The history of forty-hour work week, will it obsolete dgtl
work time
বাতিল হতে পারে ৯টা-৫টা কাজের সময়? সপ্তাহে কত ঘণ্টা কাজ করেন ভারতের চাকুরিজীবীরা?
এই বাঁধাধরা কাজের নিয়ম চালু হল কী ভাবে? কোথায় প্রথম চালু হয় দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের নিয়ম?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঘাড় গুঁজে কাজ করার দিন ফুরিয়ে আসছে। সম্প্রতি বিশেষজ্ঞেরা বলতে শুরু করেছেন, এমন সময় আসন্ন, যেখানে ফুরোবে বাঁধাধরা সময়ে কাজের প্রয়োজন। একটানা কাজ করার বিষয়টি ইতিহাসের পর্যায়ে চলে যেতে পারে।
০২১৮
এমনটাই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন লিঙ্কডইনের প্রতিষ্ঠাতা রেড হফ্ম্যান। তাঁর ধারণা, ২০৩০ সালের মধ্যে গোটা বিশ্বে অচল হয়ে যাবে ৯টা-৫টা কাজের মডেল। তার থেকে বাদ পড়বে না ভারতও।
০৩১৮
২০৩৪ সালের মধ্যে চাকরিরত কর্মীরা বরাদ্দ সময় মেনে কাজ করার বদলে তাঁদের সুবিধামতো একাধিক চুক্তিতে কাজ করার পথই বেছে নেবেন।
০৪১৮
এই প্রবণতার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রেড একাধিক কারণ দেখিয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে সময়ের পরিবর্তনের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাড়বাড়ন্ত খানিকটা দায়ী হলেও সেটা আসল কারণ নয় বলেই মত তাঁর।
০৫১৮
কর্মক্ষেত্রের মধ্যে নানা সমস্যা এবং ক্রমবর্ধমান চাকরির নিরাপত্তাহীনতাও কাজের এই প্রচলিত ধারায় আমূল পরিবর্তন আনতে ইন্ধন যোগাচ্ছে বলে মত লিঙ্কডইনের প্রতিষ্ঠাতার।
০৬১৮
অফিসে ৮-৯ ঘণ্টার কাজের সময়সীমা অতীত কেন হবে? এই বাঁধাধরা কাজের নিয়ম চালুই বা হল কী ভাবে? কোথায় প্রথম চালু হয় দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের নিয়ম? এই ধারণার উৎপত্তি কোথায়? একেই কি সবচেয়ে কার্যকরী মডেল হিসাবে ধরে নেওয়া যেতে পারে?
০৭১৮
আমেরিকায় প্রথম চালু হয়েছিল দৈনিক আট ঘণ্টা বা সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজের কর্মসংস্কৃতি। যা আজও গোটা বিশ্বে স্বীকৃত। এই নিয়ম শুধুমাত্র কোনও সংস্থা বা আইনের চাপে শুরু হয়নি। এই নিয়ম চালু করার নেপথ্যে ছিল শ্রম, রাজনৈতিক সমঝোতা এবং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার দীর্ঘ জটিল সমীকরণ।
০৮১৮
প্রতি দিন আট ঘণ্টা বা সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের সময়সীমা চালু হওয়ার আগে বিশ্ব জুড়ে কাজের সময় আরও বর্ধিত ছিল। সপ্তাহে ৮০ থেকে ১০০ ঘণ্টা কাজের নজিরও খুঁজে পাওয়া গিয়েছে শিল্প বিপ্লবের সময়কালে। এমনকি সেই কাজের মধ্যে পরিবারের শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনাও দেখা গিয়েছে।
০৯১৮
সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, ১৮০০ সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে কর্মদিবসের দৈর্ঘ্য ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছিল। ১৯২০ সালে এসে সেই সময়সীমা থিতু হয়। আমেরিকা ও ইউরোপের শ্রমিক সংগঠনের ক্রমাগত লড়াইয়ের ফলে কর্মীদের কাজের পরিবেশ ও সময়ের উন্নতি ঘটে।
১০১৮
১৯২৬ সালে হেনরি ফোর্ডের সংস্থা ফোর্ড মোটর দিনে আট ঘণ্টা, পাঁচ দিনের কর্ম সপ্তাহ চালু করে। ফোর্ড ঘোষণা করেছিলেন যে, আট ঘণ্টা কাজ করলে প্রত্যেক শ্রমিককে দিনে ৫ ডলার দেবেন, যা সেই সময় একজন শ্রমিকের গড় পারিশ্রমিকের প্রায় দ্বিগুণ ছিল।
১১১৮
ফোর্ড মানতেন, অল্প সময়ের জন্য কাজ করালে শ্রমিকের কাজ করার গতি বেড়ে যায় ও উৎপাদন বাড়ে। এই নীতি ফলপ্রসূ হওয়ায় খুব তাড়াতাড়ি অন্যান্য সংস্থা ফোর্ডের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে শুরু করে।
১২১৮
এর পর আসরে নামেন ‘কেলগস’ সংস্থার মালিক ডব্লিউ কে কেলগ। ১৯৩০ সালে শ্রমিকদের বেতন কিছুটা কমিয়ে আট ঘণ্টার শিফ্টের পরিবর্তে ছয় ঘণ্টা শিফ্ট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
১৩১৮
তবে পরবর্তী ক্ষেত্রে এই বাঁধাধরা সময়সীমার বহু পরিবর্তন হয়। তর্ক-বিতর্কের পর আমেরিকায় ‘ফেয়ার লেবার স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট’ চালু করা হয়। নিয়ম করা হয় নিয়োগকর্তারা সপ্তাহে ৪৪ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন এমন সমস্ত কর্মচারীর অতিরিক্ত বেতন দেবেন। দু’বছর পর এই আইন সংশোধন করে কর্মসপ্তাহ কমিয়ে ৪০ ঘণ্টা করা হয়।
১৪১৮
১৯৪০ সাল থেকে আমেরিকায় সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কর্মসপ্তাহ আইনে পরিণত হয়। সেই থেকেই সারা বিশ্বে চালু হয় খাতায়কলমে আট ঘণ্টা কাজের সময়ের দৈর্ঘ্য।
১৫১৮
সম্প্রতি চলতি বছরের পরিসংখ্যান পেশ করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা। যেখানে গোটা পৃথিবীর দেশগুলির কর্মসময় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কোন দেশে চাকুরিজীবীদের একটানা কত ক্ষণ কাজ করতে হয় তার পূর্ণ তথ্য জানানো হয়েছে এই রিপোর্টে।
১৬১৮
সেই রিপোর্টে স্পষ্ট ইংল্যান্ড, আমেরিকার কর্মচারীদের তুলনায় এ দেশের প্রত্যেক কর্মচারী নির্দিষ্ট সময়ের অনেক বেশি কাজ করছেন। ভারতে বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের একাংশের দাবি, তাঁদের উপর কাজের চাপ বাড়িয়েই চলেছে সংস্থা। ফলে বাড়ছে কাজ করার সময়।
১৭১৮
সাপ্তাহিক হিসাব ধরলে ভারতের চাকুরিজীবীরা মোট ৪৬.৭ ঘণ্টা কাজ করে থাকেন। ছ’দিন অফিস হলে রোজ ৭.৭৮ ঘণ্টা। পাঁচ দিন অফিস হলে ৯.৩ ঘণ্টা।
১৮১৮
আট ঘণ্টার কাজের সময়ের বাস্তবে প্রয়োগ হয় না, এমন অভিযোগ করেছেন বহু চাকুরিজীবী।