Walking library: জন কিটস থেকে নেপোলিয়ন, ‘ওয়াকিং লাইব্রেরি’র ইতিহাস জানলে চমকে যাবেন
পিঠে ব্যাগের মতো করে বাধা কাঠের তৈরি দু’টি তাকের মধ্যে রাখা একগুচ্ছ বই। খুবই অল্প দামে বিক্রি করতেন ‘ওয়াকিং লাইব্রেরি’রূপী বইবিক্রেতারা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২২ ১৯:১৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৩
কেরলের ওয়েনাড় জেলা। ৬৩ বছর বয়সি রাধামণি কিলোমিটারের পর কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে বই বিক্রি করেন। রাধারাণির আরও একটি নামও রয়েছে— ‘ওয়াকিং লাইব্রেরি’। আক্ষরিক অর্থে বলতে গেলে ‘চলমান গ্রন্থাগার’।
০২১৩
অবাক করা নাম! লাইব্রেরি আবার হাঁটতে-চলতে পারে নাকি? কিন্তু এই নামের প্রচলন বহু যুগ আগেই করা হয়েছে। ইউরোপীয় শহরগুলিতে রাস্তায় বেরোলে ‘ওয়াকিং লাইব্রেরি’ চাক্ষুষ দেখতে পাওয়ারও সম্ভাবনা ছিল প্রবল।
০৩১৩
পিঠে ব্যাগের মতো করে বাঁধা রয়েছে কাঠের তৈরি দু’টি তাক। সেই তাকের মধ্যে থাকে থাকে রাখা একগুচ্ছ বই। খুবই অল্প দামে সেই বইগুলো বিক্রি করতেন এই ‘ওয়াকিং লাইব্রেরি’রূপী বই-বিক্রেতারা।
০৪১৩
এই ধারণাই পরে পরিবর্তিত হয়। বইপ্রেমীরা এর পর পায়ে হেঁটে কোথাও ঘুরতে গেলে এ ভাবেই কাঁধে ব্যাগের মতো করে তাক তৈরি করে বই নিতে যেতেন। বিশ্রামস্থলে বসে বই পড়তেন তাঁরা।
০৫১৩
এই অভ্যাস পথের ক্লান্তি তো দূর করত বটেই, এ ছাড়াও অনেকে বলতেন যে, তাঁরা যখন দীর্ঘ সময়ের জন্য যাত্রা করেন, চলার পথে কখনও পাহাড়, কখনও সমুদ্র কখনও বা ঘন সবুজ জঙ্গল পড়ে। অনবরত পারিপার্শ্বিক পরিবেশের এই বদল, বইয়ের মূল বিষয়বস্তু— সব মিলিয়ে পাঠকের মননেও প্রভাব ফেলে।
০৬১৩
১৭৯৪ সাল। জন হাকস ও কোলেরিজ রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছেন। গন্তব্যস্থল ওয়েলস শহরের উত্তর প্রান্ত। তাঁদের পথের সঙ্গী ছিল থমাস চার্চইয়ার্ডের লেখা কবিতার বই।
০৭১৩
আট বছর পরের ঘটনা। কাম্বারল্যান্ডের উদ্দেশে চলেছেন কোলেরিজ। একটি শার্ট, গলায় বাঁধার বিশেষ ক্রাভাট, প্যান্ট, মোজা, কাগজ, কলম, রাতে পড়ার টুপি— সব কিছুই মনে করে নিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল জার্মান ভাষায় লেখা একটি কবিতার বই।
০৮১৩
বাদ পড়েননি কবি জন কিটস-ও। ১৮১৮ সালে তিনি চার্লস ব্রাউনের সঙ্গে লেক ডিসট্রিক্টে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কিটসের আরও দুই সঙ্গী ছিল— দান্তের ‘ডিভাইন কমেডি’ এবং ‘দ্য ওয়ার্কস অব জন মিল্টন’।
০৯১৩
কিন্তু বেশি পরিমাণে বই নিয়ে যাওয়ার জন্যেও বড় আকারের বাক্স তৈরি করা হয়। কাঠের বাক্সের মধ্যে নিজের পছন্দের বইয়ের মিনিয়েচার তৈরি করে এমন ভাবে চামড়া দিয়ে মোড়ানো থাকত যে বই-ভর্তি ওই বাক্সকে একটি বইয়ের মতোই দেখতে লাগত। বর্তমানে অবশ্য এই বাক্সটি ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব লিডসের সংগ্রহে রয়েছে।
১০১৩
১৮৮৫ সালে স্যাক্রামান্টো ডেইলি ইউনিয়নে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ থেকে জানা যায়, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ৬০টি বই রাখার মতো একটি ‘ট্রাভেলিং লাইব্রেরি’ বানানোর বন্দোবস্ত করেছিলেন। তাঁকে সহায়তা করেছিলেন ল্যুভর লাইব্রেরির দায়িত্বে থাকা এম লুই বার্বিয়ার।
১১১৩
এই প্রসঙ্গে অস্টিন ক্লেয়ন জানিয়েছেন, নেপোলিয়নের বিশেষ অনুরোধ ছিল যে, তাঁর পছন্দের বইগুলিকে যেন পাঁচশো থেকে ছয়শো পাতার মধ্যে থাকা হয়। বইগুলি এমনভাবে মুড়ে রাখা হত, যেন তা পড়ার সময় অসুবিধা না হয়, আবার যাত্রার সময়েও বইয়ের কোনও ক্ষতি না হয়।
১২১৩
পরে এই ‘ট্রাভেলিং লাইব্রেরি’ অন্য উপলক্ষে ব্যবহৃত হত। গ্রামীণ এলাকা থেকে শুরু করে স্কুলের সামনে গাড়ি করে বই নিয়ে যাওয়া হত। সেখান থেকেই কম দামে নিজেদের পছন্দমতো বই কিনতেন সকলে।
১৩১৩
‘ওয়াকিং লাইব্রেরি’র এই পুরনো প্রথা উদ্যাপন করতে ২০১২ সালে বেলজিয়ামের উত্তর থেকে দক্ষিণ সীমানা পর্যন্ত মোট ৩৩৩ কিলোমিটার রাস্তা কাঁধে বই নিয়ে হেঁটে গিয়েছিলেন সাইডওয়েজ ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণকারীরা।