বাণিজ্যিক আঘাত হানতে বদ্ধপরিকর আমেরিকা। ক্ষেপণাস্ত্র বা প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা সম্ভব, এমন যন্ত্রাংশ বা প্রযুক্তি অথবা সরঞ্জামগুলি রাশিয়াকে সরবরাহ করার পরিণাম সম্পর্কে সচেতন করেছে আমেরিকা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৪ ১২:৩২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ইরান, চিনের পর এ বার ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যিক সখ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন আমেরিকা। সেই দুশ্চিন্তা থেকেই এ বার ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথা জানিয়ে সতর্ক করল আমেরিকা। নয়াদিল্লি-মস্কোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে আমেরিকার কপালে।
০২১৮
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর থেকেই রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আমেরিকা-সহ পশ্চিমের দেশগুলি। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে নয়াদিল্লিকেও তারা ক্রমাগত চাপ দিয়েছে। যদিও ভারত সেই চাপ অগ্রাহ্য করে একের পর এক চুক্তি করে চলেছে মস্কোর সঙ্গে।
০৩১৮
রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট করতে চায়নি ভারত। তাই আমেরিকার চোখরাঙানিকে অগ্রাহ্য করে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকায়। ২০৩০ সালের মধ্যে এই অঙ্ক প্রায় ৮৪ লক্ষ কোটিতে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় রয়েছে ভারত।
০৪১৮
তাই এ বার সরাসরি বাণিজ্যিক আঘাত হানতে বদ্ধপরিকর আমেরিকা। ক্ষেপণাস্ত্র বা প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা সম্ভব, এমন যন্ত্রাংশ বা প্রযুক্তি অথবা সরঞ্জাম রাশিয়াকে সরবরাহ করার পরিণাম সম্পর্কে সচেতন করেছে আমেরিকা।
০৫১৮
যে ভারতীয় সংস্থা রাশিয়ার সঙ্গে এই ধরনের বাণিজ্যের প্রয়াস চালাবে, উভয় সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে হলে সতর্ক করেছে আমেরিকা।
০৬১৮
বিবিধ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়, এমন প্রযুক্তি সরবরাহে অভিযুক্ত থাকার জন্য গত বছরের নভেম্বরে বেঙ্গালুরু কেন্দ্রিক এক বেসরকারি সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আমেরিকা।
০৭১৮
বৈদ্যুতিন উপাদান, যন্ত্রাংশ, ড্রোন এবং ড্রোনের জন্য সফ্টঅয়্যার হল কিছু দ্বৈত ব্যবহারের সামগ্রী, যা অসামরিক এবং সামরিক উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যেতে পারে।
০৮১৮
ভারতীয় সংস্থাগুলিকে নির্দিষ্ট ধরনের পণ্য, যেমন রাসায়নিক, বিমানের যন্ত্রাংশ এবং ক্ষেপণাস্ত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে, এমন উপাদান রফতানি না করার গুরুত্ব সম্পর্কে বার বার সচেতন করে চলেছে আমেরিকা।
০৯১৮
রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতা ছিন্ন করার ‘বার্তা’ দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ‘সামরিক সহযোগিতা’ নিয়ে ভারতকে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছে আমেরিকা, এমনটাই কূটনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা।
১০১৮
রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে ডলার বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক মুদ্রায় লেনদেন ব্যবহারে বাধা থাকায় সরাসরি টাকা ও রুবলের মাধ্যমে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার চুক্তি করেছে ভারত-রাশিয়া।
১১১৮
বিশেষ এক ধরনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সাহায্যে অন্যান্য মুদ্রায় রূপান্তর করার প্রয়োজন ছাড়াই সরাসরি টাকায় বাণিজ্য চালিয়ে আসছে দুই দেশ। এই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টকে ভোস্ট্রো বলা হয়ে থাকে।
১২১৮
রাশিয়ান ব্যাঙ্কগুলি সরাসরি লেনদেন করার উদ্দেশ্যে একাধিক ভারতীয় সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। বাণিজ্যিক এক সংস্থার সূত্র বলছে, ভারতের কাছে তেল বা প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের মতো পণ্য বিক্রি করে ভারতেই সেই টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ রাশিয়াকে দিয়ে রেখেছে ভারত।
১৩১৮
গত বছরের ডিসেম্বরে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নেয় আমেরিকা। এ ছাড়া রাশিয়ার সামরিক শিল্পের সঙ্গে লেনদেনে যে সব বিদেশি ব্যাঙ্কের সংযোগ আছে, তা-ও খুঁজে বার করার চেষ্টা চলছে বলে জানানো হয় তখন।
১৪১৮
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, সেই সূত্র ধরেই ভারতে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি পাঠায় ওয়াশিংটন। আমেরিকার সহকারী অর্থসচিবের সেই চিঠিতে বলা হয়েছিল, যে সব বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার সামরিক শিল্প সংক্রান্ত ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হবে, তারা আমেরিকার আর্থিক সাহায্য হারাতে পারে।
১৫১৮
রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলির জারি করা আর্থিক নিষেধাজ্ঞায় সায় দেয়নি ভারত। যুদ্ধের আবহে রুশ বিদেশমন্ত্রী ভারত সফরে এসে তেল বিক্রি নিয়েও আলোচনা করেছেন।
১৬১৮
ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান-সহ বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলির তিরস্কার শুনতে হয়েছে রাশিয়াকে। তবে এই যুদ্ধ নিয়ে নিজেদের অবস্থান এখনও স্পষ্ট করেনি সাউথ ব্লক।
১৭১৮
আগামী ২৩ অগস্ট ইউক্রেন সফরে যাচ্ছেন মোদী। তবে যুদ্ধ বন্ধের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে মধ্যস্থতা করবে না ভারত, মোদীর ইউক্রেন সফরের আগে সাফ জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র।
১৮১৮
রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বাণিজ্যের পথে হাঁটলে ফল ভাল হবে না, এই হুঁশিয়ারি দিয়ে আমেরিকা সেই ‘ভারসাম্যের কূটনীতির’ পথ বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছে বলেই মনে করছেন বিদেশ মন্ত্রকের আধিকারিকদের একাংশ।