The shadow of History and Myths around Qutub Minar dgtl
Qutub Minar
Qutub Minar: সুলতান কুতুবউদ্দিন না সম্রাট বিক্রমাদিত্য? কুতুবের পুরাতত্ত্বের পাল্লা ঝুঁকে কার দিকে?
কুতুব চত্বরে হিন্দু এবং জৈন মন্দির পুনর্নির্মাণের দাবিতে ভগবান বিষ্ণু এবং জৈন তীর্থঙ্কর ঋষভনাথের নামে দায়ের করা হয়েছে মামলা। যেমন অযোধ্যার জমি বিবাদে আবেদনকারী ছিলেন রামলালা স্বয়ং।
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২২ ১২:১৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
সুলতানি জমানার নথি জানাচ্ছে, দিল্লির চার জন শাসকের হাতে দক্ষিণ দিল্লির মেহরৌলি ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছিল ইট ও লাল বেলেপাথরের তৈরি মিনার। সময় লেগেছিল প্রায় ১৯৩ বছর (১১৯৩ থেকে ১৩৮৬ সাল)।
০২১৬
ভারত আক্রমণকারী মহম্মদ ঘোরির সেনাপতি (পরবর্তী কালে দিল্লির প্রথম সুলতান) কুতুবউদ্দিন আইবকের নির্দেশে শুরু হয়েছিল তাঁরই নামাঙ্কিত মিনার তৈরির কাজ। তবে প্রথম তলা নির্মাণের পরই তাঁর ইন্তেকাল হয়।
০৩১৬
কুতুবউদ্দিনের জামাই ইলতুৎমিস গড়েন পরের তিনটি তলা। কিন্তু দু’বার বজ্রপাত এবং ভূমিকম্পে কুতুব মিনারের বেশ কিছু অংশ ভেঙে পড়েছিল। সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক এবং ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমলে সেই অংশ পুনর্নির্মাণ করা হয়।
০৪১৬
ফিরোজ শাহের সময়ই নির্মিত হয়েছিল ২৩৮ ফুট উঁচু মিনারের পঞ্চম তলা। পরবর্তী সময় সুলতান সিকন্দর লোদিও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কুতুবের ভেঙে পড়া বেশ কিছু অংশ পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। আলাউদ্দিন খিলজির সময় বাঁধানো হয়েছিল কুতুবের প্রশস্ত প্রাঙ্গণ।
০৫১৬
সরকারি হিসেব বলছে, ২০০৬ সালে তাজমহলের চেয়েও বেশি পর্যটক এসেছিলেন কুতুব দর্শনে। আগে উপরে ওঠার ব্যবস্থা থাকলেও ১৯৮০ সালে দুর্ঘটনায় পদপিষ্ট হয়ে ৪৫ জনের মৃত্যুর পর পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় মিনারের দরজা।
০৬১৬
ভারতে ইসলামি শাসনের সূচনাপর্বের নিদর্শনটি ঘিরে বিতর্কও রয়েছে। তবে মূল মিনার নয়, বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে কুতুব প্রাঙ্গণের কুয়াতউল-ইসলাম মসজিদ। তার তিন পাশের বারান্দায় হিন্দু ও জৈন ধর্মের নানা চিহ্ন রয়েছে বলে দাবি।
০৭১৬
মসজিদের সামনে রাখা সরকারি ফলক জানাচ্ছে, ২৭টি হিন্দু এবং জৈন মন্দিরের থাম এবং অন্য অংশ ভেঙে এনে সুলতান কুতুবউদ্দিন বানিয়েছিলেন জাম-ই-মসজিদ। পরে যা পরিচিতি পায় কুয়াতউল-ইসলাম মসজিদ নামে।
০৮১৬
পুরাতত্ত্ববিদ কে কে মহম্মদের মতে, মসজিদের পূর্ব প্রান্তের একটি প্রাচীন লিপিতেও মন্দির ভাঙার প্রসঙ্গ রয়েছে। মসজিদের বারান্দার বিভিন্ন পাথরের স্তম্ভে খোদাই করা রয়েছে পদ্ম, শঙ্খ, ঘণ্টা, চতুর্ভুজ। রয়েছে, জৈন তীর্থঙ্করদের মূর্তিও।
০৯১৬
কুতুব চত্বরের মধ্যেই মিনার থেকে মসজিদে যাওয়ার পথের ধারে রয়েছে বড় পাথরে খোদাই করা গণেশের মূর্তি। পুরাতত্ত্ববিদদের একাংশের মতে নবম থেকে একাদশ শতকে পারমার রাজত্বে এমন ধাঁচের গণেশ-মূর্তি তৈরির রেওয়াজ ছিল।
১০১৬
কুতুব চত্বরের ইতিউতি আরও গণেশ, নটরাজ এবং জৈন তীর্থঙ্করদের মূর্তি রয়েছে। পর্যটন এলাকার বাইরে লোহার খাঁচায় ঘিরে এমন কয়েকটি মূর্তি রক্ষণাবেক্ষণ করে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআই)।
১১১৬
এএসআই-এর রিপোর্টে হিন্দু এবং জৈন মন্দিরের অংশ দিয়ে কুয়াতউল-ইসলাম মসজিদ গড়ার কথা বলা হলেও সেগুলি কুতুব চত্বরে ছিল বলে জানানো হয়নি। বরং অন্য কোথাও থেকে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এনে মসজিদ গড়া হয়ে থাকতে পারে বলে ওই রিপোর্টে দাবি।
১২১৬
কুতুব মিনার চত্বরে অবস্থিত চতুর্থ (মতান্তরে পঞ্চম) শতকের লৌহস্তম্ভ নিয়েও জল্পনা রয়েছে। গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের (বিক্রমাদিত্য) জমানায় প্রায় ২৪ ফুট উঁচু ওই স্তম্ভটি নির্মিত হয়েছিল হলে ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করেন।
১৩১৬
লৌহস্তম্ভের লিপিতে বলা হয়েছে, বিষ্ণুপদ পাহাড়ে ‘ধ্বজস্তম্ভ’ নির্মাণের কথা। কুতুব মিনারকে ‘বিষ্ণুস্তম্ভ’ হিসেবে ঘোষণার জন্য হিন্দুত্ববাদীদের দাবির অন্যতম ‘উৎস’ ওই লিপি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দেড় হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন ওই লৌহস্তম্ভে এখনও মরচে পড়েনি।
১৪১৬
এএসআইয়ের প্রাক্তন আধিকারিক ধর্মবীর শর্মার দাবি, সূর্যের উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়ণের মধ্যবর্তী সময়ের (২১ জুনের) অবস্থান পর্যবেক্ষণের জন্য কুতুব মিনার নির্মাণ করেছিলেন গুপ্ত সম্রাট বিক্রমাদিত্য।
১৫১৬
ধর্মবীরের আরও দাবি, সূর্যের আলোয় যাতে ছায়া না পড়ে, সে জন্য কুতুব মিনারটি ২৫ ইঞ্চি হেলানো। তা ছাড়া মিনারের দরজা উত্তরমুখী। ধ্রুবতারার গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্যই নাকি এমন ব্যবস্থা বলে তাঁর দাবি।
১৬১৬
দিল্লির আদালতে হলফনামা দিয়ে কুতুব মিনার চত্বরে পুজোর দাবির বিরোধিতা করেছে এএসআই। তাদের যুক্তি, এ ক্ষেত্রে ২০০১ সালের ধর্মীয় উপসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইন নয়, বরং ১৯৫৬ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক সৌধ ও ক্ষেত্র সংরক্ষণ আইন প্রযোজ্য।