দক্ষিণ আফ্রিকার জেলখাটা ওই আসামির নাম ওয়েলকাম উইটবল। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের পোলসমুর সংশোধনাগারে বন্দি ছিলেন। পোলসমুর বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি ভয়ঙ্কর কারাগারের মধ্যে অন্যতম হিসাবে বিবেচিত হয়।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৩ ১৩:০৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
জেলে পা দিয়েই মনে হয়েছিল, ‘হয় মারো, নয় মরো’। বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নিজের জেলযাপনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার সময় তেমনটাই জানালেন এক সময়ের কুখ্যাত অপরাধী।
০২১৮
দক্ষিণ আফ্রিকার জেলখাটা ওই আসামির নাম ওয়েলকাম উইটবল। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের পোলসমুর সংশোধনাগারে বন্দি ছিলেন। পোলসমুর বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি ভয়ঙ্কর কারাগারের মধ্যে অন্যতম হিসাবে বিবেচিত হয়।
০৩১৮
সেই পোলসমুরের অন্দরের ভয় ধরানো পরিস্থিতির সাক্ষ্য দিলেন উইটবল। উইটবল জানিয়েছেন, কারাগারে তিনি যে কুঠুরিতে ছিলেন, সেখানে আরও ১২০ জন বন্দি ছিলেন। আর সকলেই ছিল মার্কামারা অপরাধী।
০৪১৮
চারিদিকে নিরাপত্তারক্ষীদের কড়া পাহারায় থাকা কারাগারটি দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে কুখ্যাত অপরাধীদের এক ছাদের নীচে এনেছে। পোলসমুরে যত অপরাধী থাকতে পারে, তার থেকে অনেক বেশি অপরাধী সেই কারাগারে বন্দি রয়েছেন বলে উইটবল জানিয়েছেন।
০৫১৮
উইটবলের মতে, ভিড়ে ঠাসা অন্ধকার কুঠুরিতে অপরাধীদের ভিড়ে তিলধারণের জায়গা অবধি ছিল না। শোয়া তো অনেক দূরের কথা, ঠিক মতো দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত ছিল না।
০৬১৮
উইটবল জানিয়েছেন, পোলসমুরে সর্বাধিক সাড়ে চার হাজার জন বন্দির থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সে জায়গায় তাঁকে নিয়ে প্রায় সাত হাজার অপরাধী সেখানে বন্দি ছিলেন।
০৭১৮
এই সাত হাজার বন্দিদের প্রতি দিন মাত্র এক ঘণ্টা শরীরচর্চার অনুমতি দেওয়া হয়। আর এই এক ঘণ্টার মধ্যে প্রতি দিনই ঝগড়া, মারপিট লাগত বন্দিদের মধ্যে। প্রতি দিনই কেউ না কেউ আহত হতেন।
০৮১৮
উইটবলের কথায়, ‘‘বন্দিদের মধ্যে শুধু ধাক্কাধাক্কি হলেই রণক্ষেত্রে পরিণত হত কারাগার। কাউকে নিয়ে মজা করলে ছুরির কোপ পর্যন্ত খেতে হত।’’
০৯১৮
কারাগারের মধ্যে তিনি বন্দিদের ধর্ষিত হতে দেখেছেন বলে দাবি করেছেন উইটবল। জানিয়েছেন, জেলের মধ্যে একাধিক খুন হতেও দেখেছেন তিনি।
১০১৮
উইটবলের দাবি, তিনি প্রথম যে দিন কারাগারে প্রবেশ করেন, সে দিন কুঠুরির বাকি বন্দিরা তাঁকে উত্ত্যক্ত করেন। টেনে টেনে বেশ কয়েকটি থাপ্পড়ও মারা হয় তাঁকে।
১১১৮
উইটবল জানিয়েছেন, পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনিও ছোটখাটো একটি গ্যাং চালাতেন। তিনিই ছিলেন সেই গ্যাংয়ের ‘বস্’। সবাই তাঁর কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলত। কিন্তু জেলে তাঁর জারিজুরি খাটেনি বলেই জানিয়েছেন উইটবল। তাঁর মতে, জেলের ভিতর একা কেউ ‘বস্’ না। কেউ কারও কথা মেনে চলেন না।
১২১৮
উইটবলের কথায়, ‘‘জেলের মধ্যে ‘বস্’ হওয়ার জন্য এবং সম্মান অর্জনের জন্য খুন করতেই হবে। অন্য বন্দির শত্রুদের খতম করে তাঁদের অনুগত বানাতে হবে। আবার পরবর্তী কালে সেই বসের নির্দেশ মেনে কাউকে খুনও করতে হতে পারে।’’
১৩১৮
উইটবল জানিয়েছেন, কারাগারের মধ্যে যে কয়েকটি গ্যাং দাপিয়ে বেড়াত, তার একটির সদস্য ছিলেন তিনি। তবে তাঁর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁকে ওই গ্যাংয়ের সদস্য বানানো হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।
১৪১৮
কারাগারের অন্দরে গ্যাংগুলির পরিচিতি ছিল কয়েকটি নম্বর। সেই নম্বর দিয়েই ওই গ্যাং এবং গ্যাংয়ের সদস্যদের চিহ্নিত করা হত।
১৫১৮
উইটবল জানিয়েছেন, গ্যাংয়ের প্রতি আনুগত্য প্রমাণ করার জন্য এক বার তাঁকে এক নিরাপত্তারক্ষীকে ছুরি মারার নির্দেশ দেওয়া হয়। হুমকি দেওয়া হয়, আদেশ পালন না করলে তাঁকেই খুন করা হবে।
১৬১৮
উইটবল বলেন, ‘‘আমি যখন ওই নিরাপত্তারক্ষীর উপর হামলা চালাতে গিয়েছিলাম, তখন আমার সঙ্গে দু’জনকে পাঠানো হয়েছিল। আমি কোনও গন্ডগোল করলেই আমাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।’’
১৭১৮
উইটবল জানিয়েছেন, নিজের প্রাণ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে তিনি ওই নিরাপত্তারক্ষীর উপর হামলা চালান। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ওই নিরাপত্তারক্ষীর ঘাড়ে ছুরির কোপ বসিয়েছিলাম। ওর ঘাড় দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল। আমি তখন ছুটে পালিয়ে যাই। যদি আমি ওখানে দাঁড়িয়ে ওই নিরাপত্তারক্ষীকে সাহায্য করতে যেতাম, তা হলে আমাকেও খুন করা হত।’’
১৮১৮
জেল থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যম ‘ওয়ার্ল্ড ভিউ’কে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তবে তাঁর ছুরির আঘাতে ওই নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু হয়েছিল কি না সে বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।