Speculation about Wagner group’s involvement in Israel-Hamas war and provide air support to Hezbollah dgtl
Israel-Hamas Conflict
ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধে যোগ দিচ্ছে রাশিয়ার সেই ওয়াগনার বাহিনী! ভয়ঙ্কর অস্ত্র দিচ্ছে হিজ়বুল্লাকে
‘এসএ-২২ গ্রেহাউন্ড’-এ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর লঞ্চার এবং রাডার রয়েছে। এটি মানবচালিত এবং মানববিহীন— উভয় বিমানের উপর হামলা চালিয়ে, সেগুলি ধ্বংস করতে সক্ষম।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:০২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
নয়া মোড় নিল ইজ়রায়েল-হামাস সংঘাত। প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে সমর্থন করতে এ বার আসরে নামছে পুতিনের ‘নিজস্ব বাহিনী’ নামে পরিচিত ওয়াগনার গোষ্ঠী। হামাসের পাশে থাকা হিজ়বুল্লা গোষ্ঠীকেও সাহায্য করতে নাকি প্রস্তুত ওয়াগনার। ইতিমধ্যেই ওয়াগানার গোষ্ঠীর হামাস এবং হিজ়বুল্লার পাশে দাঁড়ানো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পেন্টাগন।
০২২৪
পেন্টাগনের দুই উচ্চপদস্থ আধিকারিক আমেরিকার সংবাদপত্র ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’কে জানিয়েছেন, লেবাননের ইরান-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী হিজ়বুল্লাকে রাশিয়ার ‘এসএ-২২ গ্রেহাউন্ড’ তুলে দিতে চলেছে ওয়াগনার। ‘এসএ-২২ গ্রেহাউন্ড’ একটি বিমান বিধ্বংসী ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র।
০৩২৪
পশ্চিমি দুনিয়ার কাছে ‘প্যান্সার-এস১’ নামে পরিচিত রাশিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হাতে পেলে হিজ়বুল্লা যোদ্ধারা রাডারের সাহায্যে ইজ়রায়েলি যুদ্ধবিমানের গতিবিধি আগাম আঁচ করে পাল্টা হামলা চালাতে পারবেন।
০৪২৪
‘এসএ-২২ গ্রেহাউন্ড’-এ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর লঞ্চার এবং রাডার রয়েছে। এটি মানবচালিত এবং মানববিহীন— উভয় বিমানের উপর হামলা চালিয়ে সেগুলি ধ্বংস করতে সক্ষম।
০৫২৪
পেন্টাগনের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডারকে উদ্ধৃত করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্ট জানাচ্ছে, হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধে ওয়াগনার গোষ্ঠীর যোগ দেওয়া ‘খুবই উদ্বেগজনক’। তবে ‘এসএ-২২ গ্রেহাউন্ড’ এখনও হিজ়বুল্লার হাতে এসে পৌঁছেছে কি না তা এখনও নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না। যদিও ওয়াগনার এবং হিজ়বুল্লার কার্যকলাপের দিকে নজর রাখছে আমেরিকা।
০৬২৪
লেবাননের ইরান-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী হিজ়বুল্লা। এটি ইজ়রায়েলের উত্তর সীমান্তে ইজ়রায়েলি বাহিনীর সঙ্গে ল়ড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে, দক্ষিণে গাজ়া ভূখণ্ডে ইজ়রায়েলের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মোকাবিলা করছে হামাস। এ বার সেই দুই গোষ্ঠীকে সমর্থন দিতে আসছে ওয়াগনার গোষ্ঠী।
০৭২৪
কিন্তু কেন ওয়াগনার গোষ্ঠী এবং ‘এসএ-২২ গ্রেহাউন্ড’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে আমেরিকা?
০৮২৪
কুখ্যাত ওয়াগনার গোষ্ঠী, ‘পুতিনের নিজস্ব সেনা’ নামেও পরিচিত। এটি একটি স্বনিয়ন্ত্রিত সামরিক বাহিনী। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব জুড়ে ধর্ষণ, ডাকাতি, খুন এবং যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
০৯২৪
দীর্ঘ দিন ধরে ক্রেমলিনের সঙ্গে ওয়াগনার বাহিনীর ৬০০ ‘ভাড়াটে খুনি’র সম্পর্কের জল্পনা অস্বীকার করেছে রাশিয়া। তবে পশ্চিমি দুনিয়ার দাবি, রাশিয়ার বিভিন্ন গোপন কাজ উদ্ধারের দায়িত্ব দেওয়া আছে এই বাহিনীর উপর।
১০২৪
দীর্ঘ দিন ধরে এ-ও দাবি করা হয়েছে, ওয়াগনার গোষ্ঠী পুতিনের ব্যক্তিগত বাহিনী যারা কেবলমাত্র পুতিনের নির্দেশই অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।
১১২৪
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওয়াগনার বাহিনীর বিরুদ্ধে বার বার ইউক্রেন, সিরিয়া, লিবিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, সুদান এবং মোজ়াম্বিকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।
১২২৪
শোনা যায়, এক সময় পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহ এবং সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য এই বাহিনীকে কাজে লাগানো হত। পুতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সিরিয়ার আন্দোলকারীদের দমন করতেও তিনি এই ওয়াগনার বাহিনীকে কাজে লাগিয়েছিলেন।
১৩২৪
এ-ও শোনা যায়, ‘বিশেষ অভিযান’ চালানোর জন্য ওয়াগনার বাহিনীকে পূর্ব আফ্রিকায় মোতায়েন করেছিল ক্রেমলিন। যদিও এর দায় বরাবরই এড়িয়ে গিয়েছে রাশিয়া। এই বাহিনীর অস্তিত্ব নিয়ে বহু জল্পনা থাকলেও ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে এই গোষ্ঠীর কার্যকলাপ প্রথম প্রকাশ্যে নজরে আসে।
১৪২৪
প্রাথমিক ভাবে, রাশিয়ার কয়েকশো অভিজ্ঞ সেনা নিয়ে এই বাহিনী গঠিত হয়েছিল। শোনা যায়, ডনবাসের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা ক্রেমলিনের নির্দেশ মানতে অস্বীকার করলে তাঁদের হত্যা করার জন্য এই বাহিনীকে পাঠানো হয়। ওয়াগনারের প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা দিমিত্রি উটকিন। তিনি রাশিয়ার বিশেষ বাহিনী ‘স্পেটসনাজ’-এর লেফটেন্যান্ট কর্নেল ছিলেন।
১৫২৪
মনে করা হয়, এক সময় ওয়াগনার বাহিনী এতটাই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে যে রুশ সরকারও তাঁদের অর্থ দিতে অস্বীকার করে। এর পর ইয়েভজেনি প্রিগোঝিনকে ওয়াগনার বাহিনীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
১৬২৪
প্রিগোঝিন পুতিনের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি পরিচিত ছিলেন ‘পুতিনের রাঁধুনি’ হিসাবেও। রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাতে ওয়াগনার বাহিনীর উপর ভরসা দেখিয়েছিল ক্রেমলিন।
১৭২৪
তবে মাঝপথে হঠাৎই বিদ্রোহী হয়ে ওঠে ওয়াগনার বাহিনী। গত জুন মাসে ওয়াগনার যোদ্ধারা ইউক্রেন সীমান্তবর্তী একাধিক এলাকার দখল নিয়েছিল। এর পর তারা রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উদ্দেশে অভিযান শুরু করে। কিন্তু সে সময় পুতিন দ্রুত নিজের অনুগত রুশ সেনাকে সামনে রেখে ‘বিদ্রোহীদের’ কোণঠাসা করেছিলেন।
১৮২৪
প্রিগোঝিন এর পরে রাশিয়া থেকে বেলারুস চলে গিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন পশ্চিমি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল। জুলাই মাসের গোড়ায় অভিযোগ ওঠে, পুতিনের নির্দেশে খুন করা হয়েছে ওয়াগনার প্রধানকে। কিন্তু সেই জল্পনা মিথ্যা প্রমাণিত করে সমাজমাধ্যমে ভিডিয়ো পোস্ট করে বেঁচে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি।
১৯২৪
এর পর অগস্ট মাসে মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গগামী একটি বেসরকারি সংস্থার ‘এমব্রেয়ার লিগ্যাসি ৬০০’ বিমান পশ্চিম রাশিয়ার তেভর অঞ্চলের কুজ়েনকিনো গ্রামের কাছে ভেঙে পড়ে। বিমানটিতে প্রিগোঝিন-সহ মোট ১০ জন ছিলেন। তাঁদের সকলেরই মৃত্যু হয়। অথচ, ওড়ার আগে নিয়মমাফিক ‘ফিট’ সার্টিফিকেট ছিল বিমানটির। এমনকি, ভেঙে পড়ার মাত্র ৩০ সেকেন্ড আগে পর্যন্ত বিমানের পাইলটের সঙ্গে ইন্টারনেট-নির্ভর রেডার ব্যবস্থার যোগাযোগ ছিল। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত প্রিগোঝিনই ছিলেন ওয়াগনারের দায়িত্বে।
২০২৪
প্রিগোঝিনের মৃত্যুর পর জল্পনা উঠেছিল, সাজানো বিমান দুর্ঘটনায় খুন করা হয়েছে প্রিগোঝিনকে। নিজের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’কে নাকি চক্রান্ত করে খুন করিয়েছেন পুতিনই। প্রিগোঝিনের মৃত্যুর পর থেকে বেশ কিছু দিন নজরের আড়ালেই ছিল ওয়াগনার। ইজ়রায়েল-হামাস সংঘাতে তাদের যুক্ত হওয়া নিয়ে আবার চর্চা শুরু হয়েছে। ওয়াগনার বাহিনীর পূর্বের অভিযান এবং তাদের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের কারণে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
২১২৪
অন্য দিকে, নানা ক্যালিবার এবং পাল্লার রকেটের পাশাপাশি, হিজ়বুল্লার হাতে রয়েছে ‘গাইডেড’ ক্ষেপণাস্ত্র! সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তার উত্তরসূরি রাশিয়ার তৈরি একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেট রয়েছে সেই তালিকায়।
২২২৪
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত রুশ রকেট কাতুসা এবং তার পরবর্তী সংস্করণ বিএম-২১ গ্রাদ হিজ়বুল্লার অন্যতম শক্তি। সামরিক ট্রাকে বহনযোগ্য ১০৭ এবং ১২২ মিলিমিটারের এই ‘মাল্টি ব্যারেল রকেট’-এর বেশ কয়েকটি সংস্করণ রয়েছে হিজ়বুল্লা বাহিনীর হাতে। ১১ থেকে ৫২ কিলোমিটার পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রের কয়েকটি ইতিমধ্যেই ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেছে তারা।
২৩২৪
সোভিয়েত জমানার ৩৫ কিলোমিটার পাল্লার বিএম-২১ উরগান এমনকি, ৫০০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরকবাহী ৭০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘স্কাড’ রয়েছে হিজ়বুল্লার অস্ত্রাগারে।
২৪২৪
এর মধ্যেই লেবানন থেকে সীমান্ত সংলগ্ন ইজ়রায়েল ভূখণ্ডে ২৫ থেকে ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা চালিয়েছে হিজ়বুল্লা। ইজ়রায়েল ভূখণ্ড লক্ষ্য করে হামলার কথা স্বীকার করে হিজ়বুল্লা জানিয়েছে, সীমান্ত সংলগ্ন শেবায় ইজ়রায়েলের সেনার ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোন পাঠিয়েছিল তারা। এই পরিস্থিতিতে এসএ-২২ হাতে পেলে তারা ইজ়রায়েলি বিমানহানার মোকাবিলায় সুবিধা পাবে বলে মনে করছেন সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।