এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
আইপিএলের মতো টুর্নামেন্টে নজরকাড়া পারফরম্যান্সে জাতীয় দলের দরজা খুলে যেতে পারে। সেই লক্ষ্যে আইপিএলকে পাখির চোখ করেন বহু ক্রিকেটার। তবে এই মুহূর্তে হায়দরাবাদের এক ব্যাটারের লক্ষ্য অন্য। জাতীয় দলের দরজায় টোকা মারার আগে আইপিএলের রোজগার থেকে মা-বাবার মাথার উপরে একটি পাকা ছাদের বন্দোবস্ত করতে চান তিনি।
০২১৪
আইপিএলে এখনও পর্যন্ত তিনি খেলেছেন সাকুল্যে দু’টি ম্যাচ। তবে এর মধ্যেই ক্রিকেট-জহুরিদের চোখে পড়ে গিয়েছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ব্যাটার নাম্বুরি ঠাকুর তিলক বর্মা। সংক্ষেপে যিনি তিলক বর্মা নামেই বেশি পরিচিত।
০৩১৪
আইপিএলে অভিষেকেই নজর কেড়েছিলেন তিলক। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ১৫ বলে তাঁর ব্যাট থেকে বেরিয়েছে ২২ রান। পরিসংখ্যানের নিরিখে তা হয়ত খুব বেশি নয়। ৪ উইকেটে সে ম্যাচ হেরে গিয়েছিল রোহিত শর্মার মুম্বই। তবে চোখে পড়েছিলেন এই হায়দারবাদী।
০৪১৪
দ্বিতীয় ম্যাচে আবারও চমক তিলকের! বিপক্ষের বাঘা বাঘা বোলারদের বিরুদ্ধে দেদার ব্যাট হাঁকিয়ে দলকে প্রায় জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে গিয়েছিলেন। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ৩৩ বলে ৬১ রান হাঁকিয়েছিলেন তিলক। তাতে ছিল ৫টি ছয় এবং ৩টি চার।
০৫১৪
আইপিএলের মতো টুর্নামেন্ট থেকেই জাতীয় নির্বাচকদের চোখে পড়েছিলেন হার্দিক পাণ্ড্য বা যশপ্রীত বুমরাদের মতো ক্রিকেটার। তিলকের উত্থানের কাহিনিও সে পথে এগোতে পারে বলে মনে করছেন ক্রিকেট-পণ্ডিতরা।
০৬১৪
রাজস্থানের বিরুদ্ধে ১৯ বছরের তিলকের ইনিংস দেখে মুগ্ধ বহু ক্রিকেটবোদ্ধা। ব্যাট ঘুরিয়ে বলকে বাউন্ডারি পাঠানোর সময় কোনও দ্বিধা নেই তাঁর। বেশ সাফসুতরো মারেন তিলক। এবং বাইশ গজের সব দিকেই তাঁর ব্যাট ঘোরে।
০৭১৪
দ্বিতীয় ম্যাচে আউট হওয়ার আগে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো ঝানু স্পিনারকে থার্ড ম্যানের উপর দিয়ে রিভার্স স্যুইপে তিলকের ছয় মারাটা এখনও অনেকের স্পষ্ট মনে রয়েছে। যদিও অশ্বিনের পরের বলে গতিতে ঠকে গিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয়েছিল তিলককে।
০৮১৪
দ্বিতীয় ম্যাচের শেষে সংবাদমাধ্যমের কাছে অশ্বিনের প্রশংসা করার পাশাপাশি নিজের লক্ষ্য নিয়েও মুখ খুলেছিলেন তিলক। তিলক বলেছিলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত আমাদের নিজেদের বাড়ি নেই। ফলে এখন আমার একমাত্র লক্ষ্য হল আইপিএল থেকে রোজগারের টাকায় মা-বাবাকে জন্য একটা বাড়ি কেনার।’’
০৯১৪
তিলকের বাবা নাম্বুরি নাগারাজু পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। সামান্য রোজগারের টাকায় সংসার চালানোই দায়। এক সময় তো ছেলের ক্রিকেট কোচিংয়ের অর্থ জোগাড় করাই কষ্টকর হয়ে উঠেছিল নাম্বুরির। সে সময় তিলকের উদ্ধারকর্তা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কোচ সালাম বায়েশ। তিলকের খরচাপাতি-সহ প্রশিক্ষণও দেন তিনি।
১০১৪
আইপিএলের নিলামে তিলকের মূল্য ছিল ২০ লক্ষ টাকা। তবে তাঁকে ১.৭ কোটি টাকায় কিনে নেন মুম্বই কর্তারা। আইপিএলের পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন দল এক জন আনকোরা ব্যাটারের জন্য এত অর্থ কেন ঢেলেছেন? সংবাদমাধ্যমে মুম্বইয়ের কোচ মাহেলা জয়বর্ধনে এবং ক্রিকেট ডিরেক্টর জাহির খান জানিয়েছেন, তিলকের উপর বছর দুয়েক নজর ছিল তাঁদের।
১১১৪
বেস প্রাইস থেকে সাড়ে ৮ গুণ বেশি দরে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তাঁকে ঘরে তুলে নিয়েছিল। এ যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিলক। তিনি বলেন, ‘‘আইপিএলের নিলাম চলাকালীন কোচকে ভিডিয়ো কল করেছিলাম। নিলামে আমার দর উপরের দিকে চড়ার সময় তিনি কাঁদতে থাকেন। মুম্বইয়ে সুযোগ পাওয়ার পর মা-বাবাকেও ফোন করেছিলাম। ওঁরা কাঁদতে শুরু করে দেন। মায়ের তো কথা বলতেই অসুবিধা হচ্ছিল।’’
১২১৪
ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্স দেখেই তিলককে দলে নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন জাহিররা। সদ্যসমাপ্ত অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপেও খেলেছেন তিলক। তবে সে ভাবে চোখে পড়েননি। ছ’টি ম্যাচে মাত্র ২৮.৬৬ গড়ে ৮৬ রান করেছিলেন।
১৩১৪
২০১৮ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক করেন তিলক। তেমন বলার মতো পারফরম্যান্স ছিল না। তবে ২০২১-’২২ মরসুমে বিজয় হাজারে ট্রফিতে পাঁচ ম্যাচে ১৮০ রান করার পাশাপাশি ৪ উইকেট তুলে নিয়ে যেন নিজের প্রতিভার প্রমাণ দেন। মিডল অর্ডারে এই বাঁ-হাতি যে ডান হাত ঘুরিয়ে অফস্পিনটাও করতে পারেন, তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিলক।
১৪১৪
আইপিএলের রোজগার থেকে মা-বাবার জন্য বাড়ি কেনা ছাড়া আরও একটি লক্ষ্যপূরণ করতে চান তিলক। তাঁর কথায়, ‘‘কেরিয়ারের বাকি দিনগুলোতে খোলা মনে খেলার সুযোগ করে দেবে আইপিএলের রোজগারপাতি।’’