ‘চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’ বা সিপিইসি) গিয়েছে শাক্সগাম উপত্যকার কাছ দিয়েই। ১৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ‘বাই লেন’ মহাসড়ক চিনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কর্মসূচির অন্যতম প্রধান অঙ্গ।
১১১৯
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চিন ওই সড়ক ভবিষ্যতে এমন ভাবে প্রসারিত করতে পারে, যা কারাকোরাম হাইওয়েকে সিয়াচেন হিমবাহের সীমান্তবর্তী আপার শাক্সগাম উপত্যকার সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
১২১৯
আর যদি তা হয়, তা হলে রাস্তাটি ১৬,৩৩৩ ফুট আঘিল পাসের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে আপার শাক্সগাম হয়ে কারাকোরাম গিরিপথে এবং পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের উত্তরাঞ্চলের খুঞ্জেরাব পাসে যাওয়ার বিকল্প রাস্তা হয়ে উঠতে পারে। যা ভারতের চিন্তা বৃদ্ধি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৩১৯
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দ্রুত সেনা এবং সামরিক সরঞ্জাম পরিবহণের উদ্দেশ্যেই শাক্সগাম থেকে সিপিইসি সংযোগকারী রাস্তা বানাচ্ছে চিনা ফৌজ। পাশাপাশি নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গগুলিতে সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সেনার পাশাপাশি ভারী অস্ত্রশস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ রসদ মজুত রাখার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে বলেও তাঁদের অনুমান।
১৪১৯
চিন যদি আপার শাক্সগাম উপত্যকায় দীর্ঘ সড়ক তৈরি করে, তা হলে দক্ষিণে পাকিস্তান এবং উত্তরে চিন— সিয়াচেন হিমবাহে সাঁড়াশি চাপের মুখে ফেলার চেষ্টা করা হতে পারে ভারতকে। তখন শাক্সগাম উপত্যকায় চিনা তৎপরতা রুখতে ভারতীয় সেনাকে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা করতে হতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
১৫১৯
বিশেষজ্ঞরা এ-ও মনে করছেন, সিয়াচেন হিমবাহ এবং সালতোরো রিজে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবস্থানকে চাপে ফেলার জন্য রাস্তা এবং সামরিক ঘাঁটির মাধ্যমে লোয়ার এবং আপার শাক্সগাম উপত্যকাকে যুক্ত করতে চায় চিন।
১৬১৯
আর সেই কারণেই শাক্সগাম উপত্যকায় চিন রাস্তা তৈরি করলে সম্ভাব্য ঝুঁকি কী হবে, তা নিয়ে আগে থেকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করতে চলছে ভারত।
১৭১৯
দীর্ঘ দিন ধরেই শাক্সগাম উপত্যকা নিয়ে তার নিজস্ব উদ্বেগের কথা শুনিয়ে আসছে ভারত। ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রিকস্ সামিটে ভারতের বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে চিনা প্রতিপক্ষ ওয়াং ইয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন অজিত ডোভাল। যদিও এই আলোচনায় বিশেষ কোনও লাভ হয়নি।
১৮১৯
বছর কয়েক আগে প্যাংগং হ্রদের উত্তর এবং দক্ষিণ তীর জুড়ে চিনা ফৌজের সেতু নির্মাণের ‘তৎপরতা’ দেখা গিয়েছিল উপগ্রহচিত্রে। এর পরে ম্যাক্সার-প্রকাশিত উপগ্রহচিত্র দেখিয়েছিল, এলএলসি লাগোয়া আকসাই চিন এলাকায় চিনা সেনা স্থায়ী বাঙ্কার এবং বড় সুড়ঙ্গ তৈরি করছে।
১৯১৯
শাক্সগাম উপত্যকায় সড়ক নির্মাণ নিয়ে গত দু’বছরে দু’বার প্রতিবাদ জানিয়েছিল ভারত। ভারত চিনের কাছে এ-ও স্পষ্ট করেছে, অবৈধ ভাবে দখল করা ভূখণ্ডে সড়ক নির্মাণ বন্ধ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে তারা।