ইরানের অনেকেই মনে করছেন রইসিকে পরিকল্পনামাফিক হত্যা করা হয়েছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছে ইজ়রায়েল। আরও স্পষ্ট করে বললে সে দেশের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৪ ১৩:৪৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এ বার তাঁর বিরুদ্ধে গণহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
০২১৮
শুক্রবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালত গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণ সীমান্তবর্তী শহর রাফায় হামলা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে ইজরায়েলকে। ইজরায়েল অবশ্য আন্তর্জাতিক আদালতের এই রায়কে উড়িয়ে দিয়েছে।
০৩১৮
ইজরায়েলের বন্ধু আমেরিকা অবশ্য নেতানিয়াহু সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, চলতি টালমাটাল পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বে একঘরে হয়ে যাওয়া কাজের কথা নয়। কিন্তু বন্ধুর পরামর্শ শুনতে রাজি নয় তেল আভিভ।
০৪১৮
শুক্রবার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন আন্তর্জাতিক আদালত জানিয়েছে, গণহত্যায় অভিযুক্ত ইজ়রায়েল। বিশ্বের শীর্ষ বিচারালয়টির তরফে আরও জানানো হয়েছে, গাজ়ায় মিশর লাগোয়া রাফা সীমান্তের কাছে আশ্রয় নেওয়া প্যালেস্টাইনিদের সুরক্ষায় অবিলম্বে যুদ্ধ স্থগিত রাখতে হবে ইজ়রায়েলকে।
০৫১৮
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগ শহরে অবস্থিত এই আদালতের প্রেসিডেন্ট নওয়াফ সালাম জানিয়েছেন, রাফার বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ। কিন্তু আদালতের রায় মেনে চলতে বাধ্য করার বিষয়ে কোনও পরিকাঠামো বা আন্তর্জাতিক বিধি এখনও পর্যন্ত নেই। আইনের এই ফাঁককেই আপাতত হাতিয়ার করছে ইজ়রায়েল। সে দেশের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্যদের বক্তব্য, তারা আদালতের কোনও নির্দেশকেই মানবে না।
০৬১৮
নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী তথা ইজ়রায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ় জানিয়েছেন, তারা হামাসের হাতে অপহৃত যুদ্ধবন্দিদের দেশে ফেরানোর বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। লক্ষ্যপূরণে তাঁরা যে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখবেন, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
০৭১৮
ইজ়রায়েলের অতি দক্ষিণপন্থী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতামির বেন-গেভির আবার আন্তর্জাতিক বিচারালয়কে সরাসরি ‘ইহুদিবিরোধী’ বলে তোপ দেগেছেন। এই প্রসঙ্গে ইজ়রায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়নকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “কে কী বলল, তাতে আমাদের কিছু যায়-আসে না। কেবল আমাদের ভাবনায় থাকে ইহুদিরা নিজেদের স্বার্থে কী করতে পারল।”
০৮১৮
প্রথম দিকে আমেরিকা ইজ়রায়েলকে সতর্ক করে জানিয়েছিল, রাফায় অভিযান শুরুর আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তার বিষয়টি যেন মাথায় রাখা হয়। তার পর দক্ষিণ আফ্রিকা ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জি জানায় আন্তর্জাতিক বিচারালয়কে।
০৯১৮
ইজ়রায়েলের উপর চাপ বাড়িয়ে আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে এবং স্পেন জানায়, প্যালেস্টাইনকে তারা স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত। তবে শেষ মুহূর্তে ইজ়রায়েলকে স্বস্তি দিয়েছে আমেরিকা এবং ব্রিটেন।
১০১৮
যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র বিচারালয়ের রায়ের বিরোধিতা করে সরাসরি ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাই গাজ়ায় ইজ়রায়েলি অভিযান বন্ধ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে অনেকেই।
১১১৮
অন্য দিকে, ইজ়রায়েলকে কোণঠাসা করতে প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের পাশে দাঁড়িয়েছে ইরান। পশ্চিম এশিয়ায় তাদের বন্ধু রাষ্ট্র লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেনকে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করার অভিযোগ উঠেছে তেহরানের বিরুদ্ধে।
১২১৮
ইরানের বিদেশনীতি নির্ধারণে সে দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা শেষ কথা বললেও প্রেসিডেন্টেরও আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। ইজ়রায়েল-হামাস সংঘাত শুরু হওয়া ইস্তক তেল আভিভের বিরুদ্ধে রণকৌশল সাজানো ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি গত রবিবার একটি কপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
১৩১৮
কিন্তু এই দুর্ঘটনার পর থেকেই হরেক প্রশ্ন উঠছে। ইরানের অনেকেই মনে করছেন রইসিকে পরিকল্পনামাফিক হত্যা করা হয়েছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছে ইজ়রায়েল, আরও স্পষ্ট করে বললে সে দেশের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ।
১৪১৮
উত্তর-পশ্চিম ইরানের পূর্ব আজ়ারবাইজান প্রদেশের পাহাড়ি এলাকায় ভেঙে পড়ে রইসির কপ্টার। ইরানের পড়শি দেশ আজ়ারবাইজানের সীমান্ত ঘেঁষা এলাকাতেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
১৫১৮
এই আজ়ারবাইজান ইরানের পড়শি রাষ্ট্র হলেও তেহরানের প্রভাব সে দেশে নেই। বরং একদা সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ এই দেশ গোড়া থেকেই পশ্চিমি দুনিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে এসেছে।
১৬১৮
তা ছাড়া ইজ়রায়েলের সঙ্গেও আজ়ারবাইজানের খুব ভাল সম্পর্ক। এক সময় উত্তর ইরানে যখন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়েছিল, সেই সময় সেখানে মোসাদ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল বলে মনে করেন ইরানের প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদেরই একাংশ।
১৭১৮
যাঁরা রইসির কপ্টার ভেঙে পড়ার ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলতে নারাজ, তাঁদের প্রশ্ন, রইসির কপ্টারের আগে-পরে অন্য কপ্টার থাকলেও, সেগুলি কেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ল না? ইরান সরকারি ভাবে অবশ্য এই দুর্ঘটনা তত্ত্বেই সিলমোহর দিয়েছে।
১৮১৮
তেহরানের বক্তব্য, প্রবল বৃষ্টি আর ঘন কুয়াশার কারণেই ভেঙে পড়ে রইসির কপ্টার। তা ছাড়া যাঁরা এর মধ্যে ষড়যন্ত্র দেখছেন না, তাঁদের বক্তব্য, মোজেস সরাসরি কোনও দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে অতীতে হত্যার চেষ্টা করেনি। তা ছাড়া রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করার অর্থ সরাসরি সেই দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। গাজ়ার পাশাপাশি ইজ়রায়েল এখনই যুদ্ধের পরিধি বৃদ্ধি করতে চাইবে কেন, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।