Saudi Arabia has ended 50 years long petrodollar deal with the US dgtl
US Saudi Arabia Petrodollar Deal
ডলারে আস্থা নেই, আমেরিকার সঙ্গে ৫০ বছরের চুক্তি বাতিল করল ধনী ‘বন্ধু’ দেশ! বিপদে ওয়াশিংটন?
১৯৭৪ সালে আমেরিকা এবং পশ্চিম এশিয়ার এক ধনী দেশের মধ্যে পেট্রোডলার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। গত ৯ জুন তার মেয়াদ শেষ হয়। নতুন করে ওই চুক্তি আর চালু করতে আগ্রহী নয় ওই দেশ।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৪ ০৭:৫০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ দশকের চুক্তি বাতিল করে দিল সৌদি আরব। সম্প্রতি ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছিল। সৌদি সরকার আর তার পুনর্নবীকরণ করেনি।
০২২১
দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে আমেরিকার সঙ্গে পেট্রোডলারের চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল সৌদি আরব। এই চুক্তি দুই দেশের অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তিকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করত।
০৩২১
১৯৭৪ সালের ৮ জুন আমেরিকা এবং সৌদি আরবের মধ্যে পেট্রোডলার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। গত ৯ জুন তার মেয়াদ ফুরিয়েছে। সেই চুক্তি নতুন করে চালু করতে আগ্রহী নয় সৌদি।
০৪২১
পেট্রোডলার চুক্তি নতুন করে চালু না হওয়ায় বিশ্ব বাণিজ্য এবং অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়তে চলেছে বলে মত অনেকের। বিশ্বে আমেরিকান ডলারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও এই চুক্তির ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
০৫২১
পেট্রোডলার চুক্তি কী? কেন তাতে আর আগ্রহ দেখাল না সৌদি? এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতির পরিচালনায় আমেরিকার কি সমস্যা হতে পারে?
০৬২১
পেট্রোডলার কোনও মুদ্রা নয়। পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেল রফতানির জন্য ব্যবহৃত আমেরিকান ডলারকেই পেট্রোডলার বলা হয়। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সোনা আদান-প্রদানের নীতি বাতিল করার পর পেট্রোডলার চালু করেছিল আমেরিকা।
০৭২১
সত্তরের দশকের শুরুর দিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে আমেরিকা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল। ডলারের দাম আচমকা পড়তে শুরু করেছিল। সেই সময়ে পেট্রোলিয়ামের সঙ্কটও দেখা দিয়েছিল আমেরিকা জুড়ে।
০৮২১
১৯৭৩ সালে মূলত মিশর এবং সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব দেশগুলি ইজ়রায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। ইয়োম-কিপ্পুর যুদ্ধে ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছিল আমেরিকা।
০৯২১
ইজ়রায়েলের পক্ষ নেওয়ায় খনিজ তেলের বাণিজ্যে আমেরিকার উপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে পশ্চিম এশিয়ার তেল উৎপাদনকারী দেশগুলি। তাতে তাদের খনিজ তেলের ভান্ডারে আরও টান পড়ে।
১০২১
এই সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে সৌদি আরবের সঙ্গে পেট্রোডলার চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ওয়াশিংটন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, সৌদির কাছ থেকে তেল কিনবে আমেরিকা। পরিবর্তে সৌদিকে তারা সামরিক সহায়তা দেবে।
১১২১
আমেরিকার কাছ থেকে সৌদি সামরিক সহায়তা পাওয়ায় ইজ়রায়েলের হাতে তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। চুক্তির শর্ত ছিল, সৌদি শুধু আমেরিকা নয়, অন্য যে দেশেই খনিজ তেল বিক্রি করবে, অর্থের লেনদেন হবে ডলারে।
১২২১
চুক্তিতে আরও বলা হয়েছিল, পেট্রোডলার থেকে যে রাজস্ব আদায় হচ্ছে, তা আমেরিকায় ফেরত পাঠাতে হবে সৌদিকে। এর মাধ্যমে এক দিকে যেমন সৌদি সামরিক সুরক্ষা পেয়েছিল, তেমনই আমেরিকা পেয়েছিল অর্থনৈতিক নিরাপত্তা।
১৩২১
পেট্রোডলার চুক্তি আর নতুন করে চালু না করায় এখন থেকে সৌদি শুধু ডলার নয়, অন্যান্য দেশের মুদ্রাতেও খনিজ তেল বিক্রি করতে পারবে। চিনের ইউয়ান, ইউরোপের ইউরো, রাশিয়ার রুবেল, জাপানের ইয়েন— কোনও লেনদেনেই সৌদির আর বাধা রইল না।
১৪২১
নির্দিষ্ট দেশের মুদ্রা তো বটেই, খনিজ তেলের ব্যবসা এর পর থেকে ডিজিটাল মাধ্যমে বিটকয়েনেও করতে পারবে সৌদি আরব। তেমন ভাবনাচিন্তাও রয়েছে।
১৫২১
সৌদির এই সিদ্ধান্তের ফলে আমেরিকা কিছুটা হলেও বিপাকে পড়তে চলেছে বলে অনেকের ধারণা। কারণ, এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের লেনদেন বেশ খানিকটা কমবে।
১৬২১
গত কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলার কিছুটা ‘ব্যাকফুটে’। একের পর এক দেশ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলার নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসছে বা আসার চেষ্টা করছে।
১৭২১
ডলারের বিকল্প হিসাবে এখনও পর্যন্ত কোনও একটি দেশের মুদ্রার নাম একক ভাবে উঠে আসেনি। ইউয়ান, রুবেল কিংবা ইয়েনের ব্যবহার পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। ওই মুদ্রাগুলির দামও বেড়েছে।
১৮২১
বিশ্ব বাণিজ্যকে এখনও নিয়ন্ত্রণ করে আমেরিকা। তার চাবিকাঠি হল ডলার। বেশির ভাগ লেনদেনের ক্ষেত্রেই সারা বিশ্বে আমেরিকার ডলার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মুদ্রার গুরুত্ব বেশি হওয়ায় আমেরিকার গুরুত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৯২১
সেই মুদ্রা থেকে একে একে ছোটবড় দেশগুলি মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইছে। এতে আগামী দিনে আমেরিকার অর্থনীতিতে নতুন কোনও সঙ্কট দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিপাকে পড়বে জো বাইডেনের দেশ।
২০২১
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ডলারকে আবার স্বমহিমায় ফেরাতে হলে আন্তর্জাতিক নীতিতে পরিবর্তন করতে হবে আমেরিকাকে। চিনের প্রাধান্যকে লঘু করার জন্য উদ্যোগী হতে হবে। কারণ আমেরিকার অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে চিন।
২১২১
সৌদির সিদ্ধান্তে আমেরিকার কোনও ক্ষতি হবে কি না, তা সময় বলবে। তবে ডলারের রাজত্ব আমেরিকা আবার ফেরাতে পারে কি না, তার জন্য তাকে কোন কোন ক্ষেত্রে নমনীয় হতে হয়, সেটাই এখন দেখার।