Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Murder

Murder: বাবার খুনিদের শাস্তি দিতে আইনজীবী হয়েছিলেন, ১৬ বছর লড়াইয়ের পর জয়ী বাঙালি মেয়ে

৫ এপ্রিল, মঙ্গলবার বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাহেরের খুনে দোষী দু’জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি দু’জনের যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২২ ১৪:৩৭
Share: Save:
০১ ১৭
আইনজীবী হওয়ার কোনও ইচ্ছেই ছিল না। তবে বাবার খুনিদের শাস্তি দিতে ওই পেশা বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের শগুফ্‌তা তবস্‌সুম আহমেদ। ১৬ বছরের দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর মঙ্গলবার সে দেশের সুপ্রিম কোর্টে জয় হাসিল করেছেন তিনি।

আইনজীবী হওয়ার কোনও ইচ্ছেই ছিল না। তবে বাবার খুনিদের শাস্তি দিতে ওই পেশা বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের শগুফ্‌তা তবস্‌সুম আহমেদ। ১৬ বছরের দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর মঙ্গলবার সে দেশের সুপ্রিম কোর্টে জয় হাসিল করেছেন তিনি।

০২ ১৭
শগুফ্‌তার বাবা তথা বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদের খুনে হাই কোর্টের রায় বহাল রেখেছে সে দেশের শীর্ষ আদালতের আপিল বিভাগ। ৫ এপ্রিল, মঙ্গলবার বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাহেরের খুনে দোষী দু’জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি দু’জনের যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা হয়েছে।

শগুফ্‌তার বাবা তথা বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদের খুনে হাই কোর্টের রায় বহাল রেখেছে সে দেশের শীর্ষ আদালতের আপিল বিভাগ। ৫ এপ্রিল, মঙ্গলবার বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাহেরের খুনে দোষী দু’জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি দু’জনের যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা হয়েছে।

০৩ ১৭
তাহেরের খুনিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ের আনন্দ গোপন রাখেননি তাঁর মেয়ে শগুফ্‌তা এবং স্ত্রী সুলতানা আহমেদ। সংবাদমাধ্যমের কাছে সুলতানা বলেন, ‘‘১৬ বছরের কঠিন লড়াইয়ের পর আমরা সুবিচার পেয়েছি। তবে ওদের ফাঁসিতে ঝোলানো হলে পুরোপুরি শান্তি পাব।’’

তাহেরের খুনিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ের আনন্দ গোপন রাখেননি তাঁর মেয়ে শগুফ্‌তা এবং স্ত্রী সুলতানা আহমেদ। সংবাদমাধ্যমের কাছে সুলতানা বলেন, ‘‘১৬ বছরের কঠিন লড়াইয়ের পর আমরা সুবিচার পেয়েছি। তবে ওদের ফাঁসিতে ঝোলানো হলে পুরোপুরি শান্তি পাব।’’

০৪ ১৭
এই জয়ে তাহেরের মেয়ে শগুফ্‌তার অবদান কম নয়। বাবার ইচ্ছেয় এক সময় আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন তিনি। যদিও আদালতের চৌহদ্দিতে ঢোকার ইচ্ছে ছিল না তাঁর।

এই জয়ে তাহেরের মেয়ে শগুফ্‌তার অবদান কম নয়। বাবার ইচ্ছেয় এক সময় আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন তিনি। যদিও আদালতের চৌহদ্দিতে ঢোকার ইচ্ছে ছিল না তাঁর।

০৫ ১৭
আইন নিয়ে পড়াশোনার শেষে আদালতের বাইরের কোনও পেশা বেছে নিতে চেয়েছিলেন শগুফ্‌তা। ইচ্ছে ছিল, আইনি পরামর্শদাতা বা অন্য কোনও পেশায় যাবেন।

আইন নিয়ে পড়াশোনার শেষে আদালতের বাইরের কোনও পেশা বেছে নিতে চেয়েছিলেন শগুফ্‌তা। ইচ্ছে ছিল, আইনি পরামর্শদাতা বা অন্য কোনও পেশায় যাবেন।

০৬ ১৭
শগুফ্‌তা বলেন, ‘‘২০০৬ সালে (ঢাকার) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে আমাকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন বাবা। যদিও আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। আইন নিয়ে পড়াশোনা করলে শিক্ষকতা করা বা আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজের সুযোগও থাকে। আইনি পরামর্শদাতার কাজও করা যায়। আমি সব সময় কোর্টের বাইরে কাজ করতে চেয়েছিলাম।’’

শগুফ্‌তা বলেন, ‘‘২০০৬ সালে (ঢাকার) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে আমাকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন বাবা। যদিও আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। আইন নিয়ে পড়াশোনা করলে শিক্ষকতা করা বা আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজের সুযোগও থাকে। আইনি পরামর্শদাতার কাজও করা যায়। আমি সব সময় কোর্টের বাইরে কাজ করতে চেয়েছিলাম।’’

০৭ ১৭
তবে সে বছরই তাহেরের খুনের ঘটনায় শগুফ্‌তাদের জীবন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাহেরের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। দু’দিন পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে তাহেরের বাড়ির কাছের ম্যানহোল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।

তবে সে বছরই তাহেরের খুনের ঘটনায় শগুফ্‌তাদের জীবন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাহেরের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। দু’দিন পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে তাহেরের বাড়ির কাছের ম্যানহোল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।

০৮ ১৭
ওই ঘটনায় মোতিহার থানায় মামলা রুজু করেন তাহেরের ছেলে সঞ্জিদ আলভি। ঘটনার তদন্তের পর সে বছরের ১৭ মার্চ তাহেরের খুনে ছয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেন তদন্তকারী আধিকারিক মেট্রোপলিটন ডিটেকটিভ পুলিশের তৎকালীন সাব-ইনস্পেক্টর আহসানুল কবির।

ওই ঘটনায় মোতিহার থানায় মামলা রুজু করেন তাহেরের ছেলে সঞ্জিদ আলভি। ঘটনার তদন্তের পর সে বছরের ১৭ মার্চ তাহেরের খুনে ছয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেন তদন্তকারী আধিকারিক মেট্রোপলিটন ডিটেকটিভ পুলিশের তৎকালীন সাব-ইনস্পেক্টর আহসানুল কবির।

০৯ ১৭
তাহের-খুনে অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন তাঁর সহকর্মী মিয়া মহম্মদ মহিউদ্দিন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্র শিবিরের সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহি, তাহেরের বাড়ির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গির, জাহাঙ্গিরের ভাই তথা ছাত্র শিবিরের এক কর্মী আবদুস সালাম, তাঁদের বাবা আজিমুদ্দিন এবং সালামের আত্মীয় নাজমুল।

তাহের-খুনে অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন তাঁর সহকর্মী মিয়া মহম্মদ মহিউদ্দিন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্র শিবিরের সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহি, তাহেরের বাড়ির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গির, জাহাঙ্গিরের ভাই তথা ছাত্র শিবিরের এক কর্মী আবদুস সালাম, তাঁদের বাবা আজিমুদ্দিন এবং সালামের আত্মীয় নাজমুল।

১০ ১৭
এই খুনের মামলায় প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন মহিউদ্দিন। অভিযোগ, পদোন্নতির জন্যই এই খুন করেছিলেন তিনি। তবে ২০০৬ সালে জামিনে ছাড়া পেয়ে যান মহিউদ্দিন।

এই খুনের মামলায় প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন মহিউদ্দিন। অভিযোগ, পদোন্নতির জন্যই এই খুন করেছিলেন তিনি। তবে ২০০৬ সালে জামিনে ছাড়া পেয়ে যান মহিউদ্দিন।

১১ ১৭
রাজশাহীর পর হাই কোর্টেও তাহেরের খুনের মামলা চলে। তবে ২২ মে ২০০৮ সালে রাজশাহী স্পিডি ট্রায়াল ট্রাইব্যুনালে চার অভিযুক্তের ফাঁসির সাজা হলেও জামিন পেয়ে যান মহিউদ্দিন। এর পর মামলা হাই কোর্টে গেলে সেখানেও জামিনে মুক্ত হন তিনি।

রাজশাহীর পর হাই কোর্টেও তাহেরের খুনের মামলা চলে। তবে ২২ মে ২০০৮ সালে রাজশাহী স্পিডি ট্রায়াল ট্রাইব্যুনালে চার অভিযুক্তের ফাঁসির সাজা হলেও জামিন পেয়ে যান মহিউদ্দিন। এর পর মামলা হাই কোর্টে গেলে সেখানেও জামিনে মুক্ত হন তিনি।

১২ ১৭
বাবার খুনে প্রধান অভিযুক্ত বার বার ছাড়া পেয়ে যাওয়ায় নিজেই ওকালতি করার সিদ্ধান্ত নেন শগুফ্‌তা। তিনি বলেন, ‘‘হাই কোর্টেও মূল অভিযুক্তের জামিনের পর মা ও ভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করি। এর পর  আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেছিলাম।’’

বাবার খুনে প্রধান অভিযুক্ত বার বার ছাড়া পেয়ে যাওয়ায় নিজেই ওকালতি করার সিদ্ধান্ত নেন শগুফ্‌তা। তিনি বলেন, ‘‘হাই কোর্টেও মূল অভিযুক্তের জামিনের পর মা ও ভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করি। এর পর আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেছিলাম।’’

১৩ ১৭
ওই মামলার আগে পর্যন্ত শগুফ্‌তা বা তাঁর মা-ভাই কখনও আদালতের চৌহদ্দিতে যাননি। শগুফ্‌তা বলেন, ‘‘আমার মা সাধারণ ঘরের বধূ। ওই মর্মান্তিক ঘটনার আগে পর্যন্ত আদালতে যাননি। আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়া বা শুনানির সময় উপস্থিত থাকা— সবই তাঁর পক্ষে কষ্টকর ছিল।’’

ওই মামলার আগে পর্যন্ত শগুফ্‌তা বা তাঁর মা-ভাই কখনও আদালতের চৌহদ্দিতে যাননি। শগুফ্‌তা বলেন, ‘‘আমার মা সাধারণ ঘরের বধূ। ওই মর্মান্তিক ঘটনার আগে পর্যন্ত আদালতে যাননি। আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়া বা শুনানির সময় উপস্থিত থাকা— সবই তাঁর পক্ষে কষ্টকর ছিল।’’

১৪ ১৭
তবে শগুফ্‌তাদের যাবতীয় কষ্টের ফল মিলেছে। মহিউদ্দিনের হয়ে ১৫-২০ জন আইনজীবী লড়াই চালিয়েছেন। তবে তাতেই শগুফ্‌তার থেকে আইনি জয় ছিনিয়ে নিতে পারেননি মহিউদ্দিন।

তবে শগুফ্‌তাদের যাবতীয় কষ্টের ফল মিলেছে। মহিউদ্দিনের হয়ে ১৫-২০ জন আইনজীবী লড়াই চালিয়েছেন। তবে তাতেই শগুফ্‌তার থেকে আইনি জয় ছিনিয়ে নিতে পারেননি মহিউদ্দিন।

১৫ ১৭
শগুফ্‌তা বলেন, ‘‘ফৌজদারি কেস হওয়ায় রাষ্ট্রই যে এ মামলা লড়বে, তা নিশ্চিত ছিল। তবে আমাদেরও কাছেও আইনজীবী নিয়োগ করার বিকল্প পথ ছিল। অভিযুক্তদের হয়ে ১৫-২০ আইনজীবী লড়েছে। তবে আমাদেরও বহু আইনজীবী নিজে থেকেই সাহায্য করেছেন।’’

শগুফ্‌তা বলেন, ‘‘ফৌজদারি কেস হওয়ায় রাষ্ট্রই যে এ মামলা লড়বে, তা নিশ্চিত ছিল। তবে আমাদেরও কাছেও আইনজীবী নিয়োগ করার বিকল্প পথ ছিল। অভিযুক্তদের হয়ে ১৫-২০ আইনজীবী লড়েছে। তবে আমাদেরও বহু আইনজীবী নিজে থেকেই সাহায্য করেছেন।’’

১৬ ১৭
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মুখ্য বিচারপতি হাসান ফোয়েদ সিদ্দিকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এক বেঞ্চে এই মামলা উঠেছিল। তাতে মহিউদ্দিনের আবেদন খারিজ করে হাই কোর্টের রায় বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত।

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মুখ্য বিচারপতি হাসান ফোয়েদ সিদ্দিকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এক বেঞ্চে এই মামলা উঠেছিল। তাতে মহিউদ্দিনের আবেদন খারিজ করে হাই কোর্টের রায় বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত।

১৭ ১৭
জয়ের পর শগুফ্‌তা বলেন, ‘‘কখনও ভাবিনি এ ভাবে আদালতের দোরে দোরে ছুটে বেড়াব। ১৬ বছর ধরে এতটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাব, সেটাও অকল্পনীয় ছিল।’’

জয়ের পর শগুফ্‌তা বলেন, ‘‘কখনও ভাবিনি এ ভাবে আদালতের দোরে দোরে ছুটে বেড়াব। ১৬ বছর ধরে এতটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাব, সেটাও অকল্পনীয় ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy