Santokben jadeja who became gangster after death of husband in Gujarat Porbbander dgtl
Santokben Jadeja
স্বামীকে খুনে অভিযুক্ত ১৪ জনকে হত্যা করান তিনি! একডাকে লোকে চিনত ‘গডমাদার’ নামে
আর পাঁচ জন নিম্নবিত্ত পরিবারের বধূর মতোই সংসার সামলাতেন। সেই সন্তকবেনই যে হয়ে উঠবেন ত্রাস, তা কে জানত! কী ভাবে হয়েছিলেন গ্যাংস্টার?
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৩ ১২:১৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
ছিলেন নিপাট বধূ। চার ছেলে আর সংসার সামলাতেন। ঘরের কাজকর্ম করতেন। আর পাঁচ জন নিম্নবিত্ত পরিবারের বধূর মতোই। সেই সন্তকবেন জাডেজাই যে এক দিন গ্যাংস্টার হয়ে উঠবেন, কেউ ভাবতেও পারেননি। আশি, নব্বইয়ের দশকে গোটা পোরবন্দরের রাশ নিজের হাতে নিয়েছিলেন সন্তোকবেন। ভোটে লড়ে বিধায়কও হয়েছিলেন। তবে কোনওটাই হয়তো স্বেচ্ছায় করেননি। তাঁকে নিয়ে ছবিও তৈরি হয়েছে বলিউডে। নাম ‘গডমাদার’। ছবিতে সন্তকবেনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শাবানা আজমি।
০২১৫
১৯৮৬ সাল পর্যন্ত নিজের বাড়ির বাইরে তেমন একটা পা দিতেন না সন্তকবেন। ঘরকন্যা করতেন। ছেলেদের লালনপালন করতেন। ওই বছর খুন হন সন্তকবেনের স্বামী সরমন মুঞ্জা জাডেজা।
০৩১৫
সরমন নিজেও গ্যাংয়ের সদস্য ছিলেন। বিপক্ষ গ্যাংয়ের সদস্যরাই খুন করে তাঁকে। চার ছেলেকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন সরমন। তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকেও খুনের হুমকি দিতে থাকেন অভিযুক্তেরা। সামনে আর কোনও পথ দেখতে পাননি সন্তকবেন। স্বামীর গ্যাংয়ের রাশ নিজের হাতে নেন। হয়ে ওঠেন ‘গডমাদার’।
০৪১৫
মৃত্যুর আগে একটি সাক্ষাৎকারে সন্তকবেন বলেছিলেন, ‘‘আমি এক জন মা। স্বামীর মৃত্যুর পর নিজের এবং সন্তানদের নিরাপত্তা চেয়েছিলাম। ওরা (গ্যাংয়ের সদস্যেরা) আমাদের হেনস্থা করছিল। নিজেদের বাঁচাতে যা করা দরকার, করেছিলাম।’’
০৫১৫
মনে করা হত, সন্তকবেনের গ্যাংয়ে ছিলেন অন্তত ১০০ জন অপরাধী। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় প্রায় ৫২৫টি মামলা দায়ের হয়েছিল। তার মধ্যে অন্তত ৯টি ছিল খোদ সন্তকবেনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে রয়েছে খুনের মামলা।
০৬১৫
আশির দশকে পোরবন্দরের কুটিয়ানা গ্রামের এক কাপড়ের কারখানায় কাজ করতেন সন্তকবেনের স্বামী সরমন। সে সময় কারখানার মালিক আর শ্রমিকদের মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকত। শ্রমিকদের জব্দ করার জন্য গুন্ডা ভাড়া করতেন কারখানার মালিকেরা। এ রকমই এক গুন্ডা দেবু ওয়াঘেরকে খুন করা হয়েছিল। সেই খুনে নাম জড়িয়েছিল সন্তকবেনের স্বামী সরমনের।
০৭১৫
এর পরই ক্ষমতা বাড়তে থাকে সরমনের। বেআইনি কাজ, এমনকি মাদক চোরাচালান শুরু করেন তিনি।
০৮১৫
১৯৮৬ সালে পোরবন্দরের মাফিয়া কালিয়া কেশবের হাতে খুন হন সরমন। তার পরেই গ্যাংয়ের মাথায় বসেন সন্তকবেন। স্বামীর খুনে অভিযুক্ত ১৪ জনকে খুন করান তিনি।
০৯১৫
তার পর থেকে পোরবন্দরের সব গ্যাংই বেশ সমীহ করে চলতে শুরু করে সন্তকবেনকে। তাঁর নাম হয় ‘গডমাদার’। পোরবন্দর তালুকের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জনতা দলের টিকিটে প্রার্থী হয়েছিলেন সন্তকবেন। ৩৫ হাজার ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন।
১০১৫
ওই সময় একের পর এক ব্যবসাতেও হাত দেন সন্তকবেন। পরিবহণ থেকে রিয়েল এস্টেট— একাধিক ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ১৯৯৫ সালে ফের বিধানসভা ভোটে প্রার্থীদের মনোনয়ন পেশ করেন। কিন্তু পরে তা তুলে নেন। কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন জানান সন্তকবেন।
১১১৫
১৯৯৬ সালে জেল হয় সন্তকের। খুনের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। ১৬ মাস জেলে ছিলেন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে রাজকোট চলে যান সন্তক। ২০০২ সালে সেখান থেকে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য মনোনয়ন পেশ করেন। শেষ পর্যন্ত আবারও কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়ে পিছু হটেন। যদিও সে বার কংগ্রেস প্রার্থী হেরে যান।
১২১৫
২০০৫ সালে এক বিজেপি কাউন্সিলরকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হন সন্তকবেন। তার পর ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে ফের শিরোনামে আসেন সন্তকবেন। ওই দুই বছর সন্তকবেনের দেওরের ছেলে এবং পুত্রবধূ খুন হন। সেই খুন নিয়ে আজও রহস্য রয়ে গিয়েছে।
১৩১৫
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে গ্যাংয়ের কাজকর্ম থেকে ক্রমেই দূরে সরতে থাকেন সন্তকবেন। তখন তাঁর জায়গায় বসেন ছেলে কান্ধল জাডেজা। তিনিও এনসিপির টিকিটে বিধায়ক হয়েছিলেন।
১৪১৫
২০১৩ সালে মৃত্যু হয় সন্তকবেনের। হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল তাঁর। অপরাধ জগতের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়েছিল বার বার। গ্যাং চালানোর অভিযোগও রয়েছে।
১৫১৫
যদিও সন্তকবেনের হাবেভাবে কখনও এ সব প্রকাশ পায়নি। বরং তাঁর কথাবার্তা, আচরণ ছিল মাতৃসুলভ। তাঁর ভক্ত, অনুগামীর সংখ্যাও নেহাত কম ছিল না। এ হেন সন্তকবেনের বিরুদ্ধে যে খুন, চোরাচালানের অভিযোগ উঠতে পারে, তা পোরবন্দরের অনেকেই এখনও বিশ্বাস করতে পারেন না।