The facilities of INS Vikrant, the Naval warship that will help India counter china in the sea dgtl
INS Vikrant
INS Vikrant: চিনকে টক্কর দিতে সমুদ্রে আবার দেশীয় রণতরী! কী কী সুবিধা থাকছে ভারতের নতুন ‘ব্রহ্মাস্ত্রে’?
ভারতীয় নৌবাহিনীর তূণে এটিই সেরা তীর হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এই যুদ্ধজাহাজ নিয়ে আলোচনার কারণ শুধু তার শত্রু নিধন ক্ষমতা নয়।
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২২ ১৫:২২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
স্বাধীনতা দিবসেই ভারতের নৌবহরে যোগ দিচ্ছে এক নতুন পাহারাদার— আইএনএস বিক্রান্ত! বিক্রান্ত আধুনিক রণতরী। যা কাজে যোগ দেওয়া তো দূর অস্ত্, পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার আগেই তার উপর ভরসা করতে শুরু করেছেন দেশের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
০২২২
গত কয়েক বছর ধরে চিনের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। লাদাখে সঙ্ঘাতে জড়িয়েছে ভারত এবং চিনের সেনার। প্রতিরক্ষাবিদদের আশা, সমুদ্রপথে যদি চিন কখনও ভারতকে আক্রমণের চেষ্টা করে তবে তা ঠেকাতে ব্রহ্মাস্ত্র হতে পারে বিক্রান্ত।
০৩২২
ভারতীয় নৌবাহিনীর তূণে এটিই সেরা তির হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এই যুদ্ধজাহাজ নিয়ে আলোচনার কারণ শুধু তার শত্রু নিধন ক্ষমতা নয়। জলযুদ্ধ হলে ভারতের শক্তিবৃদ্ধিতে তার ভূমিকা কী হতে পারে, তার জল্পনাও নয়। বিক্রান্ত আলোচনায়, তার কারণ এই যুদ্ধজাহাজ তৈরি করেছে ভারত নিজে।
০৪২২
বিদেশের সাহায্য নিয়ে নয়, সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিবিদদের হাতে তৈরি হয়েছে আইএনএস বিক্রান্ত। এর আগে বিদেশ থেকে কিনে আনা রণতরীই শত্রুদেশের তরফে আসা সামুদ্রিক ঝড়ঝাপটা সামলাত। এই প্রথম সম্পূর্ণ দেশে তৈরি কোনও রণতরীর নাম উঠতে চলেছে ভারতীয় নৌবাহিনীতে।
০৫২২
বিক্রান্ত এক বিশাল যুদ্ধজাহাজ। এর দৈর্ঘ্য ২৬২ মিটার। অর্থাৎ প্রায় ৮০ তলা একটি বাড়িকে যদি আড়াআড়ি শুইয়ে রাখা হয়, প্রায় তার সমান। জাহাজটির প্রস্থ ৬২ মিটার।
০৬২২
সব মিলিয়ে ১৪টি ডেক রয়েছে এই জাহাজের। আর রয়েছে ২৩০০টি কামরা। জাহাজের নাবিক-সহ মোট ১৭০০ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে বিক্রান্তের ভিতরে। মহিলা অফিসারদের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা।
০৭২২
গতিতেও কম যায় না বিক্রান্ত। এই যুদ্ধজাহাজের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২৮ নটিক্যাল মাইল। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজের গতিবেগের থেকে ঘণ্টায় ঠিক ৭ নটিক্যাল মাইল কম।
০৮২২
বার বার জ্বালানি ভরার দরকারও নেই। কারণ বিক্রান্তে এক বার জ্বালানি ভরা হলেই তার সাহায্যে সাড়ে সাত হাজার নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করতে পারে। অর্থাৎ এক বারের জ্বালানিতে ভারতের নৌসীমা ধরে দু’বার যাওয়া-আসা করতে পারবে বিক্রান্ত।
০৯২২
বিক্রান্তের প্রশংসা করেছেন রণতরী বিশেষজ্ঞরাও। তাঁরা বলেছেন, ‘‘সমুদ্রে ভাসমান পুরদস্তুর ১৮ তলা একটি বাড়ি বিক্রান্ত। আধুনিক প্রযুক্তিতে ঠাসা। প্রযুক্তির বিস্ময়ই বলা যায় একে।’’
১০২২
প্রায় ২১ হাজার টন উন্নত মানের ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিক্রান্তকে। যা দিয়ে অন্তত তিনটি আইফেল টাওয়ার তৈরি করে ফেলা যাবে।
১১২২
এই বিক্রান্তেরই ছাদ থেকে উড়বে নৌবাহিনীর যুদ্ধবিমান। বস্তুত বিক্রান্ত নৌবাহিনীর ভাসমান বিমানঘাঁটি।
১২২২
এই বিমানপোত এতটাই বড় যে তার মধ্যে অনয়াসে দু’টি ফুটবল মাঠের স্থান সঙ্কুলান হয়ে যাবে। রয়েছে বিমান টেক অফ করার দু’টি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের রানওয়ে। একটি বিমান অবতরণ পথ। রয়েছে বিমানের গতি রোধ করার তিনটি অ্যারেস্টার ওয়্যারও।
১৩২২
এক সঙ্গে ৩০টি যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার ওঠানামা করতে পারবে বিক্রান্ত থেকে। সামুদ্রিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার ক্ষেত্রে এমন একটি রণতরী দেশের শক্তিবৃদ্ধি করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
১৪২২
বিক্রান্ত ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দিলে ভারতের নৌশক্তি বৃদ্ধি তো পাবেই, পাশাপাশি ভারতের হাতেও থাকতে চলেছে দু’টি ভাসমান বিমানঘাঁটি— প্রথমটি আইএনএস বিক্রমাদিত্য এবং দ্বিতীয়টি আইএনএস বিক্রান্ত।
১৫২২
ভারত মহাসাগর ক্রমশই উপস্থিতি বাড়াচ্ছে চিন। এই মুহূর্তে চিনের হাতে রয়েছে দু’টি ভাসমান বিমানঘাঁটি। তবে গোয়েন্দা সূত্রে খবর চিন আর কিছু দিনের মধ্যেই ভারত মহাসাগরে আরও একটি ভাসমান বিমানঘাঁটি রাখতে চলেছে। ভারতীয় নৌবাহিনীও একটি তৃতীয় ভাসমান বিমানঘাঁটির আবেদন করেছে। তবে আপাতত বিক্রান্ত হাতে এলে অনেকটাই সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৬২২
বিক্রান্তের উপর ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভরসার আরও একটি কারণ এর নাম। ভারতের প্রথম এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার বা ভাসমান বিমানঘাঁটির নামও ছিল আইএনএস বিক্রান্ত। ব্রিটেনের কাছ থেকে পুরনো বিক্রান্তকে কিনেছিল ভারত।
১৭২২
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল সেই বিক্রান্ত। ভারতীয় নৌবাহিনীর ইতিহাসে সেই পুরনো বিক্রান্তের অনেক জয়গাথা রয়েছে।
১৮২২
নৌবহরের ঐতিহ্য হল এখানে কোনও জাহাজের মৃত্যু হয় না। পুরনো বিক্রান্ত থেকে নতুন বিক্রান্ত বানানোর কাজ শুরু হয় ২০০৬ সালে। তার পর থেকে অজস্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে নতুন বিক্রান্ত।
১৯২২
গত বছর অগস্ট মাসেই প্রথম সামুদ্রিক পরীক্ষা হয় বিক্রান্তের। তার পর থেকে অক্টোবর, জানুয়ারি এবং জুলাই মাসে মোট চারটি পরীক্ষা হয়েছে।
২০২২
আপাতত বিক্রান্তের অগ্নিপরীক্ষা প্রায় শেষ। ১০ জুলাই যুদ্ধজাহাজটির সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের কার্যকারিতা দেখে নেওয়ার পালা ছিল। তা-ও সফল হয়েছে।
২১২২
সমুদ্রে বিক্রান্তের চতুর্থ পরীক্ষা ছিল সেটিই। সব ঠিক থাকলে জুলাইয়ের শেষে যুদ্ধজাহাজটি ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা। তার পর ১৫ অগস্ট তার আনুষ্ঠানিক সংযুক্তি হবে ভারতের নৌবহরে।
২২২২
২০২১ সালে ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ৭৫তম পূর্তির অমৃত মহোৎসবের ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিক্রান্ত সেই উদ্যোগের সাম্প্রতিকতম প্রয়োগ। বিক্রান্ত সেই মহোৎসবেরই অঙ্গ। বিক্রান্তের পর ভারত সেই হাতেগোনা সাতটি দেশের তালিকাভুক্ত হবে যে সমস্ত দেশের নিজস্ব রণতরী বানানোর ক্ষমতা রয়েছে। এর আগে রাশিয়া, আমেরিকা, চিন, ব্রিটেন , ফ্রান্স এবং ইতালি ছিল এই তালিকায়।