Russia becomes high income country despite being sanctioned in several ways by the West dgtl
Russian Economy
আমেরিকার চোখরাঙানিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে উচ্চ আয়ের দেশ হল রাশিয়া! যুদ্ধের মাঝেও বাজিমাত পুতিনের
কোনও দেশের নাগরিকদের রোজগারের ভিত্তিতে প্রতি বছর একটি তালিকা প্রস্তুত করে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। সম্প্রতি সেই তালিকায় এক ধাপ উঠে এসেছে রাশিয়া। তারা এখন উচ্চ আয়সম্পন্ন দেশ।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪ ০৯:৫৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৬
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। আনুষ্ঠানিক ভাবে ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা। সেই থেকে যুদ্ধ চলছে পূর্ব ইউরোপে। মৃত্যু হয়েছে হাজার হাজার মানুষের।
০২২৬
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের এই যুদ্ধের মাঝে অনেক পালাবদল ঘটে গিয়েছে। দু’বছরে শুরু হয়েছে আরও এক যুদ্ধ। পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ চলছে ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে।
০৩২৬
দুই যুদ্ধের কোপ পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বহু প্রাণহানির পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি, বাণিজ্যে বাধা প্রভৃতি নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে।
০৪২৬
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করার পর রাশিয়ার তীব্র সমালোচনা করেছিল পশ্চিমি দুনিয়া। এমনকি, রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফেও যুদ্ধের নিন্দা করা হয়েছিল। রাশিয়ার উপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল আমেরিকা।
০৫২৬
আমেরিকা তার বন্ধু দেশগুলিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছিল ইউক্রেন যুদ্ধের পর। যুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করলেও রাশিয়াকে ‘শাস্তি’ দিতে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।
০৬২৬
আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার পর অনেক দেশই রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক থেকে সরে আসে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ধাক্কা খায় ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ। ভারতের মতো নিরপেক্ষ দেশগুলি অবশ্য তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
০৭২৬
যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়ার বাণিজ্যের পরিসর অনেক ছোট হয়ে এসেছে। যুদ্ধের আলাদা ব্যয়ও বহন করতে হয়েছে তাদের। এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশটি ক্ষতির মুখোমুখি হবে, এমনটাই ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সম্প্রতি বাজিমাত করেছেন পুতিন।
০৮২৬
বিশ্ব ব্যাঙ্কের তালিকায় উচ্চ আয়সম্পন্ন দেশ হিসাবে উঠে এসেছে রাশিয়া। এত দিন ওই তালিকায় তারা ছিল উচ্চ-মধ্য আয়সম্পন্ন হিসাবে। সম্প্রতি এক ধাপ উন্নতি হয়েছে পুতিনের দেশের। যা দেখে বিস্মিত অনেকেই।
০৯২৬
কোনও দেশের নাগরিকদের রোজগারের ভিত্তিতে প্রতি বছর একটি তালিকা প্রস্তুত করে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। এক এক জনের বার্ষিক গড় রোজগার দেখা হয় এই তালিকা প্রস্তুত করার সময়ে। তাতেই রাশিয়ার এই উত্থান নজর কেড়েছে।
১০২৬
বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই তালিকার জন্য বিশ্বের সমস্ত দেশকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে— উচ্চ আয়সম্পন্ন দেশ, উচ্চ-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশ, নিম্ন-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশ এবং নিম্ন আয়সম্পন্ন দেশ।
১১২৬
যে দেশের এক জন সাধারণ নাগরিক সারা বছরে গড়ে ৯৫,৫৫০ টাকা বা তার কম (১১৪৫ ডলারের কম) রোজগার করেন, সেই দেশকে নিম্ন আয়সম্পন্ন দেশের তালিকায় রাখা হয়।
১২২৬
৯৫ হাজার টাকা থেকে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত কোনও দেশের এক জন নাগরিকের বার্ষিক গড় আয় হলে, সেই দেশ বিশ্ব ব্যাঙ্কের বিচারে হয় নিম্ন-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশ।
১৩২৬
কোনও দেশের নাগরিকদের বার্ষিক গড় আয় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা থেকে ১১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা হলে, সেই দেশকে বলা হয় উচ্চ-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশ।
১৪২৬
যে দেশের প্রত্যেক নাগরিক সারা বছরে ন্যূনতম ১২ লক্ষ টাকা আয় করেন, সেই দেশগুলিকে উচ্চ আয়সম্পন্ন দেশের তালিকায় রাখে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। রাশিয়ার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।
১৫২৬
বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই তালিকায় বর্তমানে নিম্ন-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশ ভারত। প্রথমে তারা নিম্ন আয়সম্পন্ন দেশের তালিকায় ছিল। ২০০৬ সালের পর থেকে বিশ্ব ব্যাঙ্কের তালিকায় ভারত এক ধাপ উত্তীর্ণ হয়েছে।
১৬২৬
যদিও পরের ধাপে অর্থাৎ, উচ্চ-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশের তালিকায় এখনও পৌঁছতে পারেনি ভারত। সার্বিক ভাবে দেশের অর্থনীতির উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আয় সে ভাবে বাড়েনি।
১৭২৬
উল্লেখ্য, নব্বইয়ের দশকে চিনও ভারতের মতোই নিম্ন আয়সম্পন্ন দেশের তালিকায় ছিল। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই তারা উচ্চ-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
১৮২৬
একই অগ্রগতি দেখা গিয়েছে রাশিয়ার ক্ষেত্রেও। শত বাধা সত্ত্বেও তাদের দমিয়ে রাখা যায়নি। উচ্চ-মধ্য থেকে উচ্চ আয়সম্পন্ন দেশে পরিণত হয়েছে পুতিনের দেশ।
১৯২৬
কী ভাবে এই পর্যায়ে উঠে এল রাশিয়া? পুতিন সরকারের নীতিকেই এর জন্য কৃতিত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, যুদ্ধের আবহেও বুদ্ধি করে দেশ চালিয়েছেন পুতিন।
২০২৬
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, রাশিয়ার গ্রামগঞ্জে এত দিন প্রচুর পরিমাণে বেকার কিংবা কম রোজগারসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাঁদের জীবন বদলে গিয়েছে।
২১২৬
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দরিদ্র কিংবা বেকারদের চিহ্নিত করেছে পুতিনের সরকার। তাঁদের মধ্যে যাঁরা সক্ষম, তাঁদের যুদ্ধে নিয়োগ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর জন্য বিপুল খরচ করেছে রাশিয়া।
২২২৬
সামরিক খাতে সরকারের এই ব্যয় রাশিয়াকে অর্থনীতির দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। কারণ, তাতে সাধারণ নাগরিকের রোজগার বেড়েছে। রাশিয়ান সেনার একটা বড় অংশ বিপুল বেতন পেয়ে থাকেন।
২৩২৬
সাধারণ মানুষকে সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করার ফলে আচমকা দেশের নাগরিকদের রোজগার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বিশ্ব ব্যাঙ্কের তালিকাতেও এক লাফে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে পুতিনের দেশ।
২৪২৬
তবে এ বার রাশিয়ায় ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে মনে করছেন অনেকে। নাগরিকদের হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়ার পর সেই টাকা এ বার করের মাধ্যমে তুলতে হবে পুতিনকে।
২৫২৬
দীর্ঘ দিন ধরে রাশিয়া কম পরিমাণ কর আদায়কারী দেশ হিসাবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে রাশিয়া সরকারকে উচ্চ হারে কর আদায় করতে হবে বলে মত অনেকের।
২৬২৬
তবে কর আদায় করলেও মধ্যবিত্ত শ্রেণির উপর সেই করের বোঝা সে ভাবে চাপানো হবে না বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের ধারণা, কর বেশি পরিমাণে আদায় করা হতে পারে দেশের উচ্চবিত্ত নাগরিকদের কাছ থেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার এই নীতি থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত ভারত-সহ সমস্ত উন্নয়নশীল দেশের।