Advertisement
২১ অগস্ট ২০২৫
Ukraine Denuclearization

অন্যের কথায় নেচে ধ্বংস যাবতীয় পরমাণু অস্ত্র! ‘ভাল’ সাজতে গিয়েই কি বিপদ ডেকে আনল ইউক্রেন?

সোভিয়েত ছেড়ে বেরিয়ে এসে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’-পরবর্তী সময়ে যাবতীয় পরমাণু অস্ত্র রাতারাতি নষ্ট করে ফেলে ইউক্রেন। সেই সিদ্ধান্তের খেসারত আজও দিতে হচ্ছে কিভকে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৫ ০৭:৩৭
Share: Save:
০১ ২১
Ukraine Denuclearization

বিশ্বশান্তির কথা মাথায় রেখে আণবিক অস্ত্র ত্যাগ। রাতারাতি কয়েক হাজার পরমাণু হাতিয়ার নষ্ট করে ফেলা। ‘গান্ধীবাদী’ নীতির জন্য ভবিষ্যতে যে পস্তাতে হবে, তা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেনি পূর্ব ইউরোপের ফুলের মতো সাজানো দেশ ইউক্রেন। গত তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে যার বুক।

০২ ২১
Ukraine Denuclearization

‘স্নায়ুযুদ্ধ’-পরবর্তী সময়ে পরমাণু অস্ত্র ত্যাগের মতো ‘ঐতিহাসিক ভুল’ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইউক্রেন। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যাবতীয় আণবিক হাতিয়ার নষ্ট করে ফলে কিভ। প্রায় সাড়ে তিন দশক পর সেই পদক্ষেপেরই চরম মূল্য দিতে হচ্ছে ইউরোপের ‘রুটির ঝুড়ি’কে। দিতে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষের রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে!

০৩ ২১
Ukraine Denuclearization

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে সোভিয়েত রাশিয়ার অন্তর্গত ছিল ইউক্রেন। ওই সময়ে পূর্ব ইউরোপে প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত ছিল মস্কো। পাশাপাশি, গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘ঠান্ডা লড়াই’-এ জড়িয়ে পড়ে ক্রেমলিন। ফলে পশ্চিম ইউরোপের দিক থেকে আক্রমণের আশঙ্কা ছিল মস্কোর।

০৪ ২১
Ukraine Denuclearization

এই হামলার কথা মাথায় রেখেই গোটা ‘ঠান্ডা লড়াই’ পর্বে ইউক্রেনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণে পরমাণু হাতিয়ার মজুত করে সোভিয়েত ফৌজ। ১৯৯১ সালে সোভিয়েতের পতন হলে স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে ইউক্রেন। সেখান থেকে বাহিনী সরিয়ে নেয় মস্কো। ফলে অতি সহজেই রুশ সেনার ফেলে যাওয়া আণবিক অস্ত্র হস্তগত করেন কিভের জেনারেলরা।

০৫ ২১
Ukraine Denuclearization

সোভিয়েত পতনে ‘পড়ে পাওয়া ১৪ আনার’ মতো ইউক্রেনীয় সেনার হাতে আসা পরমাণু হাতিয়ারের সংখ্যা নেহাত কম ছিল না। গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আণবিক অস্ত্রের ভান্ডার ছিল কিভের কাছে। তাদের অস্ত্রাগারে তখন শোভা পাচ্ছিল প্রায় পাঁচ হাজার আণবিক হাতিয়ার। এ ছাড়াও ছিল থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহনে সক্ষম অন্তত ১০টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র।

০৬ ২১
Ukraine Denuclearization

‘স্নায়ুযুদ্ধ’-এর সময়ে ইউক্রেন জুড়ে একাধিক ভূগর্ভস্থ গোপন অস্ত্রাগার তৈরি করে সোভিয়েত সেনা। সেখানেই মজুত ছিল এই সমস্ত হাতিয়ার, যা স্বেচ্ছায় ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয় কিভ। বিশ্লেষকদের একাংশের অবশ্য দাবি, এটা করা ছাড়া ইউক্রেনীয় ফৌজের কাছে দ্বিতীয় কোনও রাস্তা ছিল না।

০৭ ২১
Ukraine Denuclearization

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থা নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোভিয়েতের বিলুপ্তির পর অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ইউক্রেন। দেশটির আর্থিক অবস্থা যে দুর্দান্ত ছিল, এমনটা নয়। সোভিয়েত সেনার রেখে যাওয়া পরমাণু অস্ত্রভান্ডারের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ছিল না তাদের হাতে।

০৮ ২১
Ukraine Denuclearization

পরমাণু হাতিয়ার উৎক্ষেপণের জন্য বিশেষ কোড এবং ‘সেন্ট্রাল কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল’ ব্যবস্থার প্রয়োজন। সোভিয়েত ভেঙে গেলেও এর নিয়ন্ত্রণ ছিল রাশিয়ার হাতে। ফলে আণবিক অস্ত্রের ভৌত অধিকার পেলেও সেগুলি ব্যবহারের ক্ষমতা ছিল না ইউক্রেনের। দ্বিতীয়ত, এগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজন ছিল বিপুল অর্থের।

০৯ ২১
Ukraine Denuclearization

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ইউক্রেন ইচ্ছা করলে পরমাণু অস্ত্রগুলির নতুন কোড এবং ‘সেন্ট্রাল কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম’ তৈরি করতে পারত। কিন্তু সেই রাস্তায় হাঁটেননি কিভের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা ফৌজি জেনারেলরা। এর নেপথ্যে মূলত দু’টি কারণের কথা বলা হয়েছে।

১০ ২১
Ukraine Denuclearization

প্রথমত, সোভিয়েত ভাঙলেও পূর্ব ইউরোপের দেশটির উপর ছিল অতিমাত্রায় রুশ প্রভাব। নতুন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে সেই ‘বন্ধন’ কাটিয়ে উঠতে পারেনি ইউক্রেন। দ্বিতীয়ত, আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের শক্তিজোট নেটোকে আগ্রাসী বলেই মনে করেছিলেন সেখানকার রাজনৈতিক নেতারা।

১১ ২১
Ukraine Denuclearization

কিভ মনে করেছিল, পরমাণু অস্ত্র ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে এক ঢিলে তিন পাখি মারা যাবে। প্রথমত, এই হাতিয়ার রক্ষণাবেক্ষণের বিপুল খরচ বহন করতে হবে না। দ্বিতীয়ত, মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক মজবুত করা সম্ভব হয়। আর সর্বশেষ, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপকেও কাছে টেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে থাকবে না কোনও বাধা।

১২ ২১
Ukraine Denuclearization

এ ছাড়া নতুন দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপীয় নেটোভুক্ত রাষ্ট্রগুলির স্বীকৃতির প্রয়োজন ছিল ইউক্রেনের। এর জন্য পরমাণু হাতিয়ার ত্যাগের শর্ত দিয়ে কিভের উপর কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করে ওয়াশিংটন। তখনই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে কিভ।

১৩ ২১
Ukraine Denuclearization

১৯৯১ সালে ‘নান-লুগার সমবায় হুমকি হ্রাস’ (নান-লুগার কোঅপারেটিভ থ্রেট রিডাকশান বা সিটিআর) কর্মসূচিতে যোগ দেয় ইউক্রেন। এর মাধ্যমে গণবিধ্বংসী যাবতীয় অস্ত্র নষ্টের প্রক্রিয়া শুরু করে দেয় কিভ। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের থেকে বিপুল অর্থ পেয়েছিল ইউক্রেন।

১৪ ২১
Ukraine Denuclearization

এর তিন বছরের মাথায় ১৯৯৪ সালে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে একটি স্মারকলিপি দিয়ে ইউক্রেনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে রাশিয়া, আমেরিকা এবং ব্রিটেন। এর পর গণবিধ্বংসী যাবতীয় হাতিয়ার পুরোপুরি ধ্বংস করতে আর কালবিলম্ব করেননি কিভের রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

১৫ ২১
Ukraine Denuclearization

বুদাপেস্ট স্মারকে সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি পায় ইউক্রেন। ফলে নিশ্চিন্ত মনে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া সেরে ফেলে কিভ। অধিকাংশ আণবিক হাতিয়ারই মস্কোর হাতে তুলে দেয় তারা। শেষ অস্ত্রটি রাশিয়ায় পাঠানো হয় ১৯৯৬ সালের মে মাসে।

১৬ ২১
Ukraine Denuclearization

২১ শতকের প্রথম দশকেই উত্থান হয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। তত দিনে ইউক্রেনের উপর পশ্চিম ইউরোপের প্রভাব অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টিকে একেবারেই ভাল চোখে দেখেননি পুতিন। শুধু তা-ই নয়, বুদাপেস্ট স্মারকের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন তিনি।

১৭ ২১
Ukraine Denuclearization

২০১৪ সালে প্রথম বার ইউক্রেনের উপর আগ্রাসী মনোভাব দেখান পুতিন। ওই বছর কিভের থেকে ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নেন তিনি। মস্কোর এই সেনা অভিযানের সময়ে কিন্তু হাত খুলে ইউক্রেনকে সাহায্য করেনি পশ্চিম ইউরোপ বা আমেরিকা। ফলে বুদাপেস্ট স্মারকের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়।

১৮ ২১
Ukraine Denuclearization

পরবর্তী সময়ে পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস এলাকায় (পড়ুন ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) রুশ প্রভাব বৃদ্ধি করতে বিচ্ছিন্নবাদীদের পর্দার আড়ালে থেকে মদত দেওয়া শুরু করে মস্কো। এতে নিরাপত্তা নিয়ে কিভের উপর চাপ বৃদ্ধি পায়। বুদাপেস্ট স্মারক যে ‘মূল্যহীন’ তা একরকম স্পষ্ট হতে থাকে পূর্ব ইউরোপের দেশটির কাছে।

১৯ ২১
Ukraine Denuclearization

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সেনা অভিযান’ (স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন) চালাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। ফলে পূর্ণ মাত্রায় মস্কোর সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে কিভ। আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের থেকে আর্থিক এবং সামরিক সাহায্য পেলেও এতে ইউরোপের ‘রুটির ঝুড়ি’ যে মারাত্মক ভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।

২০ ২১
Ukraine Denuclearization

ইউক্রেনের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের সিদ্ধান্তকে ‘নিজের পায়ে কুড়ুল’ মারার শামিল বলে উল্লেখ করেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জন জে মিয়ারশাইমার। তিনি বলেন, ‘‘সোভিয়েত ভেঙে গেলেও রাশিয়া তার পুরনো জায়গা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবেই। আর তখনই আণবিক অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে ইউক্রেন।’’

২১ ২১
Ukraine Denuclearization

প্রায় সাড়ে তিন দশক পর মিয়ারশাইমারের সেই ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাওয়ায় হতবাক বিশ্ব। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, আজকের দিনে কিভের কাছে পরমাণু অস্ত্র থাকলে, সরাসরি যুদ্ধে নামার সাহস পেতেন না পুতিন। অন্য দিকে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি ভাবতে হত না ইউক্রেনকে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy