বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রাচীন মানবের দেহাবশেষের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, আজ থেকে ১৫ হাজার বছর আগে ব্রিটেনে দুই ধরনের মানব প্রজাতি বাস করত। তাদের মধ্যে এক ধরনের মানুষ ছিল নরখাদক।
সংবাদ সংস্থা
লন্ডনশেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২ ০৯:০৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
প্রাচীন মানবের দেহাবশেষ, হাড়গোড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নরখাদক (ক্যানিবাল) সম্পর্কে নতুন তথ্য পেলেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানতে পেরেছেন, এক সময় ব্রিটেনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই ধরনের নরখাদকদের বসতি গড়ে উঠেছিল।
০২১৬
বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রাচীন মানবের দেহাবশেষের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, আজ থেকে ১৫ হাজার বছর আগে ব্রিটেনে দুই ধরনের মানব প্রজাতি বাস করত। তাদের মধ্যে এক ধরনের মানুষ ছিল ক্যানিবাল বা নরখাদক। তারা মানুষের মাংস খেত।
০৩১৬
শুধু তা-ই নয়, মানুষ মেরে তাদের মাংস খাওয়ার পর মৃতের মাথার খুলি পাত্র হিসাবেও ব্যবহার করা হত। নরখাদকদের নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুর মধ্যে অন্যতম ছিল মাথার খুলি। এর একাধিক প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
০৪১৬
তবে ব্রিটেনে বাস করা প্রাচীন মানুষের দ্বিতীয় প্রজাতির মধ্যে এমন কোনও বর্বরতার নিদর্শন পাওয়া যায়নি, দাবি বিজ্ঞানীদের। তারা নরখাদক ছিল না।
০৫১৬
ব্রিটেনের সবচেয়ে প্রাচীন মানুষ হিসাবে এক পুরুষ এবং এক মহিলার দেহাবশেষের ডিএনএ পরীক্ষা করেন বিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই পুরুষ আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার বছর আগে এবং মহিলা প্রায় ১৫ হাজার বছর আগে ব্রিটেনে ছিলেন।
০৬১৬
মহিলার দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছে ব্রিটেনের মেন্দিপ পাহাড়ের গফ গুহায়। পুরুষের দেহাবশেষ মিলেছে উত্তর ওয়েলস্-এর কেন্ড্রিকস গুহায়। প্রাচীন এই দেহাবশেষ নরখাদক নিয়ে গবেষণায় আলো দেখিয়েছে। এত পুরনো সময়ের প্রামাণ্য তথ্য ব্রিটেনে খুব কমই আছে, দাবি বিশেষজ্ঞদের।
০৭১৬
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজ়িয়াম এবং ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের গবেষকরা প্রাচীন দেহাবশেষ পরীক্ষার পর নরখাদক সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য ‘নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন’ নামক পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন।
০৮১৬
বিজ্ঞানীদের দাবি, গফ গুহায় পাওয়া মহিলার দেহাবশেষে নরখাদকের বৈশিষ্ট্য পাওয়া গিয়েছে। সংলগ্ন এলাকায় যারা থাকত, তাদের সকলেরই খাদ্যাভ্যাসে ছিল মানুষের মাংস। এ ছাড়া হরিণ, ঘোড়া এবং ওই জাতীয় তৃণভোজী প্রাণীও খেত প্রাচীন মানুষ। শিকার ধরার জন্য ওঁত পেতে বসে থাকত তারা।
০৯১৬
কেন্ড্রিকস গুহায় প্রাপ্ত পুরুষের দেহাবশেষ থেকে অন্য প্রমাণ মিলেছে। সেই এলাকার মানুষ মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী প্রচুর পরিমাণে খেত বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। তবে মানুষের মাংস খাওয়ার প্রমাণ মেলেনি।
১০১৬
বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রাচীনকালে নরখাদকরা একেবারেই বিরল ছিল না। বরং আর পাঁচটা খাদ্যাভ্যাসের মতোই মানুষের মাংসও ছিল স্বাভাবিক এবং সুস্বাদু।
১১১৬
মূলত মানুষের দেহে পাথরের অস্ত্র দিয়ে আঘাত এবং তা দিয়ে মাংস কেটে নেওয়ার নিদর্শন থেকেই নরখাদকদের বিষয়ে এক প্রকার নিশ্চিত হয়েছেন গবেষকরা। অন্য পশুর আক্রমণের সঙ্গে এই আঘাতের চিহ্নের পার্থক্য রয়েছে।
১২১৬
প্রাচীন মানুষের হাড়গোড়ে অন্য মানুষের দাঁতের চিহ্নও পাওয়া গিয়েছে। গফ গুহায় শুধু ওই মহিলা নয়, আরও একাধিক প্রাচীন মানুষের হাড়গোড় মিলেছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। তাদের মধ্যে ৩ বছরের এক শিশুও রয়েছে। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই পাথরের আঘাত এবং মানুষের কামড়ের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
১৩১৬
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই সমস্ত প্রাচীন মানবের ক্ষেত্রেই কামড়ের নিদর্শন ছিল গলা বা ঘাড়ের নীচে। মাথার হাড়ে কামড়ের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে দাবি।
১৪১৬
গবেষণায় জানা গিয়েছে, প্রাচীন মানুষের দেহ থেকে চোখ, ঠোঁটের মতো যাবতীয় নরম অংশ পাথর দিয়ে কেটে কেটে বার করে নেওয়া হত। এগুলি অনেক ক্ষেত্রে প্রিয় খাদ্য হিসাবে বিবেচিত হত। এই নরম অঙ্গগুলির জন্য নরখাদকদের আগ্রহ ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি, দাবি গবেষণায়।
১৫১৬
বিজ্ঞানীরা এ-ও জানতে পেরেছেন, মানুষের মাংস খাওয়া প্রাচীন কালে এক দিকে যেমন মানুষের স্বভাবগত ছিল, অন্য দিকে তেমন বিভিন্ন রীতি-রেওয়াজের অঙ্গ হিসাবেও মানুষের মাংস খাওয়া হত।
১৬১৬
সম্প্রতি কেরলের এক দম্পতির বিরুদ্ধে নরমাংস খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যা কার্যত তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল দেশ জুড়ে। নরবলি দিয়ে সেই মাংস তাঁরা খেয়েছেন বলে অভিযোগ। আজকের ভারতে তা নিয়ে তোলপাড় হলেও হাজার হাজার বছর আগে এই খাদ্যাভ্যাস ছিল স্বাভাবিক এবং আবশ্যিক।