United States has officially destroyed its stockpile of chemical weapons, why did it take so long for the US to eliminate their weapons dgtl
Chemical Weapon
চুক্তির তিন দশক পর ধ্বংস রাসায়নিক অস্ত্রভান্ডার, বিশ্বকে ‘নিরাপদ’ করতে কেন দেরি করল আমেরিকা?
সংবাদমাধ্যমের দাবি, বিশ্বের বহু দেশে এখনও এ ধরনের বিষাক্ত অস্ত্রভান্ডার মজুত রয়েছে। সিরিয়ায় যে গৃহযুদ্ধ চলছে, তাতে নার্ভ এজেন্টের মতো রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
ওয়াশিংটনশেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩ ০৮:৫০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
আমেরিকার যাবতীয় রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। শুক্রবার এ ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রেসি়ডেন্ট জো বাইডেন। সরকারি ভাবে বাইডেনের ঘোষণা সত্ত্বেও নিশ্চিত হতে পারছে না বিশ্বের একাংশ। তাদের সন্দিহান প্রশ্ন, বিশ্বকে রাসায়নিক অস্ত্র থেকে মুক্ত করতে কেন এত দেরি করল আমেরিকা? আদৌ কি বিশ্বকে বিষমুক্ত করা সম্ভব হল?
০২১৯
নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল আমেরিকা। চুক্তিতে রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদন, মজুদ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি মজুত রাখা অস্ত্রভান্ডার ধ্বংসেরও উল্লেখ ছিল।
০৩১৯
ওই সম্মেলনের তত্ত্বাবধায়ক ছিল রাসায়নিক অস্ত্রবিরোধী আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘অর্গানাইজ়েশন ফর দ্য প্রহিবিশন অফ কেমিক্যাল ওয়েপনস’ (ওপিসিডব্লিউ)। আমেরিকা-সহ ১৯৩টি দেশ ওই আন্তর্জাতিক চুক্তিতে সম্মত হয়।
০৪১৯
সেই চুক্তির তিন দশক কেটে যাওয়ার পর অবশেষে বাইডেন প্রশাসন জানিয়েছে, আমেরিকার শেষ রাসায়নিক অস্ত্রভান্ডারটি নিরাপদে ধ্বংস করা হয়েছে। শুক্রবার বাইডেন বলেন, ‘‘এই পদক্ষেপের ফলে রাসায়নিক অস্ত্রের ভয়াবহতা থেকে বিশ্বকে মুক্ত করার পথে একধাপ অগ্রসর হলাম আমরা।’’
০৫১৯
রাসায়নিক অস্ত্র সংক্রান্ত ওই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। এর দু’বছর পর তা কার্যকর হয়। শুক্রবার কেন্টাকিতে ‘ব্লুগ্রাস কেমিক্যাল এজেন্ট-ডেসট্রাকশন পাইলট প্ল্যান্ট’-এ আমেরিকার শেষ রাসায়নিক অস্ত্রটি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে বলে বাইডেন প্রশাসনের দাবি।
০৬১৯
একটি রকেট থেকে সারিন নামে অতি বিষাক্ত তরল রাসায়নিক নিষ্ক্রিয় করার পর সেটিকে ধ্বংস করা হয়েছে। রাসায়নিক অস্ত্র হিসাবে বিবর্ণ, গন্ধহীন ওই তরল ব্যবহৃত হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের দাবি।
০৭১৯
আমেরিকার ‘শেষতম’ রাসায়নিক অস্ত্রভান্ডার ধ্বংসের প্রক্রিয়া যাতে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়, তা দেখার দায়িত্ব ছিল ‘ডিফেন্স ফর থ্রেট রিডাকশন অ্যান্ড আর্মস কন্ট্রোল’-এর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি কিংস্টন রাইফের উপর। তিনি বলেন, ‘‘এর অর্থ হল, বিশ্বে ঘোষিত ভাবে যে সমস্ত রাসায়নিক অস্ত্র রয়েছে, তার ১০০ শতাংশই ধ্বংস করা হয়েছে।’’
০৮১৯
কিন্তু কিংস্টনের কথায় ভরসা করা যায় কি? সংবাদমাধ্যমের দাবি, বিশ্বের বহু দেশে এখনও এ ধরনের বিষাক্ত অস্ত্রভান্ডার মজুত রয়েছে। সিরিয়ায় যে গৃহযুদ্ধ চলছে, তাতে ক্লোরিন এবং নার্ভ এজেন্টের মতো রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
০৯১৯
২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং উনের সৎভাই কিম জং-নামের হত্যাকাণ্ডে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করা হয়েছিল বলে দাবি। অন্য দিকে, রাজনৈতিক খুনের প্রচেষ্টায় এ ধরনের অস্ত্র কাজে লাগিয়েছে বলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে।
১০১৯
সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই এ ধরনের অস্ত্রের ভয়াবহ পরিণতির সাক্ষী থেকেছে বিশ্ব। ওই বিশ্বযুদ্ধে ১৩ লক্ষের বেশি সেনার উপর রাসায়নিক অস্ত্রের প্রয়োগ করা হয়েছিল বলে দাবি। যার প্রত্যক্ষ প্রভাবে এক লক্ষ সেনার প্রাণ গিয়েছিল।
১১১৯
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দুনিয়া জুড়ে আরও এক বার এ ধরনের অস্ত্র মজুত রাখার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। সে বার অবশ্য যুদ্ধক্ষেত্রে রাসায়নিক অস্ত্রের প্রয়োগ করা হয়নি। তবে ইহুদি নিধনের নাৎসি শিবিরগুলিতে এর বহুল প্রয়োগের উদাহরণ রয়েছে।
১২১৯
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে আমেরিকা এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘ঠান্ডা যুদ্ধের’ সময়ও রাসায়নিক অস্ত্র মজুতের অভিযোগ উঠেছে দু’দেশেই।
১৩১৯
ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড কপলো-র মতে, ১৯৯০ সালে আমেরিকার ঘরে ৩০,০০০ টনের বেশি রাসায়নিক অস্ত্র মজুত ছিল। অন্য দিকে, রাশিয়ার অস্ত্রভান্ডারে সেই সংখ্যাটি ছিল অন্তত ৪০,০০০ টন।
১৪১৯
নব্বইয়ের দশকের শেষে দেশে মজুত রাসায়নিক অস্ত্রভান্ডার ধ্বংসের অনুমোদন দেয় আমেরিকার সেনেট। সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর ১৯৯৭ সালে সে দেশের তৎকালীন প্রেসি়ডেন্ট বিল ক্লিন্টন বলেছিলেন, ‘‘গোটা বিশ্বের উচিত আমাদের পথ অনুসরণ করা।’’
১৫১৯
তবে বাস্তবে উল্টো পথে হেঁটেছে আমেরিকা প্রশাসন। বিশ্ব জুড়ে নানা সময়েই বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করা হলেও দেখা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরের তিন দশক পর তা কার্যকর করেছে আমেরিকা।
১৬১৯
এ হেন পদক্ষেপে কেন এত দেরি করল আমেরিকা? কপলো-র মতে, রাসায়নিক অস্ত্রভান্ডার ধ্বংসের কাজ এত সহজ নয়। তিনি জানিয়েছেন, এ ধরনের অত্যন্ত বিষাক্ত রাসায়নিক বিস্ফোরক ঠেসে পুরে দেওয়া কামান, রকেট অথবা বোমায়। সেগুলিকে বার করার প্রক্রিয়াটি সরল নয়।
১৭১৯
রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস করার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। সেগুলি ধ্বংস করার জন্য এমন স্থান বেছে নিতে হবে, যাতে আশপাশের অঞ্চলের পরিবেশে এর প্রভাব না পড়ে। সে জন্য বিশেষ প্রযুক্তিরও প্রয়োজন। উদাহরণ হিসাবে এমন বহু রাসায়নিক অস্ত্র রয়েছে, যেগুলি ধ্বংস করার জন্য আগে বিশেষ রাসায়নিকের সাহায্যে নিষ্ক্রিয় করা প্রয়োজন।
১৮১৯
প্রযুক্তিগত দিক ছাড়াও প্রশাসনিক নেতৃত্ব বদলেও এ ধরনের অস্ত্র ধ্বংস করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। কপলো বলেন, ‘‘নেতৃত্বে বার বার বদলের জেরে রাসায়নিক অস্ত্রভান্ডার ধ্বংসের কাজ যে গতিতে করা উচিত ছিল, তা হয়নি।’’
১৯১৯
এই প্রক্রিয়ার রূপায়ণে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন, তা-ও যথাসময়ে পাওয়া যায়নি বলে দাবি কপলো-র। তাঁর দাবি, এর ফলে বছরের পর বছর রাসায়নিক অস্ত্রভান্ডার ধ্বংসের প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত করতে পারেনি আমেরিকা।