Russian Laden Shamil Basayev eliminated by Moscow know about the Chechen warlord dgtl
Russian Laden
‘বুবি ট্র্যাপ’-এ খতম হন ‘রাশিয়ার বিন লাদেন’! ১৯ বছর আগের ঘটনা টেনে কী বার্তা দিতে চাইছে মস্কো?
১৯ বছর আগে ‘রাশিয়ার বিন লাদেন’ হিসাবে পরিচিত শামিল বাসায়েভকে ট্রাক বিস্ফোরণে নিকেশ করে মস্কোর গুপ্তচর বাহিনী। নতুন বছরে সেই চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার ছবি পোস্ট করে কী বার্তা দিচ্ছে ক্রেমলিন?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:২৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার নেতা ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে তাঁর তুলনা টেনেছিল রাশিয়া। শুধু তা-ই নয়, একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার করে মস্কোর সেনাকর্তাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য রুশ গুপ্তচরদের পাতা ফাঁদে ভবলীলা সাঙ্গ হয় তাঁর। ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালীন হঠাৎ করেই ১৯ বছরের পুরনো সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে গোটা দুনিয়াকে চমকে দিল ক্রেমলিন।
০২১৮
তিনি, চেচেন বিচ্ছিন্নবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর কম্যান্ডার শামিল সালমানোভিচ বাসায়েভ। ২০০৬ সালের ১০ জুলাই রহস্যজনক ভাবে একটি গাড়িবোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় তাঁর। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি তাঁর ছবি দিয়ে এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) একটি তাৎপর্যপূর্ণ পোস্ট করে রুশ সরকারি সংবাদ সংস্থা স্পুটনিক ইন্ডিয়া। সেখানে গায়ে কাঁটা দেওয়া ‘অপারেশন বাসায়েভ’-এর নেপথ্যে মস্কোর গুপ্তচর সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) ভূমিকার গুণকীর্তন করা হয়েছে।
০৩১৮
১৯৬৫ সালে দক্ষিণ-পূর্ব চেচনিয়ার দিশেন ভেদেনো গ্রামে শামিলের জন্ম হয়। রুশ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁর পরিবারের জড়িত থাকার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জীবনের প্রথম পর্বে রাশিয়ার ভলগোগ্রাদ এলাকার আকসাইস্কি প্রদেশের একটি খামারে কাজ করতেন তিনি।
০৪১৮
পড়াশোনায় অবশ্য বাসায়েভ দারুণ মেধাবী ছিলেন, এমনটা নয়। আইনের ডিগ্রি নিতে মস্কোর রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি। পরবর্তী কালে ১৯৮৭ সালে মস্কো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট অফ ল্যান্ড ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হন শামিল। কিন্তু খারাপ নম্বর পাওয়ায় সেখান থেকেও বিতাড়িত হন তিনি।
০৫১৮
১৯৯১ সালের নভেম্বরে চেচেন জাতীয়তাবাদী নেতা জোখার দুদায়েভ একতরফা ভাবে নবগঠিত রাশিয়ান ফেডারেশন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত একেবারেই মেনে নেয়নি মস্কো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই চেচেন এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বোরিস ইয়েলৎসিন। ফলে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় সেখানে।
০৬১৮
ঠিক এই সময়েই বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র বাহিনীর নেতা হিসাবে উঠে আসেন শামিল। সেখানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের পদ পান তিনি। ১৯৯৬ সালে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে রুশ সেনার থেকে রাজধানী গ্রোজ়নি পুনরুদ্ধার করে চেচেন বিদ্রোহীরা। রক্তক্ষয়ী সেই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাসায়েভ।
০৭১৮
রাশিয়ার উত্তর ককেসাস এলাকায় মস্কো বাহিনীর ত্রাস ছিলেন শামিল। গেরিলা যুদ্ধে রুশ ফৌজকে রীতিমতো নাস্তানাবুদ করে তোলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে অপহরণ, নির্বিচারে হত্যা এবং হাতিয়ারের চোরাচালানের মতো মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে। বাসারেভকে কট্টরপন্থী বলে উল্লেখ করেছে ক্রেমলিন।
০৮১৮
২০০৪ সালে বিমান হামলায় শামিলকে হত্যার চেষ্টা চালায় রুশ বায়ুসেনা। কিন্তু সেই অপারেশনে সাফল্য মেলেনি। শেষে ২০০৬ সালে একটি ট্রাক বিস্ফোরণে প্রাণ হারান তিনি। গুরুত্বপূর্ণ একটি অস্ত্র চুক্তির জন্য গোপন ডেরা থেকে বাইরে এসেছিলেন বাসায়েভ। সেই খবর পেয়েই ফাঁদ পাতেন রুশ গুপ্তচরেরা।
০৯১৮
মস্কোর সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, শামিলকে ওড়াতে ডিনামাইট ব্যবহার করেছিল এফএসবি। ‘কামাজ’ সেনা ট্রাকে ‘বুবি ট্র্যাপ’ পাতেন রুশ গুপ্তচরেরা। তাঁকে গুপ্ত ঘাঁটি থেকে বার করে আনতে বিপুল সংখ্যায় অস্ত্র পাচারের টোপও দিয়েছিলেন তাঁরা। উল্লেখ্য, সোভিয়েত আমলে রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থার নাম ছিল কেজিবি। এই সংগঠনের উত্তরসূরি হিসাবে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে আত্মপ্রকাশ করে এফএসবি।
১০১৮
বাসায়েভের মৃত্যুর পর বিবৃতি দিয়েছিল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেখানে বলা হয়, ‘‘আমাদের বিন লাদেনকে আমরা মৃত্যুলোকে পাঠাতে পেরেছি। এটা একটা যুগান্তকারী ঘটনা।’’ সূত্রের খবর, শামিলকে নিকেশ করতে ছ’মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন এফএসবির গুপ্তচরেরা। ঘটনাস্থল থেকে ১০টি পোড়া মৃতদেহ, কালাশনিকভ অ্যাসল্ট রাইফেলের ১০ হাজার রাউন্ড কার্তুজ এবং বেশ কয়েকটি রকেট প্রপেলড গ্রেনেড বা আরপিজি উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ।
১১১৮
রুশ সংবাদ সংস্থা তাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনার দিন বাসায়েভর সঙ্গে ছায়ার মতো মিশে ছিলেন এফএসবির এক এজেন্ট। এর জন্য তাঁকে পাঁচ লক্ষ ডলার দিয়েছিল মস্কো। প্রসঙ্গত, শামিলের মাথার দাম এক কোটি ডলার ধার্য করে ক্রেমলিন। নিজের চেহারা বদলাতে তিনি প্লাস্টিক সার্জারি করেছিলেন বলেও রুশ গুপ্তচরদের কাছে খবর ছিল।
১২১৮
১৯৯৯ সালে রাজধানী গ্রোজ়নি সংলগ্ন একটি জায়গায় বাসায়েভ এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের ঘিরে ফেলেছিল রুশ সেনা। কিন্তু তাঁদের চোখে ধূলো দিয়ে সেখান থেকে চম্পট দেন শামিল। ওই সময় ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে একটি পা হারান এই চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা।
১৩১৮
২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে বেসলান এলাকার একটি স্কুলে সন্ত্রাসী হামলা চালায় শামিলের সশস্ত্রী গোষ্ঠী। সেখানে অনেককে আটকে রেখেছিলেন তাঁরা। পরে অবশ্য কম্যান্ডো অপারেশন চালিয়ে স্কুলটিকে দখলমুক্ত করে রুশ সেনা। ঘটনায় প্রাণ হারান ৩৩০ জন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন সাধারণ নাগরিক।
১৪১৮
রুশ গুপ্তচরদের পাতা ফাঁদে বাসায়েভের মৃত্যুর পরেও উত্তর ককেসাস এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। রাশিয়ার আধিপত্যকে যে ভাবে তিনি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, তা আর কেউ পারেননি। আর তাই শামিলকে মরণোত্তর ‘জেনারেলসিমো’র সম্মান দেয় সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠী।
১৫১৮
বাসায়েভপন্থীদের একাংশ আবার তাঁর মৃত্যুতে রুশ গুপ্তচরদের হাত থাকার কথা মানতে নারাজ। ট্রাক বিস্ফোরণকে দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন তাঁরা। শামিলের মৃতদেহ অবশ্য অতি গোপনে সমাধিস্থ করে রুশ সেনা। শেষকৃত্যের সময়ে তাঁর পরিবার বা ঘনিষ্ঠদের সেখানে থাকার অনুমতি দেয়নি মস্কো।
১৬১৮
রুশ সংবাদ সংস্থা ‘কমোসমোলস্কায়া প্রাভদা’ অবশ্য দাবি করেছিল, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শামিল বাসায়েভকে নিকেশ করেছে ক্রেমলিন। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ সেই তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছিল। তাঁদের দেওয়া ফরেন্সিক রিপোর্টে অনুযায়ী, ট্রাক বিস্ফোরণেই প্রাণ হারান ওই চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা।
১৭১৮
এ ব্যাপারে মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানায়, মৃতদেহগুলির মধ্যে কৃত্রিম পায়ের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে। ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে পা হারানোর পর থেকে যেটি নিয়মিত ব্যবহার করতেন শামিল বাসায়েভ।
১৮১৮
এ-হেন ‘রুশ বিন লাদেনে’র মৃত্যুর ১৯ বছরের মাথায় হঠাৎ কেন তাঁর ছবি পোস্ট করল মস্কোর সরকারি সংবাদ সংস্থা? তবে কি আর কারও শামিল বাসায়েভের পরিণতি হতে চলেছে? বড় কোনও রাষ্ট্রনেতা না কি জঙ্গি নেতাকে এ বার নিকেশ করবে ক্রেমলিন? এই নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।