Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Gautam Adani

হু হু করে বেড়ে চলেছে শেয়ারের দাম! যে তিন জাদুকাঠিতে ভর করে ঘুরে দাঁড়ালেন আদানি

আদানির আগে ধীরুভাই অম্বানীকে কলকাতা শেয়ার বাজারের দালালদের বিদ্রোহের মুখে পড়তে হয়েছিল। তার ফলও ঠিক এমনই হয়েছিল, যা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টে প্রকাশ্যে আসার পর আদানিদের হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:১৫
Share: Save:
০১ ২৪
Amitabh Bachchan In Deewar

বুধবার সকাল। ফেসবুক, টুইটারের দেওয়ালে ভেসে উঠল দিওয়ারের সেই দৃশ্য। নীল রঙের শার্টে চেয়ারের উপর পা তুলে মেজাজে বসা অমিতাভ বচ্চন। মুখে সিগারেট। আর ঠোঁটে সংলাপ— ‘‘তুম লোগ মুঝে ওয়াহা ঢুন্ড রহে হো অউর ম্যায় ইঁয়াহা তুমহারা ইন্তেজ়ার কর রাহা হুঁ।’’ বুধবার ফেসবুকে ভেসে ওঠা ছবিতে সেই সংলাপ কিছুটা বদলে দেওয়া হয়েছে। ‘আদানি এন্টারপ্রাইজ’ লেখা জামা পরে অমিতাভ সেই ছবিতে বলছেন, ‘‘তুম লোগ অভি মুঝে লস মে সমঝ রহে হো কেয়া?’’ অর্থাৎ এখনও কি ভাবছ যে আমি ক্ষতিতেই চলছি?

০২ ২৪
Gautam Adani

নাহ। আর বোধ হয় তেমন ভাবার উপায় নেই। অন্তত আদানি শিল্পগোষ্ঠীর মাথা গৌতম আদানি সেই সুযোগ দেননি। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার হিসাব বলছে, শেয়ার বাজারের সূচকের মাথায় এখন জ্বলজ্বল করছে একটি নাম— আদানি এন্টারপ্রাইজ। যাদের শেয়ার দর বুধবার বাজার খোলার পর ১২ শতাংশ বেড়েছে। আদানিদের শেয়ারের দামে এই বড় বৃদ্ধি কিন্তু পর পর দু’দিন হল।

০৩ ২৪
the value of adani shares that started falling is up again

গত কয়েক দিনে যে শেয়ারের দাম সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে কমতে কমতে ১১০০ টাকায় নেমে এসেছিল, বুধবার সেই শেয়ারেরই দাম টপকে গেল ২০০০ টাকা। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক মাধ্যমে ট্রেন্ডিং লিস্টে ফিরে এলেন আদানি। দেখা গেল টুইটারের ট্রেন্ডিং তালিকার শীর্ষে রয়েছে চারটি শব্দ— ‘আদানি ব্যাক অন ট্র্যাক’। অর্থাৎ আদানির ‘বাজারওয়াপসি’ হল। বা আরও স্পষ্ট করে বললে বাজারে স্বমহিমায় ফেরার ইঙ্গিত দিল আদানি গোষ্ঠী।

০৪ ২৪
Hindenburg report on Adani claims loss for adani

কিন্তু কী ভাবে? হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই যে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর ১.৪৪ লক্ষ কোটি টাকা উধাও হয়ে গিয়েছিল শেয়ার বাজার থেকে, কোন ম্যাজিকে তাদের এমন উত্তরণ! তা-ও আবার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার ১৫ দিনের মাথায়?

০৫ ২৪
doubt related to Adani industry share value

বাজারের বিনিয়োগকারীদের একাংশ এখনও অবশ্য ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে যে এই উত্তরণ কি স্থায়ী হবে? না কি তা ক্ষণিকের চমক? এত তাড়াতাড়ি আছড়ে পড়ে এ ভাবে আবার উঠে দাঁড়ানো কি সত্যিই সম্ভব! কোনও সাহায্য ছাড়া তা কী করে হয়? এক কথায় এর জবাব দিতে হলে বলতে হয় আদানি সেই ‘সাহায্য’ জোটাতে পেরেছে। এবং একই সঙ্গে উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ নিজেও তৈরি করে নিয়েছে।

০৬ ২৪
dhirubhai ambani

যদিও শেয়ার বাজারে এমন আচমকা পতন এবং ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনা এই প্রথম নয়। আদানির আগে এই একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল অম্বানীদেরও। অম্বানী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ধীরুভাই অম্বানীকে কলকাতা শেয়ার বাজারের দালালদের বিদ্রোহের মুখে পড়তে হয়েছিল। তার ফলও ঠিক এমনই হয়েছিল, যা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টে প্রকাশ্যে আসার পর আদানিদের হয়েছে।

০৭ ২৪
dhirubhai Ambani

শোনা যায়, ওই ধাক্কা দ্রুত সামলে উঠেছিলেন ধীরুভাই। কলকাতা শেয়ার বাজারের দালালরা তাঁর খুব বেশি ক্ষতি করতে পারেনি। বস্তুত, ওই ঘটনার পরে ধীরুভাইয়ের শেয়ার আর কখনওই তেমন সঙ্কটাপন্ন হয়নি। কিন্তু আদানি শিল্পগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও কি ব্যাপারটা তাই-ই? কলকাতার সেই দালালদের ক্ষমতার সঙ্গে কি আমেরিকার আন্তর্জাতিক মানের একটি সংস্থার ক্ষমতার তুলনা টানা চলে?

০৮ ২৪
Gautam Adani

সম্ভবত নয়। কারণ অম্বানীর সেই সময়ের সঙ্কটের থেকে আদানিদের এই সঙ্কট অনেক বেশি। এ কথা ভুললে চলবে না এই আদানি শিল্পগোষ্ঠীর প্রধান গৌতম দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মস্তিষ্কপ্রসূত বহু প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছেন। বহু প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করেছেন। সেই সূত্রে আদানিকে ‘সরকার ঘনিষ্ঠ’ এবং ‘মোদী ঘনিষ্ঠ’ শিল্পপতি বলেন বিরোধীরাও।

০৯ ২৪
Hindenburg research report on Adani

হিন্ডেনবার্গ সেই আদানিদের পর্যুদস্ত করতে সফল হয়েছিল। গত ২৪ জানুয়ারি তাদের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর আদানিদের শেয়ারের দাম নামতে থাকে। কিন্তু গত মঙ্গলবার আচমকাই পরিস্থিতি বদলে যায়। আদানি পাশে পান সেই সাহায্য, যা তার উঠে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজন ছিল।

১০ ২৪
JP Morgan

৭ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার আমেরিকার অ্যানালিস্ট ব্যাঙ্কিং সংস্থা জেপি মরগ্যান আদানিদের পাশে দাঁড়িয়ে বলে দেয়, শেয়ারের দাম পড়লেও আদানিরা বন্ড ইন্ডেক্সের ভিতরে বাণিজ্য করতে পারেন। ব্যস! হাতে চাঁদ পায় আদানিরা। আদানিদের উপর ভরসা চলে যাওয়া বিনিয়োগকারীরাও কয়েক মুহূর্ত থমকে যান।

১১ ২৪
JP Morgan

এই জেপি মরগ্যান কারা? বলা যেতে পারে অর্থনীতির রাশ নিয়ন্ত্রণকারী এক অন্যতম ব্যাঙ্কিং এবং অর্থনৈতিক তথ্য বিশ্লেষণকারী সংস্থা জেপি মরগ্যান। যেখানে চাকরি করা আইআইটি, আইএমের মেধাবীদের কাছে একরকম স্বপ্ন।

১২ ২৪
Adani group

একটি বিবৃতিতে জেপি মরগ্যান জানিয়েছে, ‘‘আদানিরা এখনও সিইএমবিআই, জেএসিআই এবং জেইএসজির সূচকাঙ্কের জন্য উপযুক্ত। ইনডেক্সের নিয়ম অনুযায়ী আদানির সংস্থা এই ইনডেক্সগুলিতে ব্যবসা করতে পারবে। বাজারে আরও এগিয়ে যেতেও পারবে। একই সঙ্গে আদানি ঋণখেলাপি না হওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবে বলেও জানায় জেপি মরগ্যান।

১৩ ২৪
gautam adani

জেপি মরগ্যানের মতো সংস্থার এই আশ্বাসে আদানিদের বিনিয়োগকারীদের ভরসা জোগায়। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে যা হয়েছিল, জে পি মরগ্যানের সমর্থনে হয় ঠিক তার উল্টোটা। কারণ জেপি মরগ্যান তাদের বিবৃতিতে যা বলেছে, তা সারমর্ম হল এই যে, আদানিরা এখনই শেষ হয়ে যায়নি।

১৪ ২৪
adani group

এর পর আদানিদের ‘লাঠি’র কাজ করে একটি রিপোর্ট। সেই রিপোর্টও প্রকাশিত হয় কাকতালীয় ভাবে মঙ্গলবারই। অর্থাৎ ৭ ফেব্রুয়ারি।

১৫ ২৪
adani group

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল আদানিরা তাদের ১১০ কোটি ডলারের বিপুল ঋণ শোধ করার পরিকল্পনা করছে।

১৬ ২৪
gautam adani on hindenburg report

এখানে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের কথা আবারও টানতে হয়। কারণ হিন্ডেনবার্গ আদানির ব্যাপারে যে সমস্ত তথ্য ফাঁস করেছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল আদানির উপরে বিপুল ঋণের বোঝা থাকার কথা। রিপোর্টে বলা হয়েছিল ওই ঋণ শোধ করা আদানিদের পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্ট সেই তত্ত্বকে নস্যাৎ করে।

১৭ ২৪
gautam adani

রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার অনতিবিলম্বে রিপোর্ট সত্যি প্রমাণ করে দেন আদানি। মঙ্গলবারই আদানি শিল্পগোষ্ঠী তাদের দেয় ঋণের মধ্যে ১১০ কোটি ডলার বা ৯১৮৫ কোটি টাকার ঋণ মিটিয়ে দেয় ব্যাঙ্কগুলিকে। এই পদক্ষেপ আদানিদের উত্তরণের দ্বিতীয় চাবিকাঠির কাজ করে।

১৮ ২৪
stock market

যদিও বাজারে আদানিদের মোট ঋণের অঙ্ক নেহাৎ কম নয়। ১ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়া আছে আদানিদের। সাধারণ, ঋণখেলাপিরা বিপুল অঙ্কের ঋণের বোঝা ব্যাঙ্কগুলির উপর চাপিয়ে দেশ ছাড়েন। ফলে আদানিকে ঘিরেও তৈরি হয়েছিল সেই আশঙ্কা। এমনকি, সংসদে বিরোধীরা এমনও দাবি তুলেছিলেন যে, আদানির পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হোক, যাতে তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন। সেই আতঙ্কে বিশ্বাস জোগায় এই ঋণশোধের সিদ্ধান্ত।

১৯ ২৪
adani group

বিনিয়োগকারীরা আশ্বাস পান, আদানির এখনও ঋণশোধের ক্ষমতা আছে। তাদের মনে হতে থাকে, তা হলে হয়তো যতটা খারাপ অবস্থা মনে হচ্ছিল, ততটা খারাপ পরিস্থিতিতে নেই আদানি। শেয়ার বাজারে উত্তরণের জন্য এই ইতিবাচক সঙ্কেত জরুরি ছিল আদানিদের কাছে।

২০ ২৪
gautam adani

তবে উত্তরণের পথে ‘শেষ মার’টি আদানি দেন মঙ্গলবার অর্থাৎ ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায়। আদানি তার সমস্ত সংস্থা, যেমন— আদানি এন্টারপ্রাইজ, আদানি পোর্ট, আদানি উইলমার, এসিসি এবং অম্বুজা সিমেন্টের লাভের অঙ্ক প্রকাশ করেন। গত বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিক অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের হিসাব দিয়ে আদানি দেখান গত বছরের শেষেও তাদের লাভের অঙ্ক বেড়েছে। এমনকি বেশ কিছু সংস্থার আয় বেড়েছে বলেও দেখান আদানি।

২১ ২৪
gautam adani

আসলে ওই রিপোর্ট প্রকাশ করে আদানিরা বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে চেয়েছেন, গত বছরের শেষেও তারা লাভের খাতাতেই ছিল। আচমকা একটা রিপোর্টে ভরসা হারানো অমূলক।

২২ ২৪
যদিও হিন্ডেনবার্গ তাদের রিপোর্টে এক বারও বলেনি আদানিদের লাভ হচ্ছে না। তাদের বক্তব্য ছিল, আদানিদের লাভের অঙ্ক এবং আয়ের অঙ্ক অনুযায়ী তাদের শেয়ারের যে দাম হওয়া উচিত, তার থেকে অনেক বেশি তাদের শেয়ারের দর। হিন্ডেনবার্গের বক্তব্য ছিল, প্রভাব খাটিয়ে ওই দর বাড়িয়েছে আদানি গোষ্ঠী।

যদিও হিন্ডেনবার্গ তাদের রিপোর্টে এক বারও বলেনি আদানিদের লাভ হচ্ছে না। তাদের বক্তব্য ছিল, আদানিদের লাভের অঙ্ক এবং আয়ের অঙ্ক অনুযায়ী তাদের শেয়ারের যে দাম হওয়া উচিত, তার থেকে অনেক বেশি তাদের শেয়ারের দর। হিন্ডেনবার্গের বক্তব্য ছিল, প্রভাব খাটিয়ে ওই দর বাড়িয়েছে আদানি গোষ্ঠী।

২৩ ২৪
gautam adani

সে ক্ষেত্রে আদানিদের এই যুক্তি হিন্ডেনবার্গের যুক্তিকে খণ্ডাতে পারেনি। একই সঙ্গে আরও একটি গলদ আছে এই হিসাবে। এই হিসাব চলতি অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের। অর্থাৎ গত বছরের শেষ তিন মাসের হিসাব। তখনও আদানিদের শেয়ার নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। প্রশ্ন ওঠেনি ঋণের বোঝা নিয়েও। ফলে আদানিদের ব্যবসায় তাদের বিরুদ্ধে ওঠা কারচুপি অভিযোগেরও কোনও প্রভাব পড়েনি।

২৪ ২৪
gautam adani

তবে শেয়ার বাজারে নিজেদের জায়গা ফিরে পেতে আদানিদের রণকৌশল যা-ই হোক, তাতে যে আখেরে তাদের লাভ হয়েছে, শেয়ার বাজারের সূচকই তার প্রমাণ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক ধাক্কায় ২৫ শতাংশ বেড়ে ১৮০০ টাকায় থেমেছিল আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দাম। বুধবার সকালে তা আরও ১২ শতাংশ বেড়ে ২০০০ টাকার গণ্ডিও পেরিয়ে যায়।

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ, ছবি: সংগৃহীত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy