জলের নিজস্ব রং নেই। দূষণজনিত বা অন্য কোনও প্রাকৃতিক কারণে কখনও ধূসর, কখনও নীল কখনও আবার নদীর জলে দেখা যায় সবুজ ছায়া। কিন্তু তাই বলে একসঙ্গে অনেক রং? পৃথিবীর বুকে বইছে তেমনই এক নদী।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৩ ১২:২৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
গ্রামবাংলার কোনও এক অখ্যাত খেয়ালি স্রোতের ধারা দেখে কবি লিখেছিলেন, ‘নদী, আপনবেগে পাগল-পারা’। পৃথিবীর যে কোনও নদীর ক্ষেত্রেই এই বাক্য প্রযোজ্য। নদী তার আপন খেয়ালে বয়ে চলে মোহনার দিকে। তার জলরাশি কখনও শান্ত, কখনও হয় উত্তাল।
০২১৫
বিজ্ঞান বলে, জলের নিজস্ব কোনও রং নেই। দূষণজনিত বা অন্য কোনও প্রাকৃতিক কারণে কখনও ধূসর, কখনও নীল কখনও আবার নদীর জলে দেখা যায় সবুজ ছায়া। কিন্তু তাই বলে একসঙ্গে এত রং?
০৩১৫
পৃথিবীর বুকে বইছে তেমনই এক ‘অসাধারণ’ নদী। যার বুকে খেলা করে অন্তত সাতটি রং। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, কমলা— কী নেই সেখানে? নানা রং মিলেমিশে সে নদীর কোলে তৈরি করেছে রূপকথার রাজ্য।
০৪১৫
কথা হচ্ছে ক্যানিয়ো ক্রিস্টেলস্কে নিয়ে। কলম্বিয়ার সেরানিয়া দে লা ম্যাকারেনা এলাকায় রয়েছে এই আশ্চর্য নদী। পাহাড়ের কোলে প্রকৃতি যেন তার রূপের ডালি উজাড় করে দিয়েছে এই নদীতে।
০৫১৫
পোশাকি নাম একটা থাকলেও রংবেরঙের জলের জন্য এই নদীকে কেউ বলেন ‘রিভার অফ কালার্স’ বা রঙিন নদী, কেউ আবার ‘লিকুইড রেনবো’ বা তরল রামধনু বলে চেনেন নদীটিকে। অনেকের কাছে এই নদী ‘মেল্টেড রেনবো’ বা গলিত রামধনু।
০৬১৫
কলম্বিয়ার এই রঙিন নদীতে সাত রঙের জল একসঙ্গে বইতে দেখা যায়। রক্তাভ লাল, উজ্জ্বল নীল, গাঢ় সবুজ, হলুদ, বেগুনি রঙের জলের পাশাপাশি দেখা যায় গোলাপি, কমলা, মেরুন রঙের প্রবাহও।
০৭১৫
বছরের পর বছর ধরে এ ভাবেই বয়ে চলেছে ‘লিকুইড রেনবো’। স্থানীয়েরা তো বটেই, বহু মানুষ দূরদূরান্ত থেকে এই নদী দেখতে ভিড় করেন কলম্বিয়ায়। ক্যানিয়ো ক্রিস্টেলসের রংবেরঙের জল দেখার সবচেয়ে ভাল সময় জুলাই থেকে নভেম্বর।
০৮১৫
কেন এই নদীর জল রঙিন? একসঙ্গে এত রঙের উৎস কোথায়? নদীর কোলেই লুকিয়ে আছে তার উত্তর।
০৯১৫
আসলে নদীর জল রঙিন নয়। তা কাচবৎ স্বচ্ছ। নদীর গর্ভে থাকা এক প্রকার জলজ উদ্ভিদের কারণে এই জলকে রঙিন দেখায়। ওই উদ্ভিদের নানা রঙের প্রতিফলন দেখা যায় নদীর স্রোতে। সূর্যের আলোয় তা আরও ঝলমল করে ওঠে।
১০১৫
জলে ডুবে থাকা সেই উদ্ভিদের নাম ম্যাকারেনিয়া ক্ল্যাভিগেরা। নদীখাতের নীচে হাজার হাজার বছরের পুরনো কোয়ার্টজ়াইট শিলাকে আঁকড়ে এই গাছের সংসার। কলম্বিয়ার সেরানিয়া দে লা ম্যাকারেনা অঞ্চলের নামকরণও হয়েছে এই উদ্ভিদের নামেই।
১১১৫
এলাকার একাধিক নদীতে উদ্ভিদটি পাওয়া যায়। তবে স্থান, কাল এবং আবহাওয়ার গতিবিধি ক্যানিয়ো ক্রিস্টেলসকেই রামধনুরঙা জলের আদর্শ ঠিকানা করে তুলেছে, দাবি বিশেষজ্ঞদের।
১২১৫
নদীতে খুব বেশি জল থাকলে বা জলের পরিমাণ খুব কমে গেলে রংবেরঙের খেলা আর দেখা যায় না। কম জলে গাছ শুকিয়ে খয়েরি হয়ে যায়। আবার বেশি জল থাকলে নদীর নীচ পর্যন্ত দেখা যায় না। ফলে নদীতে রামধনুও হয়ে যায় গায়েব।
১৩১৫
প্রকৃতির বুকে আশ্চর্য এই রঙের খেলা দেখতে হলে মধ্য কলম্বিয়ার ভিলাভেন্সিয়ো শহরে পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে আরও একটি বিমানে যেতে হবে লা ম্যাকারেনায়। ‘লিকুইড রেনবো’ ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য সেখান থেকে মিলবে ‘গাইড’।
১৪১৫
সেরানিয়া দে লা ম্যাকারেনা অত্যন্ত নিরিবিলি একটি পাহাড়ি জনপদ। খুব বেশি মানুষ সেখানে থাকেন না। স্থানীয় কয়েকটি পর্যটন সংস্থা নদীটি পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখান। কোথাও কোথাও রঙিন জলে সাঁতার কাটার সুযোগও মেলে।
১৫১৫
প্রকৃতির এই শোভাকে সংরক্ষণের বন্দোবস্তও করেছে কলম্বিয়া প্রশাসন। নদীর জলে বা তার নীচে থাকা গাছগুলির যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে এই এলাকায় পর্যটকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত। প্রশাসনের কড়া নির্দেশিকা মেনে নদীর জল ছুঁতে পারেন পর্যটক কিংবা স্থানীয়েরা।