গত ৮ মাস ধরে ইউক্রেনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর খেরসন ছিল রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু সম্প্রতি তাঁরা পিছু হঠে। গত শুক্রবার রাশিয়া খেরসন থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করে।
সংবাদ সংস্থা
খেরসন (ইউক্রেন)শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২২ ১১:১০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
এক টানা ৮ মাস দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের সুফল। রাশিয়ার সৈন্যদের হঠিয়ে ইউক্রেনের বন্দর শহর খেরসন পুনর্দখল করেছে কিভের বাহিনী।
০২২০
কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরের প্রতি ইঞ্চিতে এখনও দগদগে লড়াইয়ের ক্ষত। জল নেই, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, এমনকি পাওয়া যাচ্ছে না ইন্টারনেট সংযোগও।
০৩২০
তাতেও ‘ডোন্ট কেয়ার’ খেরসনবাসী পথে নেমে উচ্ছ্বাসে মাতছেন। স্বাধীনতা উদ্যাপন করছেন জাতীয় পতাকা উড়িয়ে, গলা ফাটিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে।
০৪২০
ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’র শুরুতেই খেরসনের দখল নিয়ে নেয় রুশ বাহিনী। তার পর থেকে একটানা মস্কোর দখলেই ছিল খেরসন।
০৫২০
কিন্তু সম্প্রতি ইউক্রেনীয় প্রত্যাঘাতের মুখে পিছু হঠেছে পুতিনের বাহিনী। গত ৮ মাস ধরে পরাধীনতার বেড়ি পরানো খেরসনবাসী তাই আজ বাঁধনহারা।
০৬২০
শহরের যে সব বড় বড় বিল্ডিং এখনও অক্ষত, তাঁরা সেখানে উঠে উড়িয়ে দিচ্ছেন জাতীয় পতাকা। গোটা শহরে জল-বিদ্যুৎ-ইন্টারনেট সংযোগ, কিছুই নেই।
০৭২০
কিন্তু তাকে ‘কুছ পরোয়া নেই’ বলে পথে যেন ঢল নেমেছে মানুষের। প্রত্যেকেই আত্মহারা। স্বাধীনতার স্বাদ তাঁদের জিভে, ঠোঁটে, গায়ে।
০৮২০
‘স্বাধীন’ খেরসনে ঢোকার পর প্রথম যে দৃশ্য দেখে চমকে উঠছেন বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা। যেখানে ইউক্রেনের সেনাকে বীরের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে গলিতে গলিতে।
০৯২০
রাজপথে বাহিনীকে কাঁধে তুলে চলছে উচ্ছ্বাস প্রকাশ। জাতীয় পতাকায় সেনাদের সই নিয়ে তা উড়ছে মানুষের হাতে হাতে। যুদ্ধবিধ্বস্ত খেরসনে দুঃখ পিছনে ফেলে চলছে নতুনের জয়গান।
১০২০
খেরসনের বাসিন্দা মধ্যবয়স্ক ওলগা আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, ‘‘আমরা রাশিয়ার সেনাকে নিয়ে সর্বক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতাম। মনে হত, এই বুঝি দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পাবো। খুলে দেখব, দাঁড়িয়ে আছে সাক্ষাৎ যমদূত!’’
১১২০
শহরের বাসিন্দা রবার্টসনের কথায়, ‘‘এখানে সবাই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। পার্কে পার্কে চলছে আনন্দ করা। ইউক্রেনীয়রা প্রাণ ঢেলে ভালবাসছে দেশের সেনাকে। যেখানেই তাঁদের দেখা মিলছে, সবাই চাইছে এক বার বুকে জড়িয়ে ধরতে। স্বাধীন হয়ে যে এত আনন্দ, আগে জানতে পারিনি।’’
১২২০
শহরের বাসিন্দা ক্যাটরিনা বলছেন, ‘‘আমরা এতটাই ভয়ে ভয়ে ছিলাম যে আয়নায় মুখ পর্যন্ত দেখতে ভয় হত। রাশিয়ার সেনা আমাদের উপর যা অত্যাচার চালিয়েছে, তা ভোলার নয়। কিন্তু আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি, আমরা রাশিয়ার সেনাকেও ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পারি।’’
১৩২০
গত শুক্রবার, খেরসন থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করে মস্কো। প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্স্কির অনুগত বাহিনীর গেরিলা আক্রমণের মুখে পিছু হঠতে বাধ্য হয় রুশ সেনা। যাকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এত বড় ধাক্কা মস্কো আগে খায়নি বলেই মনে করা হচ্ছে।
১৪২০
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী নতুন করে দখল নেওয়ার পর ১০ মাস ধরে রুশ সেনাবাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া খেরসনবাসীদের শুক্রবার শহরের রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাস করতে দেখা গিয়েছে।
১৫২০
ইউক্রেন সেনাদের আলিঙ্গন এবং তাঁদের সঙ্গে নিজস্বী তুলে উল্লাস করতে দেখা যায় খেরসনবাসীদের। শহরের বিভিন্ন বাড়িতে ইউক্রেনের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
১৬২০
মনে করা হয়, ইউক্রেনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর খেরসন। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর প্রথম দিকেই এই বন্দর শহরের দখল নেয় রুশবাহিনী। ইউক্রেনের উপর ক্রমাগত চাপ বৃদ্ধির জন্যও রাশিয়ার এই শহরের উপর দখল রাখা প্রয়োজনীয় ছিল।
১৭২০
কিন্তু সম্প্রতি ইউক্রেন সেনার ধারাবাহিক হামলার মুখে খেরসন অঞ্চলে নিপ্রো নদীর পশ্চিম তীর থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় রাশিয়া।
১৮২০
খেরসন ছাড়া আশপাশের এলাকাগুলি থেকেও পিছু হটেছে রুশ সেনা। আর এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উল্লাসে মাততে দেখা গেল খেরসনকে।
১৯২০
খারকিভ থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময় রুশ সেনারা বিপুল পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম পেছনে ফেলে এসেছিলেন। সেই ভুল যেন আর না হয়, সে দিকে খেয়াল রেখে রাশিয়া এ বার এগিয়েছে বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।
২০২০
খেরসন শহর-সহ নিপ্রো নদীর পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে নদীটির পূর্ব তীরে নিজেদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করেছে মস্কো। সেখানেই রুশ সেনা বর্তমানে অবস্থান করছে বলে মনে করা হচ্ছে।