প্রসঙ্গত, এর পর আর সময় নষ্ট না করে কলম্বোর সঙ্গে যোগাযোগ করে মোদী প্রশাসন। লঙ্কা সরকারকে উদ্বেগের বিষয়টি সবিস্তার জানান সেখানে কর্মরত ভারতীয় হাই কমিশনার। এই ধরনের যৌথ মহড়া এলাকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে বলেও স্পষ্ট করা হয়। ফলে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে পাক নৌসেনার সঙ্গে মহড়া বাতিল করেন কলম্বোর জলযোদ্ধারা।
লঙ্কা সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন ত্রিঙ্কোমালির বাসিন্দারা। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন তাঁরা। এলাকাবাসীদের কথায়, ‘‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ভারতকে নিশানা করতেই এই নৌমহড়ার আয়োজন করা হচ্ছিল। এতে কলম্বো ও নয়াদিল্লির সম্পর্কে ফাটল ধরার প্রবল আশঙ্কা ছিল। মহড়া বাতিল করে সেটা এড়ানো গিয়েছে।’’
উল্লেখ্য, গত বছর সমুদ্র গবেষণায় যুক্ত বিদেশি জাহাজের শ্রীলঙ্কার জলসীমায় প্রবেশে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি করে কলম্বোর সরকার। ২০২২ সাল থেকে দক্ষিণের দ্বীপরাষ্ট্রটিতে চিনা নজরদারি জাহাজের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। এই নিয়ে প্রবল আপত্তি তোলে নয়াদিল্লি। বিশ্লেষকদের দাবি, মোদী সরকারের চাপে শেষ পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি করতে বাধ্য হয় লঙ্কা সরকার।
২০২২ সালের অগস্টে শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরে নোঙর করে চিনা নৌসেনার ক্ষেপণাস্ত্র এবং কৃত্রিম উপগ্রহের উপর নজরদারিতে সক্ষম গুপ্তচর জাহাজ ইউয়ান ওয়াং ৫। এতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় কলম্বোর উপর চাপ বাড়াতে থাকে নয়াদিল্লি। ফলে দক্ষিণের প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে চিড় ধরে ভারতের।
দীর্ঘ দিন ধরেই কলম্বো ও ইসলামাবাদের নৌসেনার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। দু’দেশের রণতরীগুলিকে প্রায়ই একে অপরের নৌঘাঁটিতে নোঙর করতে দেখা যায়। যৌথ মহড়াতেও যোগ দেয় তারা। তবে এর আগে কখনওই ত্রিঙ্কোমালির মতো কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দু’দেশের নৌবাহিনী গা ঘামানোর পরিকল্পনা করেনি। ফলে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে হওয়া নির্বাচনে দক্ষিণের দ্বীপরাষ্ট্রে দেখা গিয়েছে বাম দলগুলির জয়জয়কার। ভোটে জিতে দশম প্রেসিডেন্ট হিসাবে কুর্সিতে বসেন জনতা বিমুক্তি পেরামুনা বা জেভিপির পলিটব্যুরোর সদস্য দিশানায়েকে। রাজনীতির ময়দানে ভারত-বিরোধী ও চিনপন্থী হিসাবে পরিচিতি ছিল তাঁর। যদিও ক্ষমতায় আসার পর থেকে নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার রাস্তাতেই হেঁটেছেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার অনুরাধাপুরায় দু’টি রেল প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে নয়াদিল্লি। এপ্রিলের সফরে সেগুলির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেই অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন স্থানীয়েরা। ভারতের রেল মন্ত্রকের অধীনস্থ একটি সংস্থার তৈরি ওই দু’টি প্রকল্পকে শ্রীলঙ্কার পরিকাঠামোয় ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, নৌমহড়া বাতিল হওয়ার বিষয়টি যে সহজে ইসলামাবাদ হজম করে নেবে তা নয়। কারণ সম্প্রতি পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে ভারতের নাম না করে হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে শোনা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্পর্ক ধীরে ধীরে মজবুত হওয়াকে মোদী সরকারের ‘মাস্টারস্ট্রোক’ বলে উল্লেখ করেছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy