Untold story about 90's pop singer, first Indian rapper Baba Sehgal dgtl
Baba Sehgal
পর পর ভুল সিদ্ধান্তে দেউলিয়া, ভারতের এক সময়ের র্যাপ সম্রাটের দিন কাটে অন্ধকারে
গানের পাশাপাশি অভিনয় করতেও শুরু করেন বাবা। ১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মিস ৪২০’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। এ ছাড়াও তামিল এবং তেলুগু ছবিতে অভিনয় করেছেন বাবা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৩ ১৩:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
নব্বইয়ের দশকে যখন হিন্দি গানের জগতে কুমার শানু, উদিত নারায়ণরা রাজত্ব করছিলেন, সেই সময় ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলেন ভারতের প্রথম র্যাপ সঙ্গীতশিল্পী বাবা সেহগল। কেরিয়ারে হাজার চড়াই-উতরাই পার করে সাফল্যের মুখ দেখেছিলেন বাবা। কিন্তু অর্থের প্রাচুর্যই ডেকে আনে বিপদ।
০২২১
১৯৬৫ সালের ২৩ নভেম্বর উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম বাবার। তাঁর আসল নাম হরজিৎ সিংহ সেহগল। হরজিতের বাবা সরকারি কর্মচারী ছিলেন। পুত্রকে ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে পড়াশোনার প্রতি ছোট থেকেই বিশেষ আগ্রহ ছিল না বাবার।
০৩২১
পড়াশোনার চেয়ে গানবাজনার প্রতি বাবার ঝোঁক ছিল বেশি। কিশোর কুমারের গান শুনে সে সব গান তুলতেন তিনি। বাড়িতে কোনও অতিথি এলে তাঁদের সামনেও গেয়ে শোনাতেন কিশোরের গান।
০৪২১
কিন্তু পরিবারের ইচ্ছাপূরণ করতে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন বাবা। কলেজের পড়াশোনা শেষ করার পর দিল্লিতে চাকরিও পেয়ে যান তিনি।
০৫২১
পুত্র চাকরি পেয়েছে সেই আনন্দে পেনশনের টাকা দিয়ে পুত্রকে একটি গাড়ি কিনে দেন বাবা সেহগলের বাবা। কিন্তু চাকরিতে মন টেকেনি বাবার। বাড়িতে জানান, মুম্বইয়ে গিয়ে গানবাজনা নিয়ে কেরিয়ার গড়তে চান তিনি।
০৬২১
উপহারে পাওয়া গাড়ি চালিয়ে দিল্লি থেকে মুম্বই পাড়ি দেন বাবা। ইঞ্জিনিয়ারের চাকরিও ছেড়ে দেন তিনি। মুম্বইয়ে বাবার এক বন্ধু সঙ্গীত প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বন্ধুর সাহায্যে গানের দু’টি অ্যালবাম বার করেন বাবা।
০৭২১
নব্বইয়ের দশকে যখন রোম্যান্টিক ঘরানার গানের চল উঠেছিল, সেই সময় বাবা তাঁর র্যাপ গানের অ্যালবাম নিয়ে আসেন। দু’টি অ্যালবামই ব্যবসা করতে ব্যর্থ হয়। চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য। এই সব ঘটনায় মুষড়ে পড়েছিলেন তিনি।
০৮২১
মুম্বইয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে ছিলেন বাবা। সেখানে হঠাৎ টিভির পর্দায় বিজ্ঞাপনের নেপথ্যসঙ্গীত শুনে বাবার মাথায় দারুণ পরিকল্পনা আসে। নতুন একটি গান লিখে ফেলেন তিনি। তার পর বন্ধুর স্টুডিয়োতে গিয়ে সেই গান শোনান।
০৯২১
পর পর আটটি গান রেকর্ড করে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেন বাবা। প্রতিটি গানই সুপারহিট হয়। এমনকি, বাজারে এমন হারে অ্যালবাম বিক্রি শুরু হয় যে অ্যালবামের ঘাটতি পড়ে গিয়েছিল।
১০২১
বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি ভিডিয়োর মাধ্যমে তাঁর গান শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেবেন। তাই অ্যালবামের একটি গান গেয়ে মিউজ়িক ভিডিয়ো তৈরি করেন তিনি। এই ভিডিয়োতে দেখা যায় পূজা বেদীকেও। অনেকের মতে, হিন্দি গানের প্রথম মিউজ়িক ভিডিয়োর স্রষ্টা বাবা সেহগল।
১১২১
গানের পাশাপাশি অভিনয় করতেও শুরু করেন বাবা। ১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মিস ৪২০’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। এ ছাড়াও তামিল এবং তেলুগু ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি।
১২২১
এ আর রহমান, অনু মালিকের মতো সঙ্গীত নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন বাবা। হিন্দি ছবির পাশাপাশি তামিল, তেলুগু, কন্নড় ছবিতেও গান গেয়েছেন তিনি। কিন্তু সাফল্যের স্বাদ বেশি দিন পাননি বাবা।
১৩২১
অন্ধকার জগৎ থেকে মাঝেমধ্যেই প্রাণনাশের হুমকি পেতেন বাবা। প্রথম দিকে তেমন পাত্তা দেননি। ১৯৯৭ সালে মুম্বইয়ের একটি মন্দির থেকে বেরনোর সময় সঙ্গীত নির্মাতা গুলশন কুমারকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ভয় পেয়ে যান বাবা।
১৪২১
গান করে যা উপার্জন করেছিলেন, সর্বস্ব নিয়ে দেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে চলে যান বাবা। সেখানে গিয়ে নিজের উপার্জনের পুরোটাই বিনিয়োগ করে দেন তিনি। বাবা ভেবেছিলেন, বিনিয়োগ করার ফলে আরও উপার্জন করতে পারবেন তিনি। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন।
১৫২১
দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে সিঙ্গাপুর ছেড়ে ভারত চলে আসেন বাবা। একটি মিউজ়িক শোয়ে কাজ করার প্রস্তাব পান তিনি। জাভেদ জাফরির সঙ্গে সেই শোয়ে কাজও করেন বাবা।
১৬২১
বাবার ভাগ্যের চাকা ঘোরে দক্ষিণী অভিনেতা চিরঞ্জীবীর মাধ্যমে। এক দিন হায়দরাবাদ বিমানবন্দরে চিরঞ্জীবীর সঙ্গে দেখা হয় বাবার। নিজের পরিস্থিতির কথা অভিনেতাকে জানান বাবা। গায়ককে তেলুগু ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ দেন চিরঞ্জীবী। সেই গান হিটও হয়।
১৭২১
দু’বছর পর আমেরিকা চলে যান বাবা। ভেবেছিলেন সেখানে কাজ পাবেন। বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় গান গাইতেন তিনি। কিন্তু লাভের লাভ হয়নি কিছুই। আমেরিকা থেকে ফিরে আসার পর আর তেমন কাজ পাননি বাবা।
১৮২১
দক্ষিণী ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় বাবাকে। বর্তমানে হিন্দি ছবিতেও টুকটাক অভিনয় করেন তিনি। ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হেলিকপ্টার ইলা’ ছবিতে শেষ বার অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। তবে সঙ্গীতের সঙ্গে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হননি তিনি। ইউটিউবে মাঝেমধ্যে গান পোস্ট করেন বাবা।
১৯২১
কেরিয়ারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনও সুখের হয়নি বাবার। অঞ্জু নামের এক মহিলাকে বিয়ে করেন তিনি। এক পুত্রসন্তানও রয়েছে বাবার। কিন্তু পুত্রের সঙ্গে সম্পর্ক কোনও দিনই ভাল ছিল না বাবার।
২০২১
২০০৯ সালে একটি হিন্দি ধারাবাহিকের শুটিং চলাকালীন এক মহিলার সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। বাবার চেয়ে বয়সে অনেকটাই ছোট ছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বাবা। অঞ্জুর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদও হয়ে যায় বাবার। প্রেমিকার সঙ্গে একত্রবাস করতে শুরু করেন তিনি।
২১২১
বর্তমানে মুম্বইয়ে দিন কাটাচ্ছেন বাবা। এক সময় র্যাপ সঙ্গীতের জনপ্রিয় গায়ক এখন আলোর রোশনাই থেকে বহু দূরে।