Russia says it will make changes to the nuclear doctrine dgtl
Russian Nuclear Doctrine
পরমাণু নীতিতে বদল আনছে রাশিয়া, গোপন রাখা হবে নির্দেশিকাও! চিন্তা বাড়ছে আমেরিকা, ইউক্রেনের
দেশের পরমাণু নীতিতে পরিবর্তন আনতে চলেছে রাশিয়া। তেমনটাই জানিয়েছে সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:০৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
দেশের পরমাণু নীতিতে পরিবর্তন আনতে চলেছে রাশিয়া। তেমনটাই জানিয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ। কোনও দেশের পরমাণু নীতিতে লেখা থাকে যে, কোন পরিস্থিতিতে একটি দেশ পরমাণু হামলা চালাবে। সেই নির্দেশিকাতেই পরিবর্তন আনা হবে বলে রাশিয়া জানিয়েছে।
০২১৮
এর পরেই আন্তর্জাতিক মহলে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে। রাশিয়ার নতুন পরমাণু নির্দেশিকায় কী বলা হয়েছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
০৩১৮
পুরো বিষয়টি বোঝার আগে জেনে নেওয়া প্রয়োজন বর্তমানে রাশিয়ার পরমাণু নির্দেশিকায় কী বলা হয়েছে।
০৪১৮
বর্তমানে রাশিয়ার যে পরমাণু নির্দেশিকা রয়েছে, তা ২০২০ সালের জুন মাসে জারি করেছিলেন পুতিন। ছয় পৃষ্ঠার সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, রাশিয়া বা তার বন্ধু দেশগুলির বিরুদ্ধে আগ্রাসনের ক্ষেত্রে পরমাণু অস্ত্র বা অন্য কোনও গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করা হলে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ রাশিয়াও পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহার করার কারণে যদি সে দেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে, সে ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হতে পারে পরমাণু অস্ত্র।
০৫১৮
যে হেতু কী ধরনের হুমকিতে রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে তার স্পষ্ট উল্লেখ নেই, তাই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সংঘাতের আবহে বিভিন্ন রকম জল্পনা তৈরি হয়েছিল।
০৬১৮
যুদ্ধ শুরুর সময় পশ্চিমের দেশগুলি ইউক্রেনের সাহায্যে এগিয়ে আসার সময় অনেকে মনে করছিলেন, যে কোনও সময় পরমাণু হামলা চালাতে পারে রাশিয়া।
০৭১৮
কেন রাশিয়া এখন পারমাণবিক মতবাদ পরিবর্তন করতে চায়? পুতিনের অস্ত্রভান্ডারের মূল রক্ষী তথা উপবিদেশমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ রবিবার বলেছেন, ‘‘পুরো বিষয়টি আমাদের পশ্চিমি প্রতিপক্ষের শক্তিবৃদ্ধির সঙ্গে এবং ইউক্রেন সংঘাতের সঙ্গে সম্পর্কিত।’’
০৮১৮
যদিও নির্দিষ্ট কোনও ঘটনার উল্লেখ করেননি রিয়াবকভ। উল্লেখ্য, গত এক বছর ধরেই রাশিয়ার পরমাণু নির্দেশিকা নিয়ে আলোচনা চলছে সরকারি কর্তাদের মধ্যে। সেই আলোচনার রেশ পৌঁছেছে জনসাধারণের মধ্যেও।
০৯১৮
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাকরঁ মন্তব্য করেছিলেন, ইউক্রেন নেটো জোটের অংশীদার না হওয়া সত্ত্বেও সাহায্যের জন্য সে দেশে সরাসরি বাহিনী পাঠাতে পারে পশ্চিমি দেশগুলি। এর পরেই পরমাণু নির্দেশিকা বদলানো নিয়ে আলোচনা তীব্রতর হয়।
১০১৮
সেই সময় রাশিয়ার বিদেশ নীতি বিশেষজ্ঞ সের্গেই কারাগানভ দাবি তুলেছিলেন, প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে, ভয় দেখাতে এবং শান্ত করতে রাশিয়ার উচিত পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশিকায় বদল আনা। ইউক্রেনকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দেওয়া দেশগুলিকেও ‘টার্গেট’ করার নিদান দেন তিনি।
১১১৮
২০২৩ সালের জুনে কারাগানভ লিখেছিলেন, ‘‘৭৫ বছরের আপেক্ষিক শান্তিতে মানুষ যুদ্ধের ভয়াবহতা ভুলে গিয়েছে। এমনকি, পরমাণু অস্ত্রকেও ভয় করা বন্ধ করে দিয়েছে। সেই ভয় ফিরিয়ে আনা দরকার।’’
১২১৮
কারাগানভের যুক্তি ছিল, রাশিয়ার শত্রুদের জানা দরকার যে মস্কো প্রস্তুত। এমনকি, পরমাণু যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুত রাশিয়া। তিনি আরও দাবি করেন, রাশিয়া যদি ইউরোপে পরমাণু হামলা চালায়, তা হলে আমেরিকা নাক গলাতে পারে। এবং সে ক্ষেত্রে সরাসরি পরমাণু সংঘাত শুরু হতে পারে দুই শক্তিধরের।
১৩১৮
এর পর আবার এ বছরের জুনে রাশিয়ার আইনসভার প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান জানিয়েছিলেন, পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কমিয়ে দিতে পারে মস্কো। হুমকি বাড়ছে মনে হলে রাশিয়া আরও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
১৪১৮
এই নিয়ে অনেক দিন ধরে চলতে থাকা জল্পনার মধ্যেই এ বার পরমাণু নির্দেশিকা বদলানোর কথা জানাল রাশিয়া। গত ৭ জুন সেন্ট পিটার্সবার্গ ইকোনমিক ফোরামে একটি আলোচনায় পুতিন মন্তব্য করেন যে, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জয় নিশ্চিত করতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের দরকার নেই রাশিয়ার। তবে পরমাণু নির্দেশিকায় বদল আনা যেতেই পারে।
১৫১৮
রাশিয়ার প্রাক্তন কূটনীতিবিদ নিকোলাই সোকভের দাবি, ‘‘পরমাণু নির্দেশিকা বদলের উদ্দেশ্য হবে পশ্চিমি দেশগুলোর কাছে এই বার্তা পাঠানো যে, আমাদের পরমাণু অস্ত্র সম্পর্কে ভুলবেন না। খুব, খুব সতর্ক থাকুন।’’
১৬১৮
পাশাপাশি সোকভ এ-ও জানিয়েছেন, রাশিয়া পরমাণু নির্দেশিকায় বদল আনলেও তা গোপন রাখা হবে।
১৭১৮
উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের আবহে আমেরিকা এবং বাকি নেটো দেশগুলি ইউক্রেনে সরাসরি সেনা না পাঠালেও তারা এমন ভাবে সামরিক সহায়তা পাঠিয়েছে যা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল মস্কো।
১৮১৮
তাই এ বার মস্কো নিজেদের পরমাণু নীতিতে বদল আনার কথা জানানোয় জল্পনা তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।