Photographer and his wife plant 20 lakhs trees in 31 crore acre land, turned it into forest dgtl
Brazil Forest
আয়তনে একটি ছোট দেশের সমান! পরিবেশ রক্ষা করতে আস্ত অরণ্য গড়ে ফেললেন ব্রাজিলের দম্পতি
নব্বইয়ের দশকে গাছ কাটার কারণে ব্রাজিলের ওই অঞ্চলে জঙ্গলের অস্তিত্ব পুরোপুরি মুছে যায়। দুই দশক জুড়ে সেই এলাকায় ২০ লক্ষ গাছের চারা পুঁতে আবার নতুন ভাবে অরণ্য তৈরি করেছেন ব্রাজিলের এক দম্পতি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৫২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৩
প্রায় ৩২ কোটি একর জমি জুড়ে জঙ্গল। আয়তনে দক্ষিণ আফ্রিকার সমতুল্য। নব্বইয়ের দশকে গাছ কাটার কারণে ব্রাজিলের একাংশের ঘন জঙ্গলের অস্তিত্ব পুরোপুরি মুছে যায়। দুই দশক জু়ড়ে সেই এলাকায় ২০ লক্ষ গাছের চারা পুঁতে আবার নতুন ভাবে অরণ্য তৈরি করেন ব্রাজিলের এক দম্পতি।
০২১৩
১৯৪৪ সালে ব্রাজিলে জন্ম সেবাস্টিয়াও রিবেইরো সালগাদোর। সে দেশের খ্যাতনামী চিত্রসাংবাদিক তিনি। পেশার প্রয়োজনে বিশ্বের ১২০টি দেশ ঘুরে ফেলেছেন তিনি। তাঁর কলমে লেখা রয়েছে একাধিক বই। ছবি তোলার পেশাই তাঁর জীবনকে অন্য মোড়ে দাঁড় করায়।
০৩১৩
২০১৫ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেবাস্টিয়াও জানিয়েছিলেন, ১৯৯৪ সালে মধ্য আফ্রিকার রোয়ান্ডায় যুদ্ধ চলাকালীন সেই বিষয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঘটনার ভয়াবহতা সহ্য করতে পারেননি।
০৪১৩
যুদ্ধের ভয়াবহতায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন সেবাস্টিয়াও। কাজ থেকে কিছু দিনের জন্য বিরতি নিয়ে ব্রাজ়িলে নিজের বাড়িতে চলে যান তিনি। বেশ কয়েক বছর পর বাড়ি ফিরে চমকে ওঠেন চিত্রসাংবাদিক।
০৫১৩
সেবাস্টিয়াও সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ব্রাজিলের যে এলাকায় তিনি থাকতেন সেখানে বিশাল অরণ্য ছিল। কিন্তু ১৯৯৪ সালে সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছিলেন, পুরো এলাকা খাঁ খাঁ করছে। অরণ্য কোথায়! একটি গাছও নেই সেখানে।
০৬১৩
সেবাস্টিয়াও বলেছিলেন, ‘‘আমি যেমন ভিতর থেকে মরে গিয়েছিলাম, জায়গাটি দেখেও মৃত বলে মনে হয়েছিল। আমার স্ত্রীকে সেই কথা জানানোয় ও বলেছিল, আবার নতুন করে সেখানে প্রাণ সঞ্চার করা হবে।’’
০৭১৩
১৯৬৭ সালে লেইলা ওয়ানিক সালগাদোকে বিয়ে করেছিলেন সেবাস্টিয়াও। তথ্যচিত্রনির্মাতার পাশাপাশি লেইলা এক জন পরিবেশবিদও। ব্রাজিলের সেই শূন্য এলাকায় আবার অরণ্য তৈরি করতে উদ্যোগী হন তিনি।
০৮১৩
যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ব্রাজিলে নিজস্ব সংস্থা গড়ে তোলেন সেবাস্টিয়াও এবং লেইলা। সেই সংস্থার তরফে চার লক্ষ চারাগাছ পোঁতা হয়। ৩২ কোটি একর জমি জুড়ে গাছের চারা পুঁততে শুরু করেন দম্পতি।
০৯১৩
স্থানীয় এলাকায় যে গাছগুলি বেড়ে ওঠে সেই গাছের বীজ পোঁতার সিদ্ধান্ত নেন সেবাস্টিয়াও এবং লেইলা। সাক্ষাৎকারে সেবাস্টিয়াও বলেছিলেন, ‘‘ঘন জঙ্গল তৈরির পরিকল্পনা করলে শুধু গাছ লাগালেই হয় না। এলাকাটি এমন ভাবে তৈরি করতে হয় যে আশপাশ থেকে পোকামাকড়, সাপখোপ আসতে পারে। বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তুও যেন আশ্রয় নিতে পারে। তা হলেই সামগ্রিক ভাবে একটি অরণ্য বেড়ে উঠতে পারে।’’
১০১৩
পরিকল্পনা মতো এগিয়ে যেতে থাকেন সালগাদো দম্পতি। দুই দশক ধরে গাছের চারা পুঁতে ওই এলাকায় সত্যিই জঙ্গল তৈরি করে ফেলেন তাঁরা।
১১১৩
বর্তমানে সালগাদো দম্পতি নির্মিত ব্রাজিলের ওই অরণ্যে রয়েছে ২০ লক্ষেরও বেশি মোট ২৯৩টি প্রজাতির গাছ। জঙ্গলে ১৭২টি প্রজাতির পাখির পাশাপাশি ৩৩টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৫টি প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১৫টি প্রজাতির উভচর প্রাণী নিয়ে আস্ত একটি বাস্তুতন্ত্র গড়ে ফেলেছেন তাঁরা।
১২১৩
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি বছর এক কোটি একর জমিতে তৈরি হওয়া জঙ্গল কেটে ফেলা হয়। সেবাস্টিয়াও যখন বাড়ি গিয়েছিলেন তখন এলাকার মাত্র ০.৫ শতাংশ জমিতে গাছ ছিল। বর্তমানে সেখানে গড়ে উঠেছে ঘন জঙ্গল।
১৩১৩
সেবাস্টিয়াও বলেছিলেন, ‘‘পৃথিবীতে গাছই একমাত্র জিনিস যা কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে অক্সিজেন তৈরি করতে পারে। প্রকৃতিই আমাদের কাছে বিশ্বসমান। আমরা যদি নিজেদের সাধ্যমতো পৃথিবীকে কিছু না দিতে পারি তা হলে আমাদেরই ভুগতে হবে।’’