Rajasthan’s Piplantri village plants 111 tree saplings each time a girl child is born dgtl
tree
কন্যাসন্তানের জন্ম হলেই ১১১টি চারাগাছ রোপণ, বহু বছরের রেওয়াজ হাল ফিরিয়েছে রাজস্থানের গ্রামে
কন্যাসন্তানের আগমনে পিপলান্ত্রী গ্রামে খুশির জোয়ার বয়ে যায়। সন্তানের জন্মের পর তাঁর লালনপালনে যাতে কোনও খামতি না থাকে, সে জন্য শিশুর মা-বাবার হাতে সংগৃহীত অর্থও তুলে দেন গ্রামবাসীরা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১১:৫৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
কন্যাসন্তানের আগমন রুখতে ভ্রূণহত্যার কথা তো আকছার শোনা যায় এ দেশে। আবার অনেক সময় শুধুমাত্র কন্যা হওয়ার ‘অপরাধে’ সদ্যোজাত শিশুকে আঁস্তাকুড়ে ফেলে দেওয়ার সংবাদও শিরোনাম কেড়ে নেয়। এই অন্ধকারের বিপরীতেই আছে রাজস্থানের এক গ্রাম। সেখানে কন্যাসন্তান জন্মের পর ১১১টি চারাগাছ পোঁতা রেওয়াজ।
০২১৬
গত দেড় দশক ধরে এমনই নিয়ম মেনে চলেছেন রাজসমন্দ জেলার পিপলান্ত্রী গ্রামের বাসিন্দারা। কন্যাসন্তানের আগমনে সে গ্রামে খুশির জোয়ার বয়ে যায়। সন্তানের জন্মের পর তাঁর লালনপালনে যাতে কোনও খামতি না থাকে, সে জন্য শিশুর মা-বাবার হাতে অর্থ তুলে দেন গ্রামবাসীরা।
০৩১৬
এ দেশের প্রত্যন্ত এলাকার বহু পরিবারে আজও নারীশিক্ষার আলো ঢোকে না। মেয়েদের প্রথাগত পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই তাকে স্বামীর ঘরে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয়। সে প্রথায় রাশ টানতে উদ্যত পিপলান্ত্রী গ্রামের পঞ্চায়েত।
০৪১৬
আইনত ১৮ বছর বয়সের আগেই যাতে কন্যাসন্তানের বিয়ে দিতে না পারে তার পরিবার, মা-বাবার কাছ থেকে সে বিষয়েও হলফনামা লিখিয়ে নেওয়া হয় পিপলান্ত্রী গ্রামপঞ্চায়েতের তরফে। এই সবই করা হয় কন্যাসন্তানকে রক্ষার জন্য।
০৫১৬
এ হেন রেওয়াজ কেন? তা জানতে ফিরে যেতে হবে ১৫ বছর আগে। এই রেওয়াজ চালু করেছিলেন গ্রামের তৎকালীন প্রধান শ্যামসুন্দর পালিওয়াল।
০৬১৬
নিজের মেয়ে কিরণের অকালমৃত্যুর সাক্ষী ছিলেন শ্যামসুন্দর। সে সময় কিরণের বয়স ছিল ১৮ বছর। মেয়ের স্মৃতিতেই এই অভিযানের শুরু বলে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন শ্যামসুন্দর।
০৭১৬
প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান শ্যামসুন্দরের দাবি, পিপলান্ত্রী গ্রামে প্রতি বছর গড়ে ৬০টি কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। এক সময় তাদের অনেকে দেখভালের অভাবে অকালে মারা যেত।
০৮১৬
শ্যামসুন্দরের মেয়ের অকালমৃত্যু হয়েছিল ডিহাইড্রেশনে। তার পর থেকেই গ্রামের সর্বত্র বৃক্ষরোপণে ব্রতী হয়েছেন তিনি। যাতে গ্রামের কোথাও জলের অভাব না হয়।
০৯১৬
কারণ যা-ই হোক না কেন, শ্যামসুন্দরের উদ্যোগের প্রশংসা করতে ভোলেননি গ্রামবাসীরা। আখেরে তাতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মুখ দেখেছেন তাঁরা। প্রত্যেক কন্যাসন্তান জন্মের পর ১১১টি চারাগাছ রোপণের জেরে নিম, আম, গোলাপকাঠের মতো নানা গাছে ভরে উঠেছে গ্রামটি।
১০১৬
সংবাদমাধ্যমের দাবি, গত ছ’বছরে শুধুমাত্র অ্যালো ভেরার চারা বপন করা হয়েছে আড়াই লক্ষের বেশি। যা থেকে রোজগারের পথ খুলে গিয়েছে অনেকের। অ্যালো ভেরা জেল এবং তার রস বিক্রি করেই আয়ের উপায় দেখেছেন বহু গ্রামবাসী।
১১১৬
পিপলান্ত্রী গ্রামের বাসিন্দারা যে অজান্তেই ফরাসি নারীবাদী ফ্রাঁসোয়া ডু’বনের ‘ইকোফেমিনিজ়ম’-এর প্রসার করে ফেলেছেন, তা মনে করিয়ে দিচ্ছে সংবাদমাধ্যম। নারীবাদের যে শাখা প্রকৃতির সঙ্গে নারীর সংযোগের কথা বলে।
১২১৬
এক-একটি কন্যাসন্তানকে চারাগাছের সঙ্গে তুলনা করেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের মতে, চারাগাছের মতোই কন্যার যত্নআত্তি করা প্রয়োজন। তাদের লালনপালনে নিত্যদিনের পরিচর্যা জরুরি। যাতে ভবিষ্যতে বৃক্ষের মতো ডালপালা ছড়িয়ে বেড়ে উঠতে পারে তারা।
১৩১৬
এ গ্রামে কন্যাসন্তান জন্মের পর ১১১টি চারাগাছ রোপণ করা ছাড়াও গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে সদ্যোজাতের পরিবারকে ৩১,০০০ টাকা দান করেন। যা তার লালনপালনের কাজে লাগানো যায়।
১৪১৬
সদ্যোজাতের মা-বাবার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করে তা স্থায়ী আমানত করে রাখেন গ্রামবাসীরা। পঞ্চায়েতের নির্দেশ, কন্যার ২০ বছর না হওয়া পর্যন্ত ওই সঞ্চিত অর্থ খরচ করতে পারবেন না তাঁর মা-বাবা। একটি হলফনামায় সে প্রতিশ্রুতি লিখিয়ে নেওয়া হয়।
১৫১৬
কন্যাসন্তানের পড়াশোনা এবং ভবিষ্যতে তাঁর আর্থিক সুরক্ষার জন্যই এ হেন পদক্ষেপ বলে জানিয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত।
১৬১৬
সদ্যোজাতের পরিবারের সদস্যেরা যাতে কথার খেলাপ না করেন, সে জন্য কন্যাসন্তানের জন্ম থেকে স্থায়ী আমানতের যাবতীয় তথ্য নথিবদ্ধ করে রাখেন পঞ্চায়েতকর্মীরা। এ ছাড়া, সদ্যোজাতের জন্য ‘জননী সুরক্ষা প্রকল্প’-সহ সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্তও করা হয়।