US Russia submarines play cat and mouse game in Cuba dgtl
US-Russia Submarines
কিউবার সমুদ্রে মুখোমুখি আমেরিকা আর রাশিয়ার ডুবোজাহাজ! দুই মহাশক্তিধর মুখোমুখি হওয়ায় বাড়ছে আতঙ্ক
সম্প্রতি হাভানা বেতে পৌঁছয় ছোট একটি রুশ ডুবোজাহাজ। নাম ‘কাজ়ান’। রাশিয়ার তরফে দাবি করা হয়, সামুদ্রিক মহড়াই তাদের উদ্দেশ্য। তার পরের দিনই আমেরিকার পরমাণু শক্তিধর ডুবোজাহাজ ‘হেলেনা’ পৌঁছয় কিউবায়।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪ ১১:৪৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
এ যেন ‘টম অ্যান্ড জেরি’! রাশিয়া এবং আমেরিকার ডুবোজাহাজের মধ্যে এখন সেই খেলাই চলছে। কিউবায় নোঙর করেছিল রুশ পারমাণবিক জাহাজ। তার এক দিন পরেই কিউবার গুয়ানতানামো বেতে ভেসে ওঠে আমেরিকার ডুবোজাহাজ। একে অপরকে ধাওয়া করছে মহাশক্তিধর দুই দেশ? তবে দুই দেশের ডুবোজাহাজের এই ‘লুকোচুরি’ খেলা একেবারেই নতুন নয়।
০২১৮
সম্প্রতি হাভানা বেতে পৌঁছয় ছোট একটি রুশ ডুবোজাহাজ। নাম ‘কাজ়ান’। রাশিয়ার তরফে দাবি করা হয়, সামুদ্রিক মহড়াই তাদের উদ্দেশ্য। তার পরের দিনই আমেরিকার পরমাণু শক্তিধর ডুবোজাহাজ ‘হেলেনা’ পৌঁছয় কিউবায়। আমেরিকার সাদার্ন কমান্ড জানিয়েছে, ‘নিয়মমাফিক বন্দর পরিদর্শন’ করতেই গিয়েছে হেলেনা।
০৩১৮
শুধু আমেরিকার ডুবোজাহাজ নয়, কানাডার নৌসেনার জাহাজও টহল দিয়েছে ওই এলাকায়। আকাশপথে ঘুরছে আমেরিকার পি-৮ বিমান। মূলত সমুদ্রে ডুবোজাহাজ খুঁজে বেড়ায় এগুলি।
০৪১৮
৬২ বছর পর কিউবার সমুদ্রসীমার মধ্যে দেখা গেল কোনও রুশ ডুবোজাহাজকে। রাশিয়া এবং আমেরিকার যে দুই ডুবোজাহাজ প্রায় মুখোমুখি হয়েছে, সেগুলি যে কোনও সেনাবাহিনীর সম্পদ। তবে দু’টির চরিত্র আলাদা।
০৫১৮
১৯৮৬ সালে আমেরিকার নৌবাহিনীতে যোগ দেয় হেলেনা। এই লস অ্যাঞ্জেলস-ক্লাস ডুবোজাহাজ হামলার পাশাপাশি নজরদারিতেও সক্ষম। গোপনে শত্রুপক্ষের খবর সংগ্রহ করতে পারে। তাতে রয়েছে টর্পেডো এবং টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র, যা স্থলে গিয়ে আঘাত হানতে সক্ষম।
০৬১৮
তবে রাশিয়ার কাজ়ান কিন্তু আমেরিকা এবং পশ্চিমের অন্য দেশের সেনাবাহিনীকে ভয় ধরাতে সক্ষম। সে সমুদ্র এবং স্থল, দুই জায়গারই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
০৭১৮
ভবিষ্যতে আমেরিকা এবং রাশিয়ার ডুবোজাহাজের এ ভাবে কাছাকাছি চলে আসার সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমেরিকার সেনেটর জনি আর্নস্টের প্রশ্নে এই কথা জানিয়েছেন আমেরিকার প্রাক্তন এক বায়ুসেনা কর্তা ভ্যানহার্ক। তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি রাশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরে পারমাণবিক শক্তিধর জাহাজ মোতায়েন বৃদ্ধি করেছে। সমুদ্রে টহল দিচ্ছে তারা।
০৮১৮
ভ্যানহার্ক জানিয়েছেন, আটলান্টিক মহাসাগরেও রয়েছে রাশিয়ার জাহাজ। সেখানে আগেও থাকত রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর জাহাজ। সে কারণে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে আমেরিকাও।
০৯১৮
এই প্রথম নয়, ১৯৬২ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে বেশ ভুগিয়েছিল রাশিয়ার ডুবোজাহাজ। তখন ছিল সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র।
১০১৮
সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নেয়, কিউবায় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে। আমেরিকা এবং তার জোটশরিকেরা রাশিয়ার জাহাজ ঘিরে ধরে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, কিছুতেই কিউবায় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সেনা পাঠাতে দেবে না।
১১১৮
পরবর্তী কালে কেনেডির ভাই তথা আমেরিকার তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট এফ কেনেডি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘নৌবাহিনী রিপোর্ট দিয়ে জানাল, আমেরিকার দু’টি জাহাজের মাঝে এসে দাঁড়িয়েছে রাশিয়ার একটি ডুবোজাহাজ।’’
১২১৮
রিপোর্ট পেয়ে হোয়াইট হাউস নৌবাহিনীকে অনুমোদন দিয়ে জানিয়েছিল, তারা যাতে ওই ডুবোজাহাজকে ভেসে ওঠার সঙ্কেত পাঠায়। তা না করলে রুশ ডুবোজাহাজের আশপাশে ছোট বিস্ফোরক নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়। সে সময় প্রচণ্ড উদ্বেগে ছিলেন প্রেসিডেন্ট কেনেডি। কারণ, রুশ ডুবোজাহাজে বিস্ফোরণ হলে বড় বিপদ হতে পারত। তাতে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র থাকারও সম্ভাবনা ছিল। কাছেই ছিল আমেরিকার নৌবাহিনীর ঘাঁটি। সেই ঘাঁটি নিমেষে ধ্বংস হতে পারত।
১৩১৮
পরে জানা গিয়েছিল, রাশিয়ার ওই ডুবোজাহাজে ছিল টরপেডো ক্ষেপণাস্ত্র। যদিও সে যাত্রায় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল আমেরিকা। কারণ, কিউবায় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর জেদ ত্যাগ করেছিল রাশিয়া।
১৪১৮
যদিও এ বার কিউবা আমেরিকাকে আশ্বস্ত করেছে, রাশিয়ার ডুবোজাহাজে কোনও পারমাণবিক অস্ত্র নেই।
১৫১৮
আমেরিকা এবং রাশিয়ার ডুবোজাহাজের এই লুকোচুরি খেলা নতুন নয়। অতীতেও খেলেছে তারা। রাশিয়ার ডুবোজাহাজ দীর্ঘ সময় ভেসে না উঠলেই ধাওয়া করতে শুরু করে আমেরিকার নৌবাহিনী।
১৬১৮
পিছনে কে ধাওয়া করছে জানতে অনেক সময়ই রুশ ডুবোজাহাজ দিক পরিবর্তন করে। ১২০ থেকে ১৫০ ডিগ্রি। ১৯৭০ সালের ২০ জুন সোভিয়েত দেশের কে-১০৮ ডুবোজাহাজকে ধাক্কা দেয় আমেরিকার টটোগ। বহু ক্ষণ ধরে ধাওয়া করছিল সেটি।
১৭১৮
তার এক বছর আগে, ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে বারেন্টস সাগরে রাশিয়ার সমুদ্রসীমার মধ্যে নিজেদের ডুবোজাহাজ ‘গাতো’-র রেডিয়ো ইন্টারসেপশন যন্ত্র পরখ করছিল আমেরিকা। তার সঙ্গে ধাক্কা খায় সোভিয়েত রাশিয়ার একটি ডুবোজাহাজ, যাতে ছিল কে-১৯ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।
১৮১৮
দুই ডুবোজাহাজের কর্মীরাই হতবাক হয়ে যান। যদিও আমেরিকার দাবি ছিল, সোভিয়েত ডুবোজাহাজ ইচ্ছা করেই এ সব করেছিল। তারা পাল্টা হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও শেষ পর্যন্ত আর হামলা চালায়নি। যে যার পথে নিজস্ব ঘাঁটিতে ফিরে যায়। দুই দেশের ডুবোজাহাজেরই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।