কেন অন্ধকার হয়েছিল সেই লাইটহাউস? জাহাজ নিয়ে তদন্ত করতে গিয়েছিল একটি দল। তারা লাইটহাউসে পৌঁছে যা দেখেছিল, তাতে বিস্মিত হয়েছিল। এখনও জানা যায়নি, কী ভাবে ওই রকম অবস্থা হল।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:১৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
উত্তর স্কটল্যান্ডের ফ্লান্নানস দ্বীপ। জাহাজের নাবিকদের পথ দেখানোর জন্য সেই দ্বীপে ছিল এক লাইটহাউস। আচমকাই এক দিন তা অন্ধকার হয়ে গেল। ১৯০০ সালে একটি জাহাজের এক ক্যাপ্টেন রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘‘ফ্লান্নানসে ভয়াবহ দুর্ঘটনা হয়েছে।’’ কী হয়েছিল? সেই নিয়ে আজও রয়েছে রহস্য।
০২২০
কেন অন্ধকার হয়েছিল সেই লাইটহাউস? জাহাজ নিয়ে তদন্ত করতে গিয়েছিল একটি দল। তারা লাইটহাউসে পৌঁছে যা দেখেছিল, তাতে বিস্মিত হয়েছিল। এখনও জানা যায়নি, কী ভাবে ওই রকম অবস্থা হল।
০৩২০
লাইটহাউসে তিন জন রক্ষী ছিলেন। তদন্তকারী দল গিয়ে তাঁদের কাউকেই খুঁজে পায়নি। গোটা দ্বীপে খোঁজ মেলেনি তাঁদের। কোথায় হারিয়ে গেলেন তিন রক্ষী? রহস্যভেদ হয়নি এখনও।
০৪২০
১৮৯৯ সালে ফ্লান্নানসে তৈরি হয়েছিল সেই লাইটহাউস। সেখানে নিয়োগ করা হয়েছিল তিন জনকে। নাম জেমস ডুকাট, থমাস মার্শাল, উইলিয়াম ম্যাকআর্থার।
০৫২০
১৯০০ সালের ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে ওই তিন জনের আর খোঁজ মেলেনি। সে সময়ে উত্তর আটলান্টিকে ভয়ঙ্কর এক ঝড় এসেছিল।
০৬২০
ডিসেম্বরের শেষে ক্যাপ্টেন জিম হার্ভির নেতৃত্বে একটি দল তদন্ত করতে গিয়েছিল সেখানে। ২৬ ডিসেম্বর সেখানে পৌঁছেছিলেন দলের সদস্যেরা।
০৭২০
লাইটহাউসে ১৬০টি সিঁড়ি ছিল। সেই সিঁড়ি ভেঙে লাইটহাউসের শিখরে পৌঁছন ওই দলের সদস্য জোসেফ মুর। গিয়ে যা দেখেছিলেন, তাতে হাড়হিম হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
০৮২০
বন্ধ ঘরের দরজা খুলতেই মুরকে ধাক্কা দেয় শীতল হাওয়া। ঘরের দেওয়ালে যে ঘড়ি ছিল, তার কাঁটা থেমে গিয়েছিল। ঘরে রাখা ছিল একটিমাত্র টেবিল। মুরের মনে হয়েছিল, সেটি যেন কারও অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল।
০৯২০
গোটা লাইটহাউসে একটি মাত্র জীবিত প্রাণী ছিল। একটি হলুদ ক্যানারি পাখি। খাঁচায় বন্দি ছিল সেটি। কী ভাবে, কত দিন না খেয়ে বেঁচে ছিল সেটি, সেই নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
১০২০
পরে রিপোর্ট দিয়ে মুর জানিয়েছিলেন, ঘরে ঢুকেই তাঁর মনে হয়েছিল কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। তদন্ত যত এগিয়েছিল, ততই রহস্য বৃদ্ধি পেয়েছিল।
১১২০
লাইটহাউসে তখনও পড়েছিল একটি বর্ষাতি। মনে করা হয়, তিন রক্ষীর মধ্যে এক জন ওই বর্ষাতি ছাড়াই ঝড়বৃষ্টির সময় বেরিয়ে পড়েছিলেন।
১২২০
দ্বীপের পশ্চিম অংশে ঝড়ের দাপট ছিল স্পষ্ট। তদন্তকারীরা দেখেন, লাইটহাউসের পশ্চিমে লোহার রেলিং বেঁকে গিয়েছে।
১৩২০
দ্বীপে রেললাইন পাতার কাজ চলছিল। বোল্ডার গড়িয়ে এসে সেগুলির উপর পড়েছিল। ফলে সেই রেললাইন দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিল। বেশ কিছু বাক্স ভেঙে ধুলোয় মিশেছিল।
১৪২০
নর্দার্ন লাইটহাউস বোর্ডকে রিপোর্ট দিয়ে ক্যাপ্টেন হার্ভি জানিয়েছিলেন, প্রবল ঝড় হয়তো উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল তিন রক্ষীকে। লাইটহাউসের কাছে যে রেলিং ছিল, তা ভেঙেই সম্ভবত উড়ে গিয়েছিলেন তাঁরা।
১৫২০
তিন জনের কি মৃত্যু হয়েছিল? রিপোর্টে হার্ভি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, এই বিষয়ে কোনও ইঙ্গিত তাঁরা পাননি। তিন জনের মৃত্যু হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন তাঁরা।
১৬২০
লাইটহাউসে তিন রক্ষীকে নিযোগ করেছিলেন রবার্ট মুরহেড। তিনি নিজে ফ্লান্নানসে গিয়েছিলেন ঘটনার তদন্ত করতে। ফিরে এসে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছিলেন, ওই দ্বীপে নেহাতই এক দুর্ঘটনা হয়েছিল। তারই বলি হয়েছিলেন তিন রক্ষী।
১৭২০
১৫ ডিসেম্বর নৈশভোজ সেরে দ্বীপের পশ্চিম দিকে গিয়েছিলেন দুই রক্ষী। তখনই আচমকা ঝড় ওঠে। বিশাল ঢেউ এসে গ্রাস করে দু’জনকে। কিন্তু তাঁর মতে, সেই রাতে হাওয়ার গতি ছিল দ্বীপের দিকে। তাই হাওয়া কখনও রক্ষীদের উড়িয়ে সমুদ্রে নিয়ে ফেলতে পারে না। তৃতীয় জনের কী হল, সেই প্রশ্নেরও উত্তর মেলেনি।
১৮২০
কেউ কেউ দাবি করেছেন, নির্জন ওই দ্বীপে তিন রক্ষী আর থাকতে পারছিলেন না। তাই তিন জনে একসঙ্গে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। অন্য একটি তত্ত্ব বলে, তিন জন পরস্পরের সঙ্গে ঝামেলা করে একে অপরকে খুন করেছিলেন। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই তাঁদের দেহ উদ্ধার হওয়া উচিত ছিল, যা হয়নি।
১৯২০
রক্ষীদের মধ্যে ম্যাকআর্থার ছিলেন বদমেজাজি। অনেকে মনে করেন, তিনি বাকি দু’জনকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন। আদতে কী হয়েছিল তার উত্তর ১২০ বছর পরেও মেলেনি।