মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে আমেরিকার ব্যাঙ্কগুলি লাগাতার সুদের হার বৃদ্ধি করছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঋণ। এই পরিস্থিতিতে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে আমেরিকার সরকার বিপুল ঋণের দায়ে ডুবে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৩৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
ঋণের বোঝা চেপেছে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি আমেরিকার উপর। পরিস্থিতি এমনই যে, এখন থেকে সামলানো না গেলে ঋণের দায়ে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে ডুবে যেতে পারে আমেরিকা।
০২১৯
আমেরিকার কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের একটি সাম্প্রতিক ব্যাখ্যায় দেখা গিয়েছে, দেশের মোট ঋণ এবং মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অনুপাত ক্রমশ বাড়ছে। অর্থাৎ, যত বেশি ঋণ, উৎপাদন তত বেশি হচ্ছে না।
০৩১৯
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকার ঋণ এবং উৎপাদনের অনুপাত ২০২৩ সালে ৯৮ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ হয়ে ২০৫৩ সালে পৌঁছে যেতে পারে ১৮১ শতাংশে। অন্য একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী অনুপাত ২২২ শতাংশ ছাড়াতে পারে বলেও দেখানো হয়েছে।
০৪১৯
কোভিড অতিমারির পর থেকেই আমেরিকার অর্থনীতি নড়বড়ে। ঋণ নিতে নিতে ঋণের ঊর্ধ্বসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। সেই সীমা বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
০৫১৯
মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে আমেরিকার ব্যাঙ্কগুলি লাগাতার সুদের পরিমাণ বৃদ্ধি করে চলেছে। ঋণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সুদ। এই পরিস্থিতিতে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে আমেরিকার সরকার বিপুল ঋণের দায়ে ডুবে যেতে পারে বলে আশঙ্কা।
০৬১৯
আমেরিকায় বর্তমানে সুদের পরিমাণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০০১ সালের পর থেকে এই পাহাড়প্রমাণ সুদ আর দেখা যায়নি। জুলাই মাসেও এক দফা বৃদ্ধি করা হয়েছে সুদের হার।
০৭১৯
ঋণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আমেরিকায় সরকারের ঋণের ‘সার্ভিসিং কস্ট’ (ঋণ নিলে সুদ বাবদ বাড়তি যে খরচ হয়) বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে এই খরচ ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল।
০৮১৯
অথচ, এক বছর আগেই সরকারের ঋণ ‘সার্ভিসিং কস্ট’ ছিল ৩৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের মতে, চলতি বছরে এই খরচ পৌঁছতে পারে ৬৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে।
০৯১৯
এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগামী ১০ বছরে সুদ বাবদ আমেরিকা সরকারের খরচ হতে পারে ১০ লক্ষ ৬ হাজার কোটি টাকা। আমেরিকার বাজার এবং অর্থনীতিতে যার প্রভাব অনিবার্য।
১০১৯
এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমেরিকা অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি পড়তে পারে। ২০২৪ সালের জুন মাস থেকেই মন্দার দিকে এগোতে পারে দেশের অর্থনীতি। বিভিন্ন আর্থিক সমীক্ষার মতে, সেই সম্ভাবনা ৬৭ শতাংশ।
১১১৯
আমেরিকা বরাবরই বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষে। আমেরিকান মুদ্রাই বিশ্বের বাজারে ছড়ি ঘোরায়। ৮০ শতাংশ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক লেনদেন হয় ডলারের মাধ্যমে। তবে সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলারকে কিছুটা হলেও পিছু হটতে হয়েছে।
১২১৯
আমেরিকার অর্থনীতি যে সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে, তার নেপথ্যে অন্যতম কারণ আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য না থাকা। যার ফলে পাহাড়প্রমাণ ঋণের বোঝা চেপেছে বাইডেন সরকারের ঘাড়ে।
১৩১৯
আমেরিকা বরাবরই আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করে থাকে। এই বাড়তি অর্থ আসে ঋণ থেকে। বিভিন্ন দেশ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আমেরিকার ঋণ রয়েছে। গত কয়েক বছরে সেই ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে হু হু করে।
১৪১৯
তবে আমেরিকার অর্থনীতি অত্যন্ত সুরক্ষিত। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির পরিচালক মুদ্রা বা ডলার ছাপে তারাই। যে দেশ নিজস্ব পণ্য বিক্রি করে যত ডলার আয় করে, তা তারা আবার আমেরিকাতেই বিনিয়োগ করে। ফলে আমেরিকার খরচ করা ডলার ফিরে যায় আমেরিকাতেই।
১৫১৯
যখনই কোনও সঙ্কটের পরিস্থিতি তৈরি হয়, আমেরিকা ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ফেলে। অতিরিক্ত ডলার ছাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় তারা। অতিমারির সময় বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন। ২০২০ সালে মাত্র এক বছরে আমেরিকা রাতারাতি ৩ লক্ষ কোটি ডলার ছেপে ফেলেছিল। তা দেশের নাগরিকদের মধ্যে সরকার বিলিয়ে দেয়।
১৬১৯
কিন্তু সরকারের এই নীতির সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। আমেরিকার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বেশি মুদ্রা ছাপায় মানুষ বেশি টাকার অধিকারী হন ঠিকই, কিন্তু বাজারে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের পরিমাণ তাতে কমে আসে। চাহিদা বেড়ে যায়, জোগান তার সঙ্গে মেলে না।
১৭১৯
সঙ্কটের সময়ে আমেরিকার রাস্তায় সাধারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যেতেও দেখা গিয়েছে। মানুষের কাছে টাকা আছে, কিন্তু উৎপাদন না থাকায় দোকানে জিনিস নেই। দিন দিন এই সঙ্কট মাথাচাড়া দিচ্ছে আমেরিকায়।
১৮১৯
ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে আমেরিকার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তাই তারা ঋণ নিয়ে নিয়ে অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। কিন্তু এই নীতির সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। কারণ ঋণ গ্রহণের অর্থই হল, ভবিষ্যতের আয় থেকে অর্থ চুরি করা।
১৯১৯
আমেরিকার পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্য দেশগুলির উচিত অর্থনীতি সংক্রান্ত নীতি স্থির করার সময়ে আরও সতর্ক হওয়া। এ ক্ষেত্রে কিছুটা দূরদৃষ্টিও থাকা প্রয়োজন।