The truth behind Malayalam movie Manjummel Boys, real story of Guna Cave dgtl
Guna Cave
কমল হাসনের ছবির নামে জনপ্রিয়, পাহাড়ের কোলের গুহা যেন ‘শয়তানের রান্নাঘর’
১৮২১ সালে বিএস ওয়ার্ড নামে এক ব্রিটিশ অফিসার তামিলনাড়ুর কোদাইকোনালে পাহাড়ের বুকে এক অপরূপ গুহার সন্ধান পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই গুহা নিয়ে তেমন কোনও প্রচার ছিল না।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
পাহাড়ের কোলে এক গুহা। বন্ধুদের সঙ্গে সেখানে ঘুরতে গিয়েছিলেন এক তরুণ। তাঁর প্রিয় অভিনেতার ছবির শুটিংও হয়েছে সেখানে। গুহাটি দেখার লোভ সামলাতে পারেনি তরুণেরা। বন দফতরের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারের বেড়া টপকে সেখানে পৌঁছে যান তাঁরা। কিন্তু সেই গুহা তো ‘শয়তানের রান্নাঘর’। এক বার সেখানে প্রবেশ করলে জীবিত অবস্থায় কেউ নাকি ফিরে আসেন না।
০২১৮
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘মাঞ্জুমেল বয়েজ়’ নামের মালয়ালম ছবি। সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি এই ছবিতে দেখানো হয়েছিল ‘শয়তানের রান্নাঘর’-এর নেপথ্যকাহিনি।
০৩১৮
১৮২১ সালে বিএস ওয়ার্ড নামে এক ব্রিটিশ অফিসার তামিলনাড়ুর কোদাইকোনালে পাহাড়ের বুকে এক অপরূপ গুহার সন্ধান পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই গুহা নিয়ে তেমন কোনও প্রচার ছিল না।
০৪১৮
১৯৯১ সালে নভেম্বর মাসে প্রেক্ষাগৃহে তামিল ভাষার ‘গুনা’ ছবিটি মুক্তি পায়। কমল হাসনকে অভিনয় করতে দেখা যায় এই ছবিতে। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর বক্স অফিসে ভাল ব্যবসা করে। দর্শকের মনে জায়গা করে নেয় কমল হাসনের ছবি।
০৫১৮
বিএস ওয়ার্ড যে গুহাটির সন্ধান পেয়েছিলেন, ১৭০ বছর পর ‘গুনা’ ছবির দৌলতে সেই গুহাটি প্রচার পায়। পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গুহাটি। ছবির নাম অনুসরণ করে গুহাটির নাম রাখা হয় গুনা।
০৬১৮
কমল হাসনের ছবির শুটিং কোথায় হয়েছিল তা দেখতে গুনা গুহায় ভিড় জমাতেন পর্যটকেরা। কিন্তু সেই গুহার গভীরতা নিয়ে কারও কোনও ধারণা ছিল না। নানা রকম কাহিনিও প্রচলিত ছিল এই গুহাটিকে ঘিরে।
০৭১৮
গুনা গুহায় ঘুরতে গিয়ে ১৬ জনেরও বেশি পর্যটকের প্রাণ গিয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, গুহাটি আসলে ‘শয়তানের রান্নাঘর’। মহাভারতের সঙ্গেও নাকি যোগ রয়েছে এই গুহার।
০৮১৮
স্থানীয়দের অধিকাংশের দাবি, পাণ্ডবেরা বনবাসে থাকাকালীন এই গুহায় বাস করতেন। গুহার ভিতরেই রান্নাবান্নার আয়োজন করতেন তাঁরা। সেই কারণে গুহাটিকে রান্নাঘরের সঙ্গে তুলনা করেন স্থানীয়েরা।
০৯১৮
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, গুনা গুহায় বহু পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। তাই সেখানে নিশ্চয়ই শয়তানের বাসা রয়েছে। তবে অধিকাংশ স্থানীয়ের ধারণা, গুহার গভীরে প্রচুর বাদুড় রয়েছে। সে কারণেই গুহাটির নামের সঙ্গে ‘শয়তান’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
১০১৮
২০০৬ সালে কেরলের এর্নাকুলম জেলার মাঞ্জুমেল নামের একটি ছোট গ্রাম থেকে বন্ধুরা মিলে গুনা গুহায় ঘুরতে গিয়েছিলেন। পা ফস্কে গুহার ভিতর পড়ে যান সুভাষ নামে এক তরুণ। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় খবর দিতে যান তাঁর বন্ধুরা।
১১১৮
গুনা গুহার গভীরতা কত, সে বিষয়ে ধারণা ছিল না পুলিশেরও। তারা প্রথমে ভেবেছিল, গুহার ভিতর পড়ে গিয়ে সুভাষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু গুহার অনেক নীচ থেকে সুভাষের সাড়া পাওয়ায় সকলে উদ্ধারের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
১২১৮
পুলিশকর্মীদের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান বন দফতর এবং দমকল বিভাগের কর্মীরা। কিন্তু গুহার ভিতর ঢুকে তরুণকে উদ্ধার করার সাহস কেউ পাচ্ছিলেন না। তখনই এগিয়ে আসেন সুভাষের এক বন্ধু সিজু ডেভিড।
১৩১৮
৫০ ফুট দড়ির সঙ্গে নিজেকে বেঁধে সিজু গুহার ভিতর প্রবেশ করেন। কিন্তু ৫০ ফুট গভীরে গিয়েও সুভাষকে দেখতে পান না। গুহার ভিতর থেকেই তিনি আরও দড়ি বাঁধতে বলেন। তাঁর অনুরোধে প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না উদ্ধারকারীরা।
১৪১৮
সিজু জেদ ধরে বসেন যে, ছোটবেলার বন্ধুকে সঙ্গে নিয়েই বাড়ি ফিরবেন তিনি। না হলে তিনিও এই গুহার মধ্যেই থেকে যাবেন। বাধ্য হয়ে আরও লম্বা দড়ি যোগ করেন উদ্ধারকারীরা। গুহার ৮০ ফুট গভীরে সুভাষকে আহত অবস্থায় দেখতে পান সিজু। উদ্ধার করে উপরে নিয়ে আসেন তিনি।
১৫১৮
সাহসিকতার পরিচয় দেওয়ার জন্য ২০০৮ সালে সিজুকে ‘জীবন রক্ষক’ পদক দেওয়া হয়। উদ্ধার হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় সুভাষকে। মানসিক টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে বহু দিন কাটিয়েছেন তিনি।
১৬১৮
‘দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুভাষ বলেছিলেন, ‘‘এখনও বুঝতে পারি না আমি কী করে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলাম। মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমার এই ভাবে ফিরে আসা বহু মানুষকে উৎসাহিত করবে। সে কারণেই হয়তো ভগবান আমায় বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন।’’
১৭১৮
সাক্ষাৎকারে সুভাষ আরও বলেছিলেন, ‘‘গুহা থেকে আমাকে উদ্ধার করার পর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। টানা এক মাস আমি আয়ুর্বেদ হাসপাতালে ছিলাম। ওই ঘটনার পর ছ’মাস আমার চোখে এক ফোঁটা ঘুম আসেনি। চোখ বুজলেই ওই সময়ের কথা মনে পড়ত। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে আমার দু’বছর সময় লেগেছিল।’’
১৮১৮
সুভাষের কথায়, ‘‘আমি বার বার একটা কথাই মনে করতাম। জীবনে সব সময় এগিয়ে যেতে হবে। এ জীবন বহমান। যখন শুনলাম আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই মুহূর্ত নিয়ে ছবি তৈরি হচ্ছে তখন বুঝেছিলাম যে, মানুষের জানা প্রয়োজন সেই রাতে আমার বন্ধুদের উপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে গিয়েছিল। আমার বন্ধুরা সত্যিই আমার জীবনের অনুপ্রেরণার রসদ।’’