The story of Director Prakash Jha and his daughter dgtl
Prakash Jha
সিনেমা হলে পড়ে ১০ দিনের শিশু, খোবলায় ইঁদুরেও, সেই কন্যাকেই বড় করলেন প্রকাশ ঝা
যিনি চলচ্চিত্র তৈরি করেন, তাঁর জীবনটাই যেন সিনেমা। এক কন্যাসন্তানকে দত্তক নিয়েছিলেন পরিচালক প্রকাশ ঝা। একা হাতে সন্তানস্নেহে সেই শিশুকন্যাকে মানুষ করেছেন পরিচালক।
সংবাদ সংস্থা
মুম্বইশেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৩ ১১:৪২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
সিনেমা তো সমাজের দর্পণ। তাঁর বহু ছবিতেই সমাজের সেই গল্প ফুটিয়ে তুলেছেন। রুপোলি পর্দায় যিনি গল্প বোনেন, তাঁর জীবনটাই তো যেন আস্ত একটা সিনেমা। বলিউডের অন্যতম নামী পরিচালক প্রকাশ ঝা-র কথা হচ্ছে। নানা ধরনের ছবি তৈরি করে দর্শকদের মন জয় করেছেন। অথচ সেই তাঁর জীবনের গল্পই হয়তো অনেকে জানেন না। যে কাহিনিতে ধরা পড়েছে এক বাবা এবং কন্যার উপাখ্যান।
ছবি সংগৃহীত।
০২২০
এখনও সমাজে কন্যাসন্তান নিয়ে হাজারো ছুতমার্গ রয়েছে, কন্যাভ্রূণ হত্যার খবর আজকের দিনেও শোনা যায়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এক কন্যাসন্তানকে দত্তক নিয়েছেন প্রকাশ। তাঁর সেই দত্তক নেওয়ার কাহিনি নিজেই বর্ণনা করেছিলেন পরিচালক।
ছবি সংগৃহীত।
০৩২০
তরুণ বয়স থেকেই কন্যাসন্তান দত্তক নিতে চেয়েছিলেন প্রকাশ। তখন তাঁর বয়স ২০। সেই সময় পুণেতে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এফটিআইআই)-তে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার জন্য ছবি তৈরি করেন প্রকাশ। যার নাম ‘শ্রী বৎস’। এই ছবি করতে গিয়ে একটি অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের সঙ্গে দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর।
ছবি সংগৃহীত।
০৪২০
‘পেরেন্টসার্কল’ নামে এক ওয়েবসাইটে পরিচালক লিখেছিলেন, ‘‘ওই বাচ্চাগুলো ক্যামেরার সামনে খুব লাজুক ছিল। কিন্তু একবার স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেই মজে গিয়েছিল ওরা। ভালবাসা পাওয়ার জন্য পাগল ছিল ওরা।’’ ওই বাচ্চাদের দেখেই প্রকাশ মনে মনে ঠিক করেছিলেন, তিনি একটি কন্যাসন্তান দত্তক নেবেন।
ছবি সংগৃহীত।
০৫২০
অভিনেত্রী দীপ্তি নবলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন প্রকাশ। দীপ্তির সঙ্গে বিয়ের পরও কন্যাসন্তানকে দত্তক নিতে মরিয়া ছিলেন পরিচালক। তাঁর এই ইচ্ছাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন দীপ্তিও। বিয়ের পরই সন্তানের পরিকল্পনা করেছিলেন যুগল।
ছবি সংগৃহীত।
০৬২০
আচমকাই প্রকাশ এবং দীপ্তির সুখের সংসারে চিড় ধরে। ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন দীপ্তি। সেই সময় দীপ্তির গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। এই ক্ষতের গভীরতা এতটাই বেশি ছিল যে, তার পর পরই তাঁদের সম্পর্কে ভাঙন ধরে। প্রকাশের কথায়, ‘‘আমাদের মধ্যে কোনও মতপার্থক্য ছিল না। কিন্তু এটার পর আমরা আলাদা হয়ে গেলাম।’’
ছবি সংগৃহীত।
০৭২০
স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের প্রস্তুতি যখন শুরু করেছেন প্রকাশ, ঠিক সেই সময়ই তাঁর সেই ২০ বছর বয়সের ইচ্ছাপূরণ হওয়ার সুযোগ এল। দিল্লির একটি অনাথ আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পরিচালক।
ছবি সংগৃহীত।
০৮২০
১৯৮৮ সালে ওই অনাথ আশ্রম থেকেই প্রকাশকে ফোন করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, একটি সিনেমা হলে বসার জায়গার নীচে ১০ দিনের একটি কন্যাসন্তান পড়ে রয়েছে। ইঁদুর বা পোকার কামড়ে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
ছবি সংগৃহীত।
০৯২০
সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন প্রকাশ। তার পর সেই শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে নিজের ঘরে এনেছিলেন। ১০-১২ দিন একা হাতে শিশুটির যত্ন নেন। তাঁর আদর-যত্নেই শিশুটি সেরে ওঠে।
প্রতীকী ছবি।
১০২০
অল্প কয়েক দিনের মধ্যে শিশুকন্যাটির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেলেন পরিচালক। তার পরই স্থির করলেন, ওই শিশুটিকেই তিনি দত্তক নেবেন। এই সময় বিচ্ছেদ সত্ত্বেও প্রকাশের পাশেই ছিলেন দীপ্তি। পরিচালকের কথায়, ‘‘আমি এবং দীপ্তি খুব ভাল বন্ধু। তাই শিশুটির মা হিসাবে ও সই করেছিল।’’
ছবি সংগৃহীত।
১১২০
দত্তক নেওয়া সেই শিশুকন্যার নামও রাখেন দীপ্তিই। নাম দেওয়া হয় দিশা। তবে কন্যা দিশাকে অধিকাংশ সময় একা হাতেই সামলেছেন প্রকাশ। সেই কাহিনিও নিজের লেখনীতে তুলে ধরেছেন।
ছবি সংগৃহীত।
১২২০
দত্তক নেওয়ার পর প্রায় ১ বছর দিশার যত্নআত্তি নিজেই করতেন প্রকাশ। এমনকি, কন্যাকে নিয়েই কর্মস্থলে যেতেন। দিশার যখন ১ বছর বয়স হল, সেই সময় পটনায় নিজের আদি বাড়িতে চলে যান প্রকাশ। সেই সময় বলিউডকে বিদায় জানিয়ে পটনায় চলে যান এবং ঠিক করেন যে, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করবেন।
ছবি সংগৃহীত।
১৩২০
সেই সময় দিশার দেখভাল করতেন প্রকাশের মা। তবে তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশ এবং দিশার জীবন নতুন খাতে বইতে শুরু করে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাজ ছিল না। হঠাৎ মা চলে গেল। সন্তানকে দেখার জন্য কেউ ছিল না।’’
ছবি সংগৃহীত।
১৪২০
১৯৯৩ সালে দিশাকে নিয়ে মুম্বই ফেরেন প্রকাশ। সেই সময় মায়ানগরীতে থাকার জায়গাও ছিল না তাঁর। ৩ মাস একটি হোটেলে ছিলেন পরিচালক। মহারাষ্ট্রের পাঁচগনিতে একটি স্কুলে ভর্তি করান দিশাকে। ‘মৃত্যুদণ্ড’ ছবির পর থেকে মুম্বইয়ে সুদিন ফিরতে থাকে প্রকাশের।
ছবি সংগৃহীত।
১৫২০
দিশার কিশোরীবেলায় তাঁর সঙ্গে অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছিলেন দীপ্তি। এক জন কিশোরীর যাবতীয় দেখভালের অনেকটাই সেই সময় সামলাতেন দীপ্তি।
ছবি সংগৃহীত।
১৬২০
দিশার যখন ৬ বছর বয়স, সেই সময়ই তাঁর আসল পরিচয় জানিয়েছিলেন প্রকাশ। যে জায়গা থেকে দিশাকে উদ্ধার করা হয়েছিল, সেখানে তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রকাশ। সেই কাহিনি বলেছিলেন। দিশার যখন ১২ বছর বয়স হল, সেই সময় তাঁর আসল বাবা-মার খোঁজ করার কথা বলেছিলেন প্রকাশ। কিন্তু রাজি হয়নি দিশা। প্রকাশের কথায়, ‘‘নিজের ব্যাপারে ও অন্য কারও কাছ থেকে জানুক, সেটা কখনওই চাইনি।’’
ছবি সংগৃহীত।
১৭২০
দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন দিশা। বাবার দেখানো পথেই হেঁটেছেন কন্যা। স্কুলের পাঠ শেষ করার পরই বিভিন্ন ছবির প্রযোজনা সংস্থায় সহকারী হিসাবে কাজ শুরু করেন দিশা।
ছবি সংগৃহীত।
১৮২০
ছবির দুনিয়াতেই পা রেখেছেন দিশা। এক দিন একটি চিত্রনাট্য প্রকাশকে দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। যদি এই ছবির চিত্রনাট্য পছন্দ হয় তাঁর বাবার, তবেই যেন প্রযোজনা করেন, প্রকাশকে এ কথাই বলেছিলেন দিশা। সেই ছবির নাম ‘ফ্রড সাঁইয়া’। এই ছবির প্রযোজনা করেছেন প্রকাশ এবং দিশা।
ছবি সংগৃহীত।
১৯২০
কন্যাকে নিয়ে প্রকাশ সব সময়ই গর্ব করেন। প্রকাশও তার ব্যতিক্রম নন। দিশা সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘ও আমায় কোনও দিনই বিপাকে ফেলেনি। কোনও বদভ্যাস নেই। ওর নিজের বাড়ি রয়েছে। নিজে রোজগার করে। নিজের খরচ নিজেই চালায়। কোনও কোনও সময় আমার কার্ড ব্যবহার করে।’’
ছবি সংগৃহীত।
২০২০
কন্যাই তাঁর সবচেয়ে ভাল বন্ধু। প্রকাশের কথায়, ‘‘আমরা খুব ভাল বন্ধু। একে অপরের সঙ্গে সমস্যার কথা ভাগ করে নিই। দীপ্তির সঙ্গেও ওর আলাদা সম্পর্ক রয়েছে। আমরা তিন জন মিলে অনেক সময় নৈশভোজও করি।’’ কন্যাকে নিয়ে এখন খুশির সংসার প্রকাশের।