Venezuela's marakaibo lake witnesses continuous lightening dgtl
Catatumbo Lightning Venezuela
৩৬৫ দিন অনবরত চলে বজ্রপাত! কলকাতা থেকে কত দূর ‘কালবৈশাখী’ হ্রদ
পৃথিবীর বুকেই রয়েছে এমন একটি জায়গা, যেখানে সারা বছর অনবরত চলে বজ্রপাত। মিনিটে অন্তত ২৮ বার বাজ পড়ে। চলে টানা ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা ধরে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
এক দিন, দু’দিন, তিন দিন— দিন কেটে যায়, ঘুরে যায় বছর। ‘কালবৈশাখী’ হ্রদে বিদ্যুতের ঝলকানি থামে না। সময়ের হিসাব না মেনেই অনবরত সেখানে হয়ে চলে বজ্রপাত।
০২২০
দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর দিকের দেশ ভেনেজুয়েলা। তারই উত্তর-পশ্চিমে ছোট্ট অংশ জুড়ে রয়েছে মারাকাইবো হ্রদ। অনায়াসে যার ডাক নাম হতে পারে ‘কালবৈশাখী হ্রদ’। কলকাতা থেকে ভেনেজুয়েলার ওই হ্রদের দূরত্ব প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার।
০৩২০
কেন ‘কালবৈশাখী হ্রদ’ নাম দেওয়া যেতে পারে? বস্তুত, এই হ্রদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া একে কালবৈশাখী ঝড়ের মতো উত্তাল করে তুলেছে। প্রকৃতির নিয়মেই মারাকাইবো হয়ে উঠেছে চঞ্চল।
০৪২০
মারাকাইবো হ্রদে প্রকৃত অর্থে ঝড় ওঠে না। কিন্তু রোজ বিকেল হলেই তীব্র বজ্রপাতে কেঁপে ওঠে ওই হ্রদ এবং তার আশপাশের এলাকা। এক বার নয়, দু’বার নয়। বার বার।
০৫২০
বলা হয়, মারাকাইবো হ্রদে বজ্রপাত কখনও থামে না। এক বার শুরু হলে তা চলতেই থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রচণ্ড বজ্রপাতে এলোমেলো হয়ে যায় গোটা হ্রদ। তার ধারেকাছে যাওয়ার সাহস হয় না কারও।
০৬২০
প্রতি দিন নয় থেকে দশ ঘণ্টা টানা বজ্রপাত হয় মারাকাইবো হ্রদ এবং সংলগ্ন এলাকায়। সকালের আলো ফুটলে অবশ্য হ্রদের অন্য রূপ। তখন সেখানকার দৃশ্য দেখে কারও বোঝার উপায় নেই, সারা রাত প্রকৃতি কী ভাবে সেখানে তাণ্ডব চালিয়েছে।
০৭২০
মারাকাইবো দ্বীপে প্রতি দিন সূর্য ডুবলে আসে ‘কালবৈশাখী’। স্থানীয় ভাষায় এর নাম ‘ক্যাটাটুম্বো বজ্রপাত’। যা এক বার শুরু হলে অনবরত চলতেই থাকে। হিসাব করে দেখা গিয়েছে, প্রতি মিনিটে অন্তত ২৮ বার বজ্রপাত হয় মারাকাইবোতে। এমন পরিস্থিতি চলে টানা নয় ঘণ্টা।
০৮২০
মুহুর্মুহু বিদ্যুতের ঝলকানিতে দেখার মতো দৃশ্য তৈরি হয় মারাকাইবোতে। অনেকে বলেন, ওই হ্রদে রাত নামে না। সূর্য ডুবলেও সেখানে ‘দিন’ ধরে রাখে বিদ্যুতের আলো।
০৯২০
মারাকাইবো হ্রদের এই প্রাকৃতিক ঘটনাকে এক সময় নাবিকেরা দিক নির্দেশক হিসাবে ব্যবহার করতেন। ১৮২৩ সালে স্পেনের বিরুদ্ধে ভেনেজুয়েলার স্বাধীনতা সংগ্রামে জয়ের নেপথ্যেও নাকি এই বিদ্যুতের অবদান রয়েছে।
১০২০
মারাকাইবো নিয়ে বিজ্ঞানীদের উৎসাহের শেষ নেই। পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, বছরে অন্তত ১২ লক্ষ বার বজ্রপাত হয় ওই হ্রদে। যা পৃথিবীর আর কোনও প্রান্তে দেখা যায় না।
১১২০
কিন্তু কেন মারাকাইবো এত বিদ্যুৎপ্রবণ? প্রতি দিন কেন টানা বজ্রপাত হয়ে চলে ওই হ্রদের বুকে? বিজ্ঞানীরা এর নেপথ্যে নতুন কোনও কারণ বলতে পারেননি।
১২২০
মারাকাইবো হ্রদের তিন দিক জুড়ে রয়েছে উঁচু পাহাড়। এক দিকে ভেনেজুয়েলা উপসাগরের সঙ্গে জুড়ে আছে এই হ্রদ। বিজ্ঞানীরা জানান, এই ভূপ্রাকৃতিক অবস্থান ঘন ঘন বজ্রপাতের অন্যতম কারণ।
১৩২০
হ্রদের উষ্ণ জল সারা দিন ধরে বাষ্পীভূত হয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে। উপরের ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে তৈরি হয় ঘন কিউমুলোনিম্বাস মেঘ। পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে যা বৃষ্টিপাত ঘটায়। সঙ্গে মেঘে মেঘে ঘর্ষণে হয় বজ্রপাত।
১৪২০
মারাকাইবো হ্রদের জল উষ্ণ থাকার কারণ ক্যারিবিয়ান সাগর। সেখান থেকে উষ্ণ জল পৌঁছয় হ্রদে। যা বজ্রপাতের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছে ভেনেজুয়েলায়।
১৫২০
হ্রদের খুব একটা উপরে মেঘ ঘনীভূত হয় না। জলস্তর থেকে মোটামুটি এক কিলোমিটার উঁচুতে তৈরি হয় কিউমুলোনিম্বাস মেঘ। যা বিদ্যুতের ঝলকানি এবং বজ্রপাতের দাপটকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
১৬২০
মারাকাইবোতে বজ্রপাত চলে সারাবছরই। যদিও শুকনো মরসুমে বজ্রপাতের দাপট তুলনামূলক কম থাকে। বাতাসে সেই সময় জলীয় বাষ্পের পরিমাণও কম থাকে।
১৭২০
২০১০ সালে মারাকাইবোর রেওয়াজে ব্যতিক্রম চোখে পড়েছিল। টানা তিন মাসের জন্য বজ্রপাত উধাও হয়ে গিয়েছিল ওই হ্রদ থেকে। অনেকে সে সময় মনে করেছিলেন, আর হয়তো কখনও মারাকাইবোতে বজ্রপাত হবে না।
১৮২০
মারাকাইবো হ্রদের জলের উপর অনেকের জীবিকা নির্ভর করে আছে। দিনের বেলা হ্রদ যখন শান্ত থাকে, সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের আনাগোনা দেখা যায়। অনেকে হ্রদে মাছ ধরে পেট চালান।
১৯২০
বজ্রপাতের কারণে বহু মৃত্যুর সাক্ষী থেকেছে মারাকাইবো হ্রদ সংলগ্ন এলাকা। অনেকে বজ্রপাত শুরুর সময় আগে থেকে বুঝতে না পেরে বজ্রাঘাতে প্রাণ দিয়েছেন।
২০২০
২০১৬ সালে একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মারাকাইবোর বজ্রপাতের পূর্বাভাস সম্ভব। তা যদি হয়, তবে স্থানীয়দের অনেক সুবিধা হবে। বাঁচবে অনেক প্রাণ।