The Manchester Mummy, which involved a curious tale dgtl
Manchester Mummy
ভাবতেন বেঁচে উঠবেন যে কোনও সময়ে, তবে ১১০ বছর ধরে কবরই দেওয়া হয়নি ‘ম্যানচেস্টার মমি’কে!
হানার ভাই জনকে মৃত ভেবে কফিনবন্দি করা হয়েছিল। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগে শোকার্ত আত্মীয়স্বজনদের নজরে পড়ে, কফিনবন্দি জনের চোখের পাতা নড়ছে। পরীক্ষার পর জনকে জীবিত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:০৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
ভাইয়ের মতো তাঁকেও ভুল করে জীবন্ত অবস্থায় কফিনবন্দি করা হবে। এমনই দুঃস্বপ্ন দেখতেন ব্রিটেনের গ্রেটার ম্যানচেস্টারের বাসিন্দা হানা বেসউইক। তবে হানাকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়নি। বরং তাঁকে মমি করে রাখা হয়েছিল। মৃত্যুর ১১০ বছর পর কবরে ঠাঁই হয়েছিল হানার।
০২২০
হানার সময়কালে অবশ্য এমন দুঃস্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। ১৭ শতকের শেষ ভাগ থেকে ১৯ শতকের শেষেও ব্রিটেন জুড়ে এমন ঘটনার কথা শোনা যায়। বস্তুত, কোমায় চলে যাওয়া বহু রোগীকেই মৃত ভেবে কবর দেওয়ার ঘটনাও শোনা যেত।
০৩২০
হানার ভাই জনকেও মৃত ভেবে কফিনবন্দি করা হয়েছিল। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগে শোকার্ত আত্মীয়স্বজনদের নজরে পড়ে, কফিনবন্দি জনের চোখের পাতা নড়ছে। পরীক্ষার পর জনকে জীবিত বলে ঘোষণা করেন বেসউইক পরিবারের চিকিৎসক চার্লস হোয়াইট।
০৪২০
১৬৮৮ সালে গ্রেটার ম্যানচেস্টারের এক বিত্তশালী পরিবারে জন্মেছিলেন হানা। ১৭০৬ সালে জন বেসউইকের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর অগাধ সম্পত্তি হাতে এসেছিল জন-কন্যা হানার। সে সময় থেকেই হলিউডের বারচেন বাওয়ান নামের এক প্রাসাদোপম বাড়িতে থাকতেন তিনি।
০৫২০
ভাইয়ের ওই ঘটনার কথা মনে করেই জীবন্ত কফিনবন্দি হওয়ার ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন হানা। ভয় পেতেন, তাঁর সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটবে। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে একটি দলিলও করে গিয়েছিলেন হানা। ১৭৫৮ সালে তাঁর মৃত্যুর বছরখানেক আগে চালর্সের তত্ত্বাবধানে দলিলটি করা হয়েছিল বলে দাবি।
০৬২০
চার্লসের কাছে হানার আবেদন ছিল, মৃত্যুর পর যাতে তাঁর দেহটি জমির উপরে রাখা হয়। দেহটির নিয়মিত পরীক্ষা করার আর্জিও জানিয়েছিলেন হানা। যাতে কোনও ভাবেই তাঁকে ভুল করে জীবন্ত কবর না দেওয়া হয়। নিজের দলিলে তিনি লিখিত ভাবে এই দায়িত্ব সঁপেছিলেন চার্লসের উপর। খুবই সোজাসাপ্টা অনুরোধ হলেও অর্থের লোভেই নাকি তার ফায়দা তুলেছিলেন চার্লস।
০৭২০
১৭৫৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মৃত্যুর বছরখানেক আগে ওই দলিলের মাধ্যমে নিজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খরচ হিসাবে ৪০০ পাউন্ড (বর্তমান বাজারমূল্যে প্রায় ৫৩ লক্ষ টাকা) রেখে গিয়েছিলেন হানা। সেই সঙ্গে চালর্সের জন্য ১০০ পাউন্ডও (বর্তমান বাজারমূল্যে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা) বরাদ্দ করেছিলেন। দলিলটি কার্যকর করার জন্য আরও ৪০০ পাউন্ড রাখা ছিল চার্লসের জন্য। অন্ত্যেষ্টির খরচ মিটিয়ে বেঁচে যাওয়া অর্থ চার্লস নিতে পারবেন বলে লিখে গিয়েছিলেন হানা।
০৮২০
অভিযোগ, দলিল তৈরির পর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খরচের গোটাটাই হাতানোর ছক কষেছিলেন চার্লস। মৃত্যুর পর হানাকে মমি করে রেখে দিয়েছিলেন তিনি। যদিও হানার দলিলে কোথাও উল্লেখ নেই যে তাঁকে মমি করে রাখা হোক।
০৯২০
আর্থিক কারণ ছাড়াও হানাকে মমি করে রাখার পিছনে চার্লসের আরও একটি উদ্দেশ্য ছিল বলে দাবি। চার্লসের সংগ্রহে একাধিক মমি ছিল। সেই সংগ্রহে আরও একটি মমি রাখার লোভ সামলাতে পারেননি তিনি। সেটি হানার মমি।
১০২০
মনে করা হয়, অঙ্গব্যবচ্ছেদে দক্ষ উইলিয়াম হান্টারের কাছে মমি তৈরির খুঁটিনাটি শিখেছিলেন চার্লস। কী ভাবে মমি তৈরি করতেন তিনি?
১১২০
মমি তৈরির প্রক্রিয়ায় প্রথমে মৃতের শিরা ও ধমনীতে তার্পিন তেল এবং সিঁদুরের মিশ্রণ ইঞ্জেকশন দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হত। এর পর বার করে নেওয়া হত দেহের ভিতরের অঙ্গগুলি। মৃতের রক্ত যথাসম্ভব বার করে গোটা দেহটিকে মদ দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া হত।
১২২০
দ্বিতীয় পর্যায়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেহের যাবতীয় খোলা অংশ বুজিয়ে ফেলা হত। সে জন্য কর্পূর, পটাশিয়াম নাইট্রেটের খনিজ রূপ বা নাইটার এবং ধূপ দিয়ে এক প্রকারের মিশ্রণ কাজে আসত। এর পর দেহটি সেলাই করে কর্পূর মাখিয়ে বাকি খোলা অংশগুলি বন্ধ করে দেওয়া হত।
১৩২০
তৃতীয় এবং শেষ পর্যায়ে গোটা দেহে সুগন্ধি তেল মাখিয়ে সেটিকে বাক্সবন্দি করা হত। যে বাক্সে দেহটি রাখা হত, তাতে আগে থেকে প্লাস্টার অব প্যারিস ভরা থাকত। যাতে দেহটি শুষ্ক থাকে। তা সংরক্ষণের জন্য মাঝেমধ্যে আলকাতরাও ব্যবহার করা হত। হানার দেহটি এ ভাবে মমি হিসাবে সংরক্ষিত ছিল বলে দাবি।
১৪২০
কিন্তু, স্বাভাবিক মৃত্যুর পর হানাকে কবর না দিয়ে মমি করে রাখা হয়েছিল কেন? অন্ত্যেষ্টির খরচাপাতি আত্মসাতের তত্ত্ব ছাড়াও আরও একটি কারণের উল্লেখ করেন অনেকে।
১৫২০
অনেকের দাবি, হানার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নিয়েছিলেন চার্লস। অন্ত্যেষ্টির পর যা শোধ করতে হত। তবে মমি হিসাবে হানার দেহ সংরক্ষণের ফলে সেই দায়ভার এড়াতে পেরেছিলেন চার্লস। যদিও হানার মৃত্যুর ১০০ বছর পরেও এ নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত।
১৬২০
একেবারে প্রথম দিকে হানার মমিটি রাখা হয়েছিল অ্যানকোটস হলে বেসউইক পরিবারের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। তবে পরে ম্যানচেস্টারের সেল এলাকায় নিজের বাড়িতে তা নিয়ে যান চার্লস। সেখানে একটি ঘড়ির বাক্সে মমিটি রেখে দেন।
১৭২০
চার্লসের মৃত্যুর পর মমিটি হাতবদল হয়ে যায় ওলিয়ার নামে এক চিকিৎসকের কাছে। তবে ১৮২৮ সালে ওই চিকিৎসকের মৃত্যুর পর মিউজিয়াম অব দ্য ম্যানচেস্টার ন্যাচরাল হিস্ট্রি সোসাইটিতে হানার মমির জায়গা হয়েছিল। সেখান থেকেই সেটি ‘ম্যানচেস্টার মমি’ নামে পরিচিতি পায়। মিশর এবং পেরুর বহু মমির পাশাপাশি এটিও বেশ ভিড় টানত।
১৮২০
আশ্চর্যজনক ভাবে, জীবিত অবস্থায় হানার কোনও ছবি পাওয়া যায় না। তবে ফিলিপ ওয়েন্টওয়র্থ নামে ম্যানচেস্টারের এক ইতিহাসবিদের লেখনীতে তাঁর মমির বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন, ‘দেহটি বেশ ভালই সংরক্ষণ করা হয়েছিল। তবে গোটা মুখটি কালো হয়ে কুঁচকে গিয়েছিল। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ-সহ পা দু’টি এমন কষে কাপড় দিয়ে বাঁধা হয়েছিল যেন এটি একটি ছোটখাটো আকারের বৃদ্ধার দেহ। কাচের কফিনে তা পোরা ছিল।’
১৯২০
বহু বছর পর সংগ্রহালয় থেকে কবরে জায়গা পেয়েছিলেন হানা। ১৮৬৭ সালে ওই সংগ্রহালয়টি ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন হয়। সে সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনে হয়েছিল, এ ভাবে মমি করে রাখাটা আসলে হানার মতো খ্রিস্টান মহিলাকে অসম্মান করার সমতুল। হানা তো কবরে যেতে ভয় পাননি। শুধুমাত্র জীবন্ত অবস্থায় কবরে যেতে চাননি তিনি।
২০২০
শেষমেশ মৃত্যুর ১০০ বছর পর ম্যানচেস্টারের হার্পারহে সমাধিস্থলে কবর দেওয়া হয় হানাকে। দিনটি ছিল ১৮৬৮ সালের ২২ জুলাই।