স্কটল্যান্ডের লোককথা অনুযায়ী, লক নেসে রয়েছে অতিকায় এক জলদানব। সে দেশের কিংবদন্তির আনাচকানাচে রয়েছে এই দানবের উল্লেখ। অনেক সাহিত্যও লেখা হয়েছে প্রাণীটিকে নিয়ে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ১৬:২৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
স্কটল্যান্ডের মিষ্টি জলের সব থেকে বড় উৎস লক নেস হ্রদ। যার গভীরতা প্রায় ৭৫০ ফুট। সেই হ্রদেই শনি এবং রবিবার ওয়েবক্যামেরা, ড্রোন এবং জলের নীচে কথা বলা যায় এমন ফোন নিয়ে নামতে দেখা গেল স্কটল্যান্ডের শয়ে শয়ে স্বেচ্ছাসেবককে। লক্ষ্য, কিংবদন্তির দানব ‘নেসি’কে খুঁজে বার করা।
০২১৭
সপ্তাহান্তে উত্তর স্কটল্যান্ডে লক নেসের কাছে ভিড় করেছিলেন প্রচুর মানুষ। বহু বছর ধরে এই দানবের খোঁজ চালাচ্ছেন স্কটল্যান্ডের মানুষ। তবে গত দু’দিনের এই অনুসন্ধান অভিযান গত ৫০ বছরের মধ্যে সব থেকে বড় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
০৩১৭
এই অনুসন্ধান অভিযানের দায়িত্বে ছিল ইনভারনেস শহরের ‘লক নেস সেন্টার’। এই সংস্থা দীর্ঘ দিন ধরে লক নেস নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে।
০৪১৭
‘লক নেস সেন্টার’-এর স্বেচ্ছাসেবকরা মূলত এই অনুসন্ধান অভিযান চালালেও, দলে ছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বহু মানুষ। ক্যামেরা এবং অত্যাধুনিক যন্ত্র নিয়ে জলে নেমেছিলেন তাঁরা।
০৫১৭
কিন্তু কেন ‘লক নেস’ নিয়ে এত আগ্রহ? কেনই বা লক নেস হ্রদে রহস্যময় জলদানবের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন স্কটল্যান্ডের সাধারণ মানুষ?
০৬১৭
স্কটল্যান্ডের লোককথা অনুযায়ী, লক নেসে রয়েছে অতিকায় এক জলদানব। সে দেশের বিভিন্ন কিংবদন্তিতে রয়েছে এই দানবের উল্লেখ। অনেক সাহিত্যও লেখা হয়েছে প্রাণীটিকে নিয়ে।
০৭১৭
যুগ যুগ ধরে স্কটল্যান্ডের মানুষের বিশ্বাস, এক সময় সে দেশে সত্যি সত্যিই এই অতিকায় প্রাণীর দেখা পাওয়া যেত এবং এখনও খুঁজলে সেই প্রাণীর খোঁজ মিলতে পারে।
০৮১৭
স্কটল্যান্ডবাসীর বিশ্বাস আরও পোক্ত হয় ১৯৩৩ সালে। স্কটল্যান্ডের এক হোটেল ম্যানেজার অ্যালডি ম্যাকে দাবি করেছিলেন, পাহাড়ে ঘেরা লক নেস হ্রদের কাছে তিনি এক বিশালাকায় প্রাণী দেখেছিলেন।
০৯১৭
ঘটনাটি ১৯৩৩ সালে স্থানীয় সংবাদপত্র ‘দ্য ইনভারনেস কুরিয়ার’-এ প্রকাশিত হয়েছিল। সংবাদপত্রের তৎকালীন সম্পাদক প্রাণীটিকে ‘দানব’ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। এর পর রহস্যময় প্রাণী ‘নেসি’কে নিয়ে একাধিক টিভি শো এবং সিনেমা বানানো হয়েছিল।
১০১৭
তবে অনেকেরই মত ছিল, ওই হোটেল ম্যানেজার যে প্রাণী দেখেছিলেন, তা নেসি নয়। অনেকে আবার সেই রহস্যময় প্রাণীটিকে প্রাগৈতিহাসিক সামুদ্রিক সরীসৃপ, দৈত্যাকার ইল, বা হাতি হিসাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন।
১১১৭
তবে সত্যি যাই হোক, ১৯৩৩ সালের পর ‘নেসি’র উপস্থিতির গল্প হাওয়ার মতো স্কটল্যান্ডের দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয় লক নেসের আশপাশের এলাকা।
১২১৭
বেশ কয়েক বছর অতলান্তিক মহাসাগরের নির্জন দ্বীপ সেইমোরের গভীরে থাকা বরফের স্তূপ থেকে খোঁজ মিলেছিল আশ্চর্য এক প্রাণীর জীবাশ্মের। অনেক বছর ধরে এই জীবাশ্মকে নিয়ে নানা জল্পনা ছিল। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন এই জীবাশ্ম ‘নেসি’র।
১৩১৭
১৯৮৯ সালে প্রথম এই জীবাশ্মটি আবিষ্কার করেছিলেন পারদু ইউনিভার্সিটির উইলিয়াম জিন্সেমিয়েস্টার। খারাপ পরিবেশ থাকার কারণে বহু বছর লেগে যায় এটি সম্পূর্ণ খুঁড়ে উদ্ধার করতে। ২০১৭ সালে সম্পূর্ণ ভাবে এই জীবাশ্মটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
১৪১৭
জীবাশ্মের প্রাণীটি ছিল ৪০ ফুট লম্বা। ওজন আনুমানিক ১৫ টন। প্রায় ৭০ হাজার বছরেরও পুরনো এই জীবাশ্ম লক নেসের দানবের বলে ভেবেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
১৫১৭
দীর্ঘ গলা বিশিষ্ট ওই জীবাশ্ম আসলে কোন প্রাণীর তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি ছিল, এটি লক নেসের দানবের। অন্য দিকে, কেউ কেউ বলেছিলেন, এরা প্লিজিওসর। যা ডাইনোসরের এক প্রজাতি।
১৬১৭
এর পর, ২০২১ সালে লিভারপুলের বাসিন্দা কলিন ভিকক গিয়েছিলেন লক নসের কাছে।তাঁর দাবি, তিনি সেখানে ওই জলদানবের খোঁজ পেয়েছিলেন। পেশায় গাড়িচালক ৫৫ বছরের কলিন নাকি দূরবিনে চোখ রেখে জলের মধ্যে থাকা দানবের আকার মাপারও চেষ্টা করেছিলেন। এর পর থেকে লক নেসে রহস্যময় জলদানবের উপস্থিতি নিয়ে ফের বাড়ছে রহস্য।
১৭১৭
৩০ জুলাই লক নেসে এই প্রাণী দেখেছেন বলে দাবি করেছিলেন কলিন। তার আগে ১৯ জুলাই চেস্টারের এক ব্যক্তি এসেছিলেন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে। তিনিও ওই প্রাণী দেখার দাবি করেছিলেন। ১১ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বার লক নেস দানব দেখার দাবি উঠল। কিন্তু তার অস্তিত্ব এখনও প্রমাণিত নয়।