স্থানীয়দের একাংশের দাবি, জার্মানি থেকে আমেরিকায় আসা জ্যাকব ওয়াল্টজ় নামে এক ব্যক্তির নামে সোনার খনির নামকরণ হয়েছে। জার্মানি থেকে যাঁরাই আমেরিকায় আসতেন, ইংরেজরা তাঁদের ‘ডাচম্যান’ বলে সম্বোধন করতেন। জ্যাকব এই খনির সন্ধান পেয়েছিলেন বলেই ইংরেজরা এই খনির নাম রেখেছিলেন ডাচম্যানের সোনার খনি। বর্তমানে এই খনিটির অবস্থান জানেন না কেউই। সকলে মনে করেন যে, পাহাড়ের কোলে খনিটি তার সর্বস্ব নিয়ে হারিয়ে গিয়েছে।
তবে, জ্যাকবের হাত ধরে সোনার খনির আবির্ভাবের কাহিনির সূত্রপাত নয়। এই কাহিনির শুরু ১৮৫০ সালে। স্থানীয়দের ধারণা, মিগুয়েল পেরাল্টা নামে এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম খনিটি খুঁজে পান। সেখান থেকে সোনা উদ্ধারও করতে শুরু করেন তিনি। এমনকি, এই খনির উপর পেরাল্টা পরিবারের অধিকার রয়েছে তার প্রমাণ রাখার জন্য খনির দেওয়ালে এঁকে রেখেছিলেন তিনি। সেগুলিকে ‘পেরাল্টা স্টোনস’ও বলা হয়। আবার একাংশের দাবি, এই আঁকাগুলি নকল। বোকা বানানোর জন্য পরে আঁকা হয়েছে।
মিগুয়েল এক দিন তাঁর পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে সোনার খনির দিকে রওনা হয়েছিলেন। সেই সময় পাহাড়ি দস্যুরা তাঁদের রাস্তা আটকায়। দস্যুরা মনে করত যে, ওই খনি তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ। দেবতা জ্ঞানে পুজো করত সেই খনিকে। সেখান থেকে সোনা তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা মেনে নিতে পারেনি তারা। নিমেষের মধ্যে পেরাল্টা পরিবারের সকলকে খুন করে তারা।
সোনার খনিটিও দস্যুরা পাথর দিয়ে এমন ভাবে চাপা দিয়ে রাখে যেন কেউ আন্দাজ করতে না পারেন যে সেখানে সোনার খনি রয়েছে। কানাঘুষো শোনা যায় যে, পেরাল্টা পরিবারের সকলকে খুন করার সময় সেই পরিবারের এক সন্তান ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। দস্যুদের নজরে না পড়ায় তার প্রাণ বেঁচে যায়। পুরো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিল পেরাল্টা পরিবারের ওই খুদে সদস্য।
স্থানীয়েরা দাবি করেন যে, পেরাল্টা পরিবারের খুদে সদস্য ছাড়াও খনির ব্যাপারে জানতেন থর্ন নামে এক চিকিৎসক। থর্ন নাকি এক অসুস্থ রোগীকে মরণাপন্ন অবস্থা থেকে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন। তবে তাঁকে রোগীটি কোনও পারিশ্রমিক দেননি। বরং থর্নের চোখ বেঁধে দেন তিনি। তার পর পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে কোথাও এক অজানা জায়গায় নিয়ে যান বলে জানিয়েছেন স্থানীয়েরা।
গন্তব্যস্থলে পৌঁছনোর পর থর্নের চোখের বাঁধন খুলে দেন ওই রোগী। চোখ খুলে থর্ন দেখেন, তাঁর চারদিকে যেন সোনার পাহাড়। ওই রোগী তাঁকে জানান যে, যত খুশি সোনা সংগ্রহ করতে পারেন থর্ন। শুধুমাত্র এই খনির অবস্থান যেন তিনি জিজ্ঞাসা না করেন। সোনা নিয়ে ফেরার পথে অবশ্য আবার থর্নের চোখ বাঁধা হয়। চিকিৎসকের দাবি, রোগীটি পেরাল্টা পরিবারের ওই সদস্য ছিলেন। পারিশ্রমিক দিতে তাঁদের সোনার খনিতেই নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁকে। যদিও এই ঘটনা আদৌ সত্য কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে জ্যাকব কোথায় যাচ্ছেন তা দেখতে মাঝেমধ্যেই জ্যাকবের পিছু নিতেন তাঁর প্রতিবেশীরা। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হত না। পাহাড়ি পথে কিছু দূর গিয়ে জ্যাকবকে হারিয়ে ফেলতেন তাঁরা। আসলে অ্যারিজ়োনার পর্বতমালার বুকে হারিয়ে যাওয়া সোনার খনির সন্ধান পেয়েছিলেন তিনি। তা বিক্রি করেই নিজের প্রতিপত্তি বাড়াতে থাকেন জ্যাকব।
১৮৮০ সাল নাগাদ জ্যাকব নাকি ২০৫ কোটি টাকা মূল্যের সোনা বিক্রি করে দেন। শোনা যায় যে, মৃত্যুর সময় তাঁর কাছে মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল মাত্র ১ লক্ষ টাকা। জ্যাকবের মৃত্যুর পর সোনার খনির ব্যাপারে সকলকে বলে ফেলেন জুলিয়া। এমনকি, নিজের রোজগারের জন্য মাত্র ৬০০ টাকা করে এক একটি মানচিত্র বিক্রিও করেছিলেন জুলিয়া।
অ্যাডল্ফের পুত্র এরউইন সোনার খনির কথা জানিয়েছিলেন তাঁর বাবাকে। এরউইন সেই খনির একটি মানচিত্রও জোগাড় করে এনে দিয়েছিলেন। এর আগে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি খনির সন্ধানে দুর্ঘটনার শিকার হন অ্যাডল্ফ। যাত্রাপথে অ্যা়ডল্ফের পা ভেঙে যায়। পায়ে ধাতব পিন বসাতে হয়। দুর্ঘটনার পর লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করতেন অ্যাডল্ফ। কিন্তু পুত্রের কাছে সোনার খনির কথা শোনার পর আর লোভ সামলাতে পারেননি তিনি। বেরিয়ে পড়েন সোনার খনির খোঁজে।
খুলি উদ্ধারের আরও কয়েক মাস পর অ্যাডল্ফের দেহের টুকরোর খোঁজ মেলে সুপারস্টিশন পর্বত থেকে। সঙ্গে পাওয়া যায় একটি বন্দুকও। পুলিশ দাবি করে, মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন অ্যাডল্ফ। কিন্তু পুলিশের দাবি মানতে পারেননি অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, এক বার গুলি চালানোর পর দ্বিতীয় বার অ্যাডল্ফ গুলি চালালেন কী করে? প্রথম গুলিতেই তো তাঁর মারা যাওয়ার কথা। অ্যাডল্ফের মৃত্যু ঘিরে সেই সময় রহস্য ঘনিয়ে ওঠে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy