বিতর্কের সঙ্গে অবশ্য রামদেবের সমান্তরাল সম্পর্ক। সে তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়েই হোক বা বিভিন্ন সময়ে ‘যোগগুরু’র ‘নজরে আসা’ মন্তব্য।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৪ ১৪:০৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
বিজ্ঞাপনী প্রচারের মাধ্যমে ‘ভুল বার্তা’ প্রেরণ সংক্রান্ত মামলায় স্বঘোষিত যোগগুরু রামদেবকে তলব করল সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার শীর্ষ আদালত রামদেবের সঙ্গে তাঁর সহযোগী তথা পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর আচার্য বালকৃষ্ণকেও ডেকে পাঠিয়েছে।
০২২০
আদালত অবমাননা সংক্রান্ত একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলিকে নোটিস দিয়ে কৈফিয়ত তলব করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সংস্থার তরফে সেই নোটিসের কোনও জবাব না পাওয়ায় আবার তলব করা হয়েছে রামদেবকে। মঙ্গলবার বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি আহসানউদ্দিন আমান্নুলার বেঞ্চ রামদেব এবং বালকৃষ্ণকে আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
০৩২০
গত ২১ নভেম্বর রামদেবের সংস্থার উদ্দেশে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, বিভিন্ন রোগের নিরাময় হিসাবে তাঁর সংস্থার বিজ্ঞাপনে ‘অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর দাবি’ বন্ধ করতে হবে। না হলে প্রতিটি দাবির জন্য জরিমানা হিসাবে ১ কোটি টাকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে রামদেবের সংস্থাকে।
০৪২০
জরিমানার বিষয়ে আদালতের তরফে মৌখিক ভাবে জানানোর পর ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন রামদেব। তাঁর অভিযোগ, কয়েক জন চিকিৎসক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁর সংস্থাকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছেন। এবং সেই চেষ্টাই তাঁরা ক্রমাগত করে আসছেন।
০৫২০
শুধু পতঞ্জলি সংস্থাই নয়। রামদেবের দাবি, কয়েক জন চিকিৎসক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছেন। রামদেবের পাল্টা অভিযোগ, তাঁর সংস্থার নামে অপপ্রচার করা হচ্ছে।
০৬২০
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ এবং মন্তব্যের পর উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে একটি সাংবাদিক বৈঠকও করেছিলেন রামদেব। সেখানে স্বঘোষিত যোগগুরু বলেন, ‘‘বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একটিই খবর। তা হল, সুপ্রিম কোর্ট পতঞ্জলিকে ভর্ৎসনা করেছে। শীর্ষ আদালত বলেছে, যদি অপপ্রচার চালানো হয়, তবে জরিমানা দিতে হবে।’’
০৭২০
সাংবাদিক বৈঠকে রামদেব দাবি করেন, তাঁর সংস্থা কোনও ভুল প্রচার করেনি। তাঁদের বিরুদ্ধে কয়েক জন চিকিৎসক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। তার পর সুর চড়িয়ে রামদেব বলেছেন, ‘‘যদি আমরা মিথ্যাবাদী হই, তবে ১০০০ কোটি টাকা জরিমানা করুন। আমরা মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতেও প্রস্তুত।’’
০৮২০
রামদেবের সংস্থাকে ঘিরে বিতর্কের শুরু করোনা পর্বে। তখন ‘কোভিড প্রতিরোধী’ ওষুধ ‘করোনিল কিট’ বাজারে এনেছিল পতঞ্জলি। অভিযোগ, কোভিড প্রতিরোধী না হওয়া সত্ত্বেও শুধু করোনিল কিট বিক্রি করেই প্রায় আড়াইশো কোটি টাকার বেশি মুনাফা করে রামদেবের সংস্থা।
০৯২০
২০২০ সালের ২৩ জুন প্রথম বার বাজারে আসে ‘করোনিল কিট’। করোনিল এবং শ্বাসারি বটি নামে দু’ধরনের ট্যাবলেট এবং ‘অণু তেল’ নামের ২০ মিলিলিটারের একটি তেলের শিশি নিয়ে তৈরি ওই কিটের দাম রাখা হয় ৫৪৫ টাকা।
১০২০
আলাদা ভাবে ট্যাবলেট এবং তেল কেনা যাবে বলেও জানানো হয়েছিল রামদেবের সংস্থার তরফে। কোভিড অতিমারির সময় বিপুল বিক্রি হয়েছিল ওই ওষুধ। রামদেবের সংস্থা হিসাব দিয়ে জানিয়েছিল, মোট ২৩ লক্ষ ৫৪ হাজার করোনিল কিট বিক্রি করেছিল তারা। কিন্তু সংস্থার লাভের মাঝেই শুরু হয় করোনিল-বিতর্ক।
১১২০
সংস্থার বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে মিথ্যা বিজ্ঞাপনী প্রচারের অভিযোগ এনেছিল আইএমএ। রামদেবের সংস্থার বিরুদ্ধে মামলার শুনানিতে সরকারের উদ্দেশেও বেশ কিছু বার্তা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের তরফে বলা হয়েছিল, এমন অসত্য বা বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনী প্রচার বন্ধ করতে সরকারের কোনও নির্দেশিকা থাকলে ভাল হয়। সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্যের পর রামদেব কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘‘যত রকম খারাপ এবং অপশক্তি রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংস্থার লড়াই চলছে এবং চলবে।’’
১২২০
বিতর্কের সঙ্গে অবশ্য রামদেবের সমান্তরাল সম্পর্ক। সে তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়েই হোক বা বিভিন্ন সময়ে ‘যোগগুরু’র ‘নজরে আসা’ মন্তব্য। ঘৃণাভাষণ এবং ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগে রামদেবের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল।
১৩২০
পিটিআই সূত্রে খবর, ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাজস্থানের বাড়মের জেলায় একটি অনুষ্ঠানে মুসলিমদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন রামদেব। সন্ত্রাস ছড়ানো থেকে শুরু করে হিন্দু মহিলাদের অপহরণের ঘটনায় মুসলিমরা জড়িত বলে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। এই মন্তব্যের জেরেই রামদেবের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল।
১৪২০
রামদেবের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের এই প্রথম নয়। ২০২০ সালে করোনিল ওষুধ নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে বাবা রামদেব, আচার্য বালকৃষ্ণ-সহ মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল রাজস্থানের জয়পুরে।
১৫২০
২০২২ সালে মহিলাদের সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগ ওঠে রামদেবের বিরুদ্ধে। একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। ভিডিয়োটিতে রামদেব বলেছিলেন, “মেয়েদের শাড়ি পরলে দেখতে ভাল লাগে, সালোয়ার পরলেও ভাল লাগে, আবার কিছু না পরলেও ভাল লাগে।” এই মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন যোগগুরু।
১৬২০
নিজের ব্রাহ্মণ পরিচয় দিতে গিয়ে ওবিসিদের (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) অপমানও করেন রামদেব। একটি ভিডিয়োতে রামদেব বলেন, “আমার আসল গোত্র ব্রাহ্মণ। আমি অগ্নিহোত্রী ব্রাহ্মণ। কিন্তু লোকে বলে আমি নাকি ওবিসি। কিন্তু আমি বেদী ব্রাহ্মণ, দ্বিবেদী ব্রাহ্মণ, ত্রিবেদী ব্রাহ্মণ এবং চতুর্বেদী ব্রাহ্মণ— আমি চারটি বেদই পড়েছি।” এই ভিডিয়োটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। যদিও ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসতেই অভিযোগ ওঠে, রামদেব ওবিসিদের অপমান করেছেন। সেই সঙ্গে সমাজমাধ্যমে ট্রেন্ডিং হওয়া শুরু করে #বয়কটপতঞ্জলি।
১৭২০
ওবিসিদের ‘অপমান’ নিয়ে যখন রামদেবের বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যম তোলপাড়, তখন নিজের মন্তব্যের সাফাইও দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসির প্রসঙ্গ তোলেন রামদেব। রামদেবের দাবি, ওবিসি নয়, তিনি আসাদউদ্দিন ওয়েইসির কথা উল্লেখ করেছেন। সেই ‘ওয়েইসি’ শব্দটিকে ভুল ব্যাখ্যা করে ‘ওবিসি’ হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে বলেও অভিযোগ” রামদেবের।
১৮২০
রামদেবের দাবি, দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের চেয়েও তাঁর সময়ের মূল্য বেশি। পিটিআই সূত্রে খবর, গোয়ার পানাজিতে রামদেবের সহকারী আচার্য বালকৃষ্ণকে অভিনন্দন জানানোর জন্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত ছিলেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সবন্ত এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রীপদ নাইক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে হরিদ্বার থেকে তিন দিনের জন্য গোয়ায় গিয়েছিলেন রামদেব। সেখানে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছিলেন যোগগুরু।
১৯২০
ভরা অনুষ্ঠানে রামদেব বলেছিলেন, ‘‘আদানি, অম্বানী, টাটা এবং বিড়লাদের থেকেও আমার সময়ের মূল্য অনেক বেশি।’’ শিল্পপতিদের সঙ্গে তাঁর সময়ের কোথায় পার্থক্য রয়েছে, তা-ও জানিয়েছিলেন তিনি।
২০২০
রামদেবের দাবি, ‘‘শিল্পপতিরা তাঁদের সময়ের ৯৯ শতাংশ শুধু মাত্র নিজেদের স্বার্থের জন্য খরচ করেন। কিন্তু আমার সময় তাঁদের চেয়েও বেশি মূল্যবান। সাধারণ জনগণকে ভাল রাখার জন্যই আমি সময় খরচ করি।’’