Thousands of Japanese soldiers died in Myanmar Ramree Island during World War II dgtl
Ramree Island Massacre
ভারতের উপকণ্ঠে ‘বিভীষিকা’ দ্বীপ, শয়ে শয়ে জাপানি সেনাকে গিলে ফেলে বিশ্বের বৃহত্তম সরীসৃপ!
ভারতের উপকণ্ঠে একটি দ্বীপে এসে বাধা পেয়েছিলেন জাপানিরা। শয়ে শয়ে জাপানি সৈনিককে প্রাণ দিতে হয়েছিল কুমিরের আক্রমণে। বিশ্বের বৃহত্তম সরীসৃপের আস্তানা ওই দ্বীপে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
এক দিকে শত্রু সেনার তাড়া, অন্য দিকে দিগন্তবিস্তৃত ঘন জঙ্গল আর কাদামাটি। এই দুইয়ের মাঝে পড়ে কোনও একটি রাস্তা বেছে নিতে হলে সিদ্ধান্তটা খুব একটা কঠিন হওয়ার কথা নয়।
০২১৮
যে কোনও সাধারণ বুদ্ধির মানুষই এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পথটি বেছে নিতেন। দ্বিমতের অবকাশই থাকত না তেমন। ১৯৪৫ সালে জাপানি সৈনিকেরাও দ্বিতীয় পথেই হেঁটেছিলেন।
০৩১৮
কিন্তু জঙ্গল আর কাদামাটির রাস্তায় যে তাঁদের জন্য মৃত্যুর খাঁড়া ঝুলে আছে, তা আন্দাজ করতে পারেননি জাপানিরা। ফল হয়েছিল মারাত্মক। কয়েকশো মিটারের মধ্যে বেঘোরে প্রাণ দিতে হয়েছিল শয়ে শয়ে সেনাকে।
০৪১৮
১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মেজাজ তখনও বেশ চড়া। জাপানের দাপটকে বশে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে ইংল্যান্ড, আমেরিকার মৈত্রী জোটের। যুদ্ধের আঁচ লেগেছিল ভারতেও।
০৫১৮
ভারতের উপকণ্ঠে মায়ানমারের (বর্মা) উপকূলের রামরি দ্বীপে নজর পড়েছিল ব্রিটেনের। সেখানে একটি বিমানঘাঁটি প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করেছিল ব্রিটিশ সেনা। জাপানিদের শায়েস্তা করতে যা হতে পারত তাদের তুরুপের তাস।
০৬১৮
রামরি দ্বীপে ব্রিটিশদের কাজে বাধা দিতে আসে এক দল জাপানি সেনা। শুরু হয় ভীষণ যুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এমন যুদ্ধ অবশ্য হামেশাই হত। ইতিহাসের পাতায় রামরির যুদ্ধ রয়ে গিয়েছে অন্য কারণে।
০৭১৮
রামরি দ্বীপে ব্রিটিশদের হয়ে জাপানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন ভারতীয়েরাও। যুদ্ধে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হন জাপান। তার পরেই নেমে আসে ভয়ঙ্কর মৃত্যু।
০৮১৮
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর তরফে যুদ্ধের শেষে জাপানিদের আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কেউ কেউ বলেন, হাজারখানেক জাপানি সেনা পড়ে ছিলেন রামরি দ্বীপে। তাঁরা শত্রু সেনার কাছে ধরা দিতে রাজি ছিলেন না।
০৯১৮
ব্রিটিশদের দিকে না এগিয়ে উল্টো রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেছিলেন জাপানের ওই হাজার সৈনিক। রামরি দ্বীপের ম্যানগ্রোভ জঙ্গল পেরিয়ে সহজেই তাঁরা মুক্তির স্বাদ পাবেন বলে আশা করেছিলেন।
১০১৮
কিন্তু জঙ্গলে তাঁদের জন্য লুকিয়ে ছিল প্রকৃতির বিভীষিকা। শয়ে শয়ে কুমিরের আস্তানা রামরির ম্যানগ্রোভ অরণ্য। যে সে কুমির নয়, বিশেষ ধরনের সেই কুমিরের নাম ‘সল্টওয়াটার ক্রোকোডাইল’ বা নোনা জলের কুমির।
১১১৮
বলা হয়, মায়ানমারের নোনা জলের কুমির বিশ্বের সবচেয়ে বড় সরীসৃপ। এরা গড়ে ১৭ ফুট লম্বা। কখনও কখনও দৈর্ঘ্য হতে পারে ২২ ফুটও। আকার, গতি, শক্তি, তৎপরতা— কোনও ক্ষেত্রেই মানুষ এই কুমিরের সঙ্গে পেরে ওঠে না।
১২১৮
রামরি দ্বীপের এই ভয়ানক কুমিরের কথা জানতেন না জাপানিরা। তাঁরা লবণাক্ত কাদামাটিতে কিছু দূর এগিয়ে বিপদের আঁচ পান। রাতের অন্ধকারে জল থেকে মাথা তোলে একে একে কুমির। ১০, ২০, ৫০, ১০০... অজস্র কুমির এগিয়ে আসে জাপানি সেনার গন্ধে।
১৩১৮
রামরি দ্বীপ অঞ্চলের আবহাওয়াও জাপানিদের জন্য অনুকূল ছিল না। ঘন জঙ্গলে সাপ, মশা, বিছে এবং বিষাক্ত মাকড়সার উপদ্রবেও পড়তে হয়েছিল তাদের। বহু সেনা অভুক্ত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কাদামাটিতে দ্রুত এগোনোও সম্ভব ছিল না।
১৪১৮
নোনা জলের কুমিরগুলি ছিল নিশাচর। ফলে ফেব্রুয়ারি মাসের এক একটি রাত জাপানিদের কাছে বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছিল। বহু সেনা কুমিরের আক্রমণেই প্রাণ হারান। তাঁরা না পেরেছেন এগোতে, না পেরেছেন ফিরে যেতে।
১৫১৮
বলা হয়, হাজার জাপানির মধ্যে রামরি দ্বীপ থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন মাত্র ৪৮৪ জন। তবে ব্রিটিশরা এই হিসাব স্বীকার করে না। তাদের দাবি, মাত্র ২০ জন জাপানি সেনা জীবিত ছিলেন ওই ঘটনার পর।
১৬১৮
তবে যাঁরা রামরি দ্বীপে মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের সকলে কুমিরের পেটে যাননি। অনেকে জ্বর এবং অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতার কারণেও মারা যান। যদিও বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয় কুমিরের আক্রমণে।
১৭১৮
অনেকে বলেন, ব্রিটিশ সেনারা রামরি দ্বীপের ভয়াবহতার কথা জানতেন। তাঁরা জানতেন, আত্মসমর্পণ না করলে প্রাকৃতিক নৃশংস মৃত্যু অপেক্ষা করে আছে জাপানিদের জন্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা শত্রুকে সতর্ক করেননি।
১৮১৮
রামরি দ্বীপের ভয়াল অভিজ্ঞতা জাপানিদের কাছে ছিল বড়সড় ধাক্কা। ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতের উত্তর-পূর্ব দিক থেকে জাপানিরা বার বার প্রকৃতির কাছে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। অনেকের মতে, এর পর থেকেই তারা বিশ্বযুদ্ধে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে। ওই বছরের অগস্টেই হিরোসিমা এবং নাগাসাকিতে আমেরিকার পরমাণু হামলা যুদ্ধে জাপানের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিয়েছিল।