Strange and unique illness affecting an Indonesian family dgtl
Treacher Collins Syndrome
পাল্টে যায় মুখের আদল! বিরল রোগে আক্রান্ত ‘অভিশপ্ত’ পরিবারের ছয় সদস্য
বয়স বাড়লে মুখের বদল স্বাভাবিক। কিন্তু মানুরুঙ্গ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যে বদল দেখা দিয়েছিল, তা বিরল। পরে জানা যায়, বিরল জিনগত রোগে ভুগছেন তাঁরা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:৩৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
বয়স বাড়লে মুখের বদল স্বাভাবিক। কিন্তু মানুরুঙ্গ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যে বদল দেখা দিয়েছিল, তা বিরল। পরে জানা যায়, বিরল জিনগত রোগে ভুগছেন তাঁরা। যা নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন চিকিৎসকেরাও।
০২১৬
ইন্দোনেশিয়ার কেদুঙ্গকাঙ্গে বাস করে এই মানুরুঙ্গ পরিবার। পরিবারের মাথা শরিফ আলি সূর্য মানুরুঙ্গ। তাঁর ছয় সন্তান রয়েছে। স্ত্রী মারা গিয়েছেন।
০৩১৬
সূর্যের ছয় সন্তানের মধ্যে পাঁচ জনই ট্রিচার কলিনস সিনড্রোম নামে বিরল রোগে ভুগছেন। এই রোগে মুখে বিকৃতি দেখা যায়। শারীরিক কিছু প্রতিবন্ধকতাও তৈরি হয়। সূর্য নিজেও ভুগছেন সেই রোগে।
০৪১৬
সূর্য পেশায় কৃষিজীবী। স্ত্রী এবং কন্যাদের নিয়ে তাঁর ছিল সুখের সংসার। খুব সাধারণ ভাবে জীবনযাপন করতেন তাঁরা। কিন্তু চতুর্থ সন্তানের জন্মের পর জীবন বদলে যায়।
০৫১৬
জন্মের পরেই সূর্যর চতুর্থ সন্তান আনোয়ারের শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দেয়। তার চোয়ালের গঠন ছিল অপরিণত। যে কারণে খেতে এবং শ্বাস নিতে সমস্যা হত তাঁর।
০৬১৬
আনোয়ার যত বড় হতে থাকে, তার চোখ এবং কানেও সমস্যা দেখা দেয়। একের পর এক চিকিৎসকের কাছে তাকে নিয়ে যায় মানুরুঙ্গ পরিবার। যদিও কোনও চিকিৎসকই রোগ নির্ণয় করতে পারেননি। শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, বিরল জিনগত রোগে ভুগছে সে। নাম ট্রিচার কলিনস সিনড্রোম (টিসিএস)।
০৭১৬
টিসিওএফ১, পিওএলআর১সি, পিওএলআর১ডি জিনের বিয়োজন (মিউটেশন)-এর কারণে এই বিরল রোগ হয়। কেন এই বিয়োজন হয়, তার কারণ এখনও অধরা। এই রোগে আক্রান্ত হলে মুখের হাড় এবং কলার (টিস্যু) বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
০৮১৬
জন্মের পর থেকে একাধিক অস্ত্রোপচার হয় আনোয়ারের। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এই গোটা সময় একে অপরের পাশে ছিল মানুরুঙ্গ পরিবার।
০৯১৬
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ৫০ হাজার জনের মধ্যে এক জন এই বিরল রোগে আক্রান্ত হন। এই রোগে আক্রান্তদের মুখের কলা এবং হাড়ের গঠন বাধা পায়। সে কারণে চোয়ালের গঠন ঠিকঠাক হয় না। তার প্রভাব পড়ে চোখ এবং কানের গঠনেও। কান হয় ছোট।
১০১৬
এই টিসিএসের কারণে মানুষ বধির হতে পারেন। চোয়ালের গঠন পরিণত না হওয়ায় শ্বাসপ্রশ্বাস বাধাপ্রাপ্ত হয়। খেতেও সমস্যা হয়। বিশেষত শিশুদের, যা হয়েছিল আনোয়ারের।
১১১৬
শুধু আনোয়ার নয়, সূর্য-সহ পরিবারের মোট ছ’জন এই বিরল রোগে আক্রান্ত। এতে শুধু তাঁদের মুখের বিকৃতি ঘটেনি, আরও নানা সমস্যার মুখে নিয়মিত পড়েন তাঁরা। এই রোগের কারণে তাঁরা সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। কোনও কাজেই উৎসাহ পান না। ছোটবেলায় খুবই সমস্যায় পড়তে হত। তবে এখন এই সমস্যাকে জয় করেছেন তাঁরা।
১২১৬
সূর্যের দাবি, তিনি এবং তাঁর চার কন্যার মধ্যে জন্ম থেকে এই রোগের লক্ষণ ছিল না। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকট হয়। ছোটবেলায় মুখের গঠন অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল তাঁদের। গালে মাংসও ছিল। কিন্তু ক্রমে গাল আরও শুকিয়ে যায়। শুধুই হাড়গুলি প্রকট হয়ে ওঠে।
১৩১৬
সূর্যের পাঁচ সন্তানের মধ্যে এক কন্যা টিউর এই বিরল রোগের থাবা থেকে বেঁচেছেন। মায়ের মতো স্বাভাবিক তিনি। বাবা এবং বাকি ভাইবোনের মতো বিরল রোগ থাবা বসাতে পারেনি তাঁর শরীরে।
১৪১৬
বিরল রোগের জন্য পাড়াপড়শি থেকে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে কম কথা শুনতে হয়নি মানুরুঙ্গ পরিবারের সদস্যদের। বিশেষত সূর্যকে। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই জানিয়েছেন সে কথা।
১৫১৬
সূ্র্য জানিয়েছেন, স্থানীয়রা আগে বলতেন, কোনও অভিশাপ রয়েছে তাঁদের পরিবারে। সে কারণে সকলের মুখে বিকৃতি দেখা দিয়েছে। ছোটবেলায় হেয় করা হত তাঁকে। তেমন বন্ধুও ছিল না।
১৬১৬
সূর্য যদিও ক্রমে সে সব অপমান অগ্রাহ্য করতে শিখেছেন। স্থানীয়রাও বুঝতে পেরেছেন, এটা কোনও অভিশাপ নয়, বিরল জিনগত রোগেই সূর্য এবং তাঁর পাঁচ সন্তানের এই অবস্থা। এখন বরং গ্রামের অনেকেই পাশে রয়েছেন সূ্র্যের। আর তিনিও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে মানুষকে বোঝান এই বিরল রোগের কথা।