Russia using cyber weapon through Dark Web in Ukraine war big concern for West and US dgtl
Russian Cyber Weapon
‘কালাজাদু’র কালো জাল! রুশ হ্যাকারদের কানা গলিতে আটকে প্রতিবেশী, বিশ্ব জুড়ে থরহরি কম্প
ইউক্রেন যুদ্ধে জয় নিশ্চিত করতে সাইবার যোদ্ধাদের কাজ লাগিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁদের সাহায্যে হাঁড়ির খবর জেনে নিয়ে শত্রুর উপর ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ শানাচ্ছেন মস্কোর জেনারেলরা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
‘কালো ওয়েব’-এর কালাজাদু! যার জিয়নকাঠিতে দুর্ধর্ষ দুশমনেরও দফারফা! ঘরে বসেই মিলছে শত্রু শিবিরের হাঁড়ির খবর। শুধু কি তাই? সামান্য হাত ঘোরালেই ব্যাঙ্কিং থেকে ফৌজি সফ্টঅয়্যারের যাবতীয় তথ্য গায়েব! ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে রুশ হ্যাকারদের দাপটে রীতিমতো নাজেহাল পশ্চিমি দুনিয়া-সহ গোটা বিশ্ব।
০২১৮
দু’বছর পেরিয়ে চলা যুদ্ধে গোটা ইউক্রেনকে ‘গিলতে’ মরিয়া রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর তাই যত সময় গড়াচ্ছে, ততই সাইবার আক্রমণের ঝাঁজ বাড়াচ্ছেন তিনি। হ্যাকার হানায় তথ্য হাতিয়ে নিয়ে কৌশলগত এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করছে তাঁর ফৌজ। এর পর ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের নিখুঁত নিশানায় ওই এলাকাগুলিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে মস্কো।
০৩১৮
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, মস্কো-কিভ সংঘর্ষের মোড় ঘোরাচ্ছে ডার্ক ওয়েবের ব্যবহার। এর সাহায্যে ক্রমাগত সাইবার আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিশেষ হ্যাকার বাহিনী। এই দিক থেকে আমেরিকা-সহ পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির থেকে ক্রেমলিন যে কয়েক যোজন এগিয়ে রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
০৪১৮
চলতি বছরে ইউক্রেনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে রুশ সাইবার হামলার দাপটকে কেন্দ্র করে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টেক সংস্থা ‘সাইবার দিয়া’। তাঁদের রিপোর্ট অনুযায়ী, রণাঙ্গনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামকে হাইব্রিড লড়াইয়ে পরিণত করেছে মস্কো। এর সাহায্যে শত্রুর যাবতীয় রণকৌশলকে ভোঁতা করে ফেলছে পুতিনের হ্যাকার ফৌজ।
০৫১৮
‘সাইবার দিয়া’র দাবি, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রথম দিকে সাইবার বাহিনীকে সে ভাবে ব্যবহার করেননি রুশ জেনারেলরা। প্রথাগত পদ্ধতিতেই কামান-বন্দুক-ট্যাঙ্কের লড়াই চালাচ্ছিলেন তাঁরা। পাশাপাশি জোর দেওয়া হয় বিমানহানার উপর। ফলে রুশ যুদ্ধবিমান এবং বোমারু বিমানগুলি একরকম দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করে ইউক্রেনের একাধিক শহরের আকাশে।
০৬১৮
কিন্তু, আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলির থেকে অত্যাধুনিক হাতিয়ার পেয়ে যাওয়ায় পাল্টা প্রত্যাঘাত শানায় কিভের সেনা। তাঁদের জোরালো প্রতিআক্রমণে ভয়ঙ্কর আকার নেয় যুদ্ধ। রণক্ষেত্রে বাড়তে থাকে রুশ সৈনিকদের মৃত্যুহার। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পেরে যুদ্ধ কৌশলে বদল আনেন মস্কোর জেনারেলরা। প্রথাগত হাতিয়ারের পাশাপাশি ময়দানে নামেন ‘অন্ধকার ওয়েব’-এর গলিঘুঁজির খোঁজ রাখা হ্যাকারেরা।
০৭১৮
টেক সংস্থা ‘সাইবার দিয়া’ জানিয়েছে, এ বছরের গোড়া থেকেই সুসংহত সাইবার আক্রমণ শুরু করেন রুশ তথ্যপ্রযুক্তি প্রকৌশলীরা। এর ফলও মিলছে হাতেনাতে। হ্যাকারেরা তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার পর সুনির্দিষ্ট জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ দিতে পারছেন মস্কোর পদস্থ সেনাকর্তারা। এতে এক দিকে যেমন ইউক্রেনের লোকসান হচ্ছে বেশি, অন্য দিকে তেমনই নিজেদের সৈনিক হারানোর প্রবণতা কমাতে পেরেছে রাশিয়া।
০৮১৮
সূত্রের খবর, সাধারণত হ্যাকার হামলার ১৫ থেকে ২০ দিনের মাথায় কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইউক্রেনীয় শহরগুলিকে নিশানা করছে পুতিন ফৌজ। কখনও কখনও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার আগে সাইবার আক্রমণে ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’র (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) সফ্টঅয়্যারকে পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলছে মস্কো। ফলে প্রয়োজনের সময়ে একরকম অকেজো হয়ে পড়ছে সেগুলি।
০৯১৮
গোয়েন্দাদের দাবি, ক্রেমলিনের হ্যাকার বাহিনীর মূলত ছ’টি শাখা হয়েছে। সেগুলি হল ড্রাগনফ্লাই, গ্যামারেডন, এটিপি২৯ (কোজ়ি বেয়ার), এটিপি২৮ (ফ্যান্সি বেয়ার), স্যান্ডওয়ার্ম এবং টেম্প ডট ভেলেস। এদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
১০১৮
ড্রাগনফ্লাইয়ের কাজ হল ডার্ক ওয়েবকে ব্যবহার করে শত্রুর হাঁড়ির খবর জোগাড় করা। রুশ গুপ্তচর সংস্থা কেজিবির উত্তরসূরি ‘ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস অফ রাশিয়ান ফেডারেশন’ বা এফএসবির অধীনে থেকে কাজ করেন ড্রাগনফ্লাইয়ের হ্যাকারেরা। এর কোড নম্বর ৭১৩৩০৫। মূলত শত্রুর প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত তথ্য জোগাড়ের কাজ করে এই বাহিনী।
১১১৮
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কিভের সেনাবাহিনীর উপর নজরদারির কাজ করে গ্যামারেডনের হ্যাকারেরা। এটিও এফএসবির নিয়ন্ত্রণাধীন বাহিনী। ইউক্রেনের জেনারেলদের যাবতীয় রণকৌশল ফাঁসের নেপথ্যে বড় ভূমিকা রয়েছে গ্যামারেডনের সাইবার যোদ্ধাদের। কোন রণাঙ্গনে কিভ কত সেনা মোতায়েন করেছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হদিস দিয়েছেন তাঁরা।
১২১৮
শত্রু দেশের উপর চরবৃত্তির জন্য ক্রেমলিনের আর একটি সংস্থা রয়েছে। তার নাম, ‘স্লুজ়বা ভনেশনি রাজভেদকি’ বা এসভিআর। এর অধীনে কাজ করে এটিপি২৯ (কোজ়ি বেয়ার)। এই হ্যাকার বাহিনীর কাজ হল বিদেশের বেসরকারি সংস্থাগুলির উপর নজরদারি। শেয়ার বাজারের তথ্য হাতানো থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য— অর্থনৈতিক দিক থেকে কাউকে পঙ্গু করার খবর জোগাড়ে এর জুড়ি মেলা ভার।
১৩১৮
রুশ সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখার নাম ‘জিআরইউ’। তাঁরা আবার আলাদা করে নিয়ন্ত্রণ করে এটিপি২৮ (ফ্যান্সি বেয়ার)-কে। শত্রু সেনার তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলির উপরেও নজর রাখেন এই বাহিনীর সাইবার যোদ্ধারা। প্রয়োজনে শত্রু রাষ্ট্রের সরকার ফেলার মতো ঝুঁকি নিতেও তাঁরা প্রস্তুত থাকেন সর্বদাই।
১৪১৮
জিআরইউয়ের আর্থিক হ্যাকার বাহিনী হল স্যান্ডওয়ার্ম। র্যামসামঅয়্যার-সহ বিভিন্ন ধরনের সাইবার হামলা চালিয়ে বিশ্বের যে কোনও ব্যাঙ্কের তহবিল থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তাঁদের। গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী হাজার কোটি ডলার রাতারাতি গায়েব করে দিয়েছে পুতিনের স্নেহভাজন স্যান্ডওয়ার্ম দলের সদস্যেরা।
১৫১৮
অন্য দিকে, ট্রিটন ম্যালঅয়্যার তৈরি করেছে রুশ সাইবার যোদ্ধাদের টেম্প ডট ভেলেস বাহিনী। এর সাহায্যে শত্রু দেশের শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঘরে বসেই গুঁড়িয়ে দিতে পেরেছে মস্কো। দুর্বল হয়েছে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির নিরাপত্তাও।
১৬১৮
সম্প্রতি রুশভাষী র্যানসমঅয়্যার গ্রুপের সদস্য অ্যালেক্স হার্ন কিলিনকে চিহ্নিত করে ‘দ্য গার্ডিয়ান’। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটিকে তিনি বলেন, ‘‘ইউক্রেনের রণাঙ্গনে আমাদের হাজার হাজার সৈনিকের মৃত্যু হয়েছে। এর প্রতিশোধ আমরা নেবই। এই চক্রান্তের যাঁরা মাথা, তাঁদের কেউ বাঁচতে পারবেন না।’’ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাত মাস পর তিনি পুরোমাত্রায় হ্যাকিংয়ে মন দেন বলে জানা গিয়েছে।
১৭১৮
রুশ ডার্ক ওয়েবের সাইবার আক্রমণ যে কতটা ভয়ঙ্কর, এ বছরের ১৯ জুন তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ব্রিটিশ স্বাস্থ্য দফতর। রুশ ম্যালঅয়্যার সেখানকার ওয়েবসাইটকে পুরোপুরি অকেজো করে দেয়। বাধ্য হয়ে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত পিছোতে হয়েছিল চিকিৎসকদের। রাতারাতি সারা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
১৮১৮
সাইবার বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, আগামী দিনে আমেরিকায় বড় ধরনের হ্যাকার হামলা চালাতে পারে মস্কো। সেই লক্ষ্যে সাইবার যোদ্ধাদের তৈরি করছে ক্রেমলিন। শেষ পর্যন্ত মস্কোর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘ঠান্ডা লড়াই’ পরবর্তী কালে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ বহু গুণ চড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা।