স্কুল-কলেজের কাগুজে ডিগ্রি ছাড়াই গাছগাছালির খুঁটিনাটি নিজের হাতের তালুর মতো চেনেন ৭২ বছরের পরিবেশবিদ তুলসী গৌড়া।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২১ ১২:৪৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১২
স্কুল-কলেজের ধারেকাছে যাওয়ার সুযোগ পাননি। তবে প্রথাগত ভাবে পড়াশোনা না করলেও তাঁর জ্ঞানের পরিধির কাছে বহু পণ্ডিতই মাথা নত করেছেন। স্কুল-কলেজের কাগুজে ডিগ্রি ছাড়াই গাছগাছালির খুঁটিনাটি নিজের হাতের তালুর মতো চেনেন ৭২ বছরের পরিবেশবিদ তুলসী গৌড়া।
০২১২
সোমবার তুলসী গৌড়ার হাতে পদ্মশ্রী সম্মান তুলে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। সারা জীবন ধরে পরিবেশ রক্ষায় তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসাবে তুলসীকে এই সম্মান— জানিয়েছে সরকারি নথি।
০৩১২
সরকারি স্বীকৃতির বহু আগে থেকেই অবশ্য তাঁর কাজ দিয়েই নজর কেড়েছেন কর্নাটকের এই পরিবেশবিদ। অনেকেই কাছেই তিনি ‘জীবন্ত অভিধান’। গাছগাছালির নানা প্রজাতির সম্পর্কে তুলসীর মতো ওয়াকিবহাল মানুষ নাকি কমই দেখা যায়।
০৪১২
সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনের অনুষ্ঠানেও নিজের সিগ্ধ আলো ছড়িয়েছেন তুলসী। তাতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ উপস্থিত বিশিষ্টদের ভিড়ে সহজেই নজর কেড়ে নিয়েছেন এই বৃদ্ধা।
০৫১২
পরনে চিরাচরিত পোশাক। হাতে-গলায় একরাশ উলোঝুলো গয়না। খালি পা। তুলসীকে দেখতে নজর ঘোরাচ্ছিলেন অনেকেই। সাবলীল ভঙ্গিতে পুরস্কার গ্রহণের আগে খানিকটা থেমে প্রধানমন্ত্রীর নমস্কারের প্রত্যভিবাদনও দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই সে ছবি ভাইরাল।
০৬১২
পদ্ম-সম্মান গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর তুলসীকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই শুরু হওয়ার হওয়ার বহু আগে থেকেই প্রায় নিঃশব্দে পরিবেশ রক্ষার কাজ করে গিয়েছেন তুলসী। সারা জীবন ধরে ৩০ হাজারেরও বেশি গাছের চারা পুঁতেছেন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় উৎসাহিত করেছেন অগণিত জনকে।
০৭১২
কিন্তু শুরুর সময়ে এত সহজ ছিল না তুলসীর কাজ। হতদরিদ্র পরিবারের তুলসী বাবাকে হারিয়েছিলেন মাত্র দু’বছর বয়সে। কম বয়সেই মায়ের হাত ধরে স্থানীয় একটি নার্সারিতে কাজে লেগে প়ড়েছিলেন। প্রকৃতির মাঝে থাকতে থাকতেই গাছগাছালির প্রতি টান জন্মেছিল। তা রক্ষায়ও মন দিয়েছিলেন ছোট থেকেই।
০৮১২
কর্নাটকের হলক্কি জনজাতির কন্যা তুলসী পরিবেশ নিয়ে ভাবনা-চিন্তার শুরু হয়েছিল কিশোরীবেলায়। কিশোরী অবস্থাতেই বিয়ে, ঘরসংসার পাতা। তবে সংসার সামলেও পরিবেশ রক্ষার কাজে লেগে থেকেছেন।
০৯১২
মাত্র ১২ বছর বয়স থেকে গাছ লাগানো শুরু তুলসীর। তা থামেনি আজও। স্কুল-কলেজের চৌকাঠে পার না করলেও পরিবেশ নিয়ে তাঁর উৎসাহকে ‘স্বীকৃতি’ দিয়েছে বন দফতর।
১০১২
কর্নাটকের বন দফতরে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে তুলসীর কাজ জুটে যায়। অস্থায়ী স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজের সময় তাঁর কর্তব্যনিষ্ঠা প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছিল। পরবর্তী কালে কাজের প্রতি সেই টানই তাঁকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়।
১১১২
তুলসীর কর্মনিষ্ঠা দেখে তাঁকে স্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজের সুযোগ দেয় বন দফতর। ১৫ বছর ধরে সেখানে কাজ করেছেন তিনি।
১২১২
৭০ বছর বয়স পর্যন্ত কর্নাটকের বন দফতরে কাজ করেছেন তুলসী। তবে দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরের পর আজও প্রকৃতির যত্নে বিরামহীন ভাবে কাজ করে চলেছেন তিনি!