People are showing anger as another firecracker factory found near Duttapukur blast site dgtl
Duttapukur Blast
এত কিছু লুকিয়ে রাখা ছিল? গোপন বাজি কারখানার ভিতরে গিয়ে ছবি তুলল আনন্দবাজার অনলাইন
কারখানার মালিক কে? স্পষ্ট করে কেউ জানেন না। কারা কাজ করতেন? কেউ জানেন না। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, বেরুনান পাকুড়িয়ার এই ইটভাটার আড়ালে রমরমিয়ে বাজি তৈরি হত এই কারখানায়।
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ১৮:২৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১৩১
বড় ফাঁকা জমির ভিতর ন্যাড়া মাথার চার দেওয়ালের কাঠামো। যে জমির কোথাও প্রাচীর দিয়ে ঘেরা, কোথাও যাতায়াতের পথে কোনও বাধা নেই। চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বারুদ, বাজির খোলা, বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র, রাসায়নিকের ড্রাম। সে যেন এক বিশাল ‘কর্মযজ্ঞস্থল’।
০২৩১
এই জমি, এই কাঠামো এলাকায় পরিচিত ‘ইটভাটা’ হিসাবে। অথচ বারুদ এবং রাসায়নিকের গন্ধে সেই জায়গায় নিশ্বাস নেওয়া দায়।
০৩৩১
এই কারখানার মালিক কে? স্পষ্ট করে কেউ জানেন না। কারা কাজ করতেন? কেউ জানেন না। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, বেরুনান পাকুড়িয়ার এই ইটভাটার আড়ালে রমরমিয়ে বাজি তৈরি হত এই কারখানা।
০৪৩১
রবিবার সকালে দত্তপুকুরের মোচপোল গ্রামের যে কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তার থেকে এই কারখানার দূরত্ব সর্বসাকুল্যে আটশো-ন’শো মিটার।
০৫৩১
এই কারখানার কাছে বিস্ফোরণের ফলে চুরমার হয়ে যাওয়া বাজি কারখানাটি ‘শিশু’ বলেও স্থানীয়দের একাংশের মত। স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকার এই কারখানায় বাজি তৈরি করছিলেন কেউ বা কারা।
০৬৩১
শুধু বাজি তৈরি হত না, বাজি নিয়ে ‘গবেষণা’ও চলত সেই কারখানায়। কিন্তু রবিবারের দত্তপুকুরের বিস্ফোরণের পর এই কারখানার শ্রমিকদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। যেন কারখানার যন্ত্রগুলি অযত্নে বন্ধ করে রাতারাতি ‘ভ্যানিশ’ হয়ে গিয়েছেন তাঁরা।
০৭৩১
রবিবার সকাল পর্যন্ত এই কারখানার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কানে ভেসে আসত মেশিন চলার ঘট ঘট আওয়াজ।
বেরুনান পাকুড়িয়া গ্রামের বড় রাস্তা ছেড়ে একটি কাঁচা রাস্তা ধরে খানিক এগোলেই দেখা যাবে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা একটি জমি। সামনে অপোক্ত লোহার গেট। গেটের সামনে বেশ কয়েকটি ইটের স্তূপ। বাইরে থেকে এক নজরে দেখলে ইটভাটাই মনে হবে।
১০৩১
গেট ছাড়িয়ে একটু এগিয়ে যেতেই ফাঁকা জমি। স্থানীয়দের দাবি, এই জমিতে এক সময় এলাকার স্থানীয়রা খেলা করত। কিন্তু এখন আর কচিকাঁচাদের ভিড় লক্ষ করা যায় না সেই জমিতে। ভয়েই আর সেখানে ছেলেমেয়েদের খেলতে পাঠান না অভিভাবকেরা।
১১৩১
ফাঁকা জমি বরাবর আরও একটু এগিয়ে গেলে একেবারে অন্য দৃশ্য। ইটের নামগন্ধ নেই। চারদিকে বারুদের বস্তা, বাজির মশলা, ভারী ভারী যন্ত্রপাতি।
১২৩১
জমির উপরেই চার দেওয়ালের টিন এবং বাঁশের কাঠামো। সেখান থেকে আর একটু ডান দিকে এগোলে আরও একটি দোতলা কাঠামো।
১৩৩১
সেই দোতলা কাঠামোর ভিতরে দামি দামি একাধিক যন্ত্র। যন্ত্রগুলির চারপাশে পড়ে রয়েছে বাজি তৈরির বারুদ, মশলা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই যন্ত্রগুলিতেই তৈরি হত বিভিন্ন ধরনের বাজি।
১৪৩১
যন্ত্রগুলির উপরের সরঞ্জাম দেখে মনে হবে, কেউ বা কারা তাড়াহুড়োর কারণে কোনও রকমে যন্ত্রগুলি বন্ধ করে কারখানা ছেড়েছেন।
১৫৩১
দোতলা কাঠামো ছাড়িয়ে আরও একটু এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে একটি বাঁশের কাঠামো। মাথায় ত্রিপল টাঙানো। সেই কাঠামোতে ঢোকা-বেরোনোর কোনও দরজা নেই। বিয়েবাড়ির প্যান্ডেল যেমন হয়, অনেকটা সে রকমই।
১৬৩১
সেই বাঁশ-ত্রিপলের কাঠামোর ভিতরে ঢুকলে দেখা যাবে চারটি টেবিল। টেবিলের উপরে ইতিউতি ছড়িয়ে রয়েছে রাসায়নিক, বিকার, টেস্ট টিউব, গবেষণার জন্য ব্যবহৃত চশমা, মোটা দস্তানা। পুরোদস্তুর ‘গবেষণাগার’।
১৭৩১
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই বাঁশের কাঠামোর মধ্যেই বাজির মশলা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হত। টেবিলের চারপাশে রয়েছে চেয়ার। মনে করা হচ্ছে সেই চেয়ারগুলিতে বসেই চলত গবেষণা সংক্রান্ত কাজকর্ম।
১৮৩১
গবেষণাগার পেরিয়ে ফাঁকা জমি বরাবর এগিয়ে গেলে নাকে ভেসে আসবে বারুদের এবং রাসায়নিকের কটু গন্ধ। বাজি তৈরির জন্য বড় বড় ড্রামে রাখা রাসায়নিক থেকেই সেই গন্ধ আসছে।
১৯৩১
ফাঁকা জমির চারদিকে ভাল করে নজর ঘোরালে দেখা যাবে, জায়গায় জায়গায় ত্রিপলের উপর বালিপাথর শুকাতে দেওয়া রয়েছে। কারও কারও মতে, বাজি তৈরির অন্যতম উপকরণ এই বালি। তুবড়ি জাতীয় বাজিতে এই বালি ব্যবহার করা হত।
২০৩১
বালির পাশে পাশে বিভিন্ন জায়গায় বাজির প্যাকেট এবং খোলও নজরে পড়ল। মোটা কাগজের সেই সব খোল পড়ে রয়েছে এখানে-ওখানে।
২১৩১
আনন্দবাজার অনলাইনের ক্যামেরায় ধরা পড়ল বেশ কয়েকটি বিলবই এবং হিসাবের খাতা। বাজির কাঁচামাল হিসাবে বারুদ, সোডা, কাগজ, কাপড় কেনার হিসাব পর পর লেখা রয়েছে সেই সব হিসাবের খাতায়।
২২৩১
চোখে পড়ল একটি রান্নাঘরও। সম্ভবত কারখানার শ্রমিকরা সেখানে রান্না করে খেতেন। তবে গৃহস্থের বাড়িতে যেমনটা দেখা যায়, এই রান্নাঘর তেমনটা নয়। টিনের পাত দিয়ে কোনও রকমে ঘেরা একটি কাঠামো।
২৩৩১
রান্নাঘরের ভিতরে ঢুকতে দেখা গেল চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি রান্নার সরঞ্জাম। হাঁড়ি, কড়া, বালতি, উনুন সবই রয়েছে। একটি হাঁড়িতে রয়েছে চাল। চালের উপরের দিক ভিজে। যেন কেউ ভাত রান্নার জন্য হাঁড়িতে চাল নিয়েও তড়িঘড়ি চলে গিয়েছেন।
২৪৩১
কারখানা চত্বরে একটি গাড়ি উল্টে পড়ে থাকতেও দেখা গেল। স্থানীয়দের দাবি, এই গাড়ি চেপেই যাতায়াত করতেন কারখানার শ্রমিকরা।
২৫৩১
স্থানীয়দের দাবি, এই কারখানায় যাঁরা কাজ করতেন, তাঁদের বেশির ভাগই মুর্শিদাবাদের শ্রমিক। বাইরে থেকে গাড়ি করে বাজি তৈরির জন্য আনা হত তাঁদের। ভাড়া থাকতেন স্থানীয় মেসে। সকালে আসতেন। কাজ সেরে আবার যে যার মেসে ফিরে যেতেন।
২৬৩১
কিন্তু কারখানার মালিক কে, সে সম্পর্কে অবগত নন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, মালিকের বাড়ি পাশেরই এক গ্রামে। আবার অন্য এক অংশের দাবি, শ্রমিকদের মতো মালিকের বাড়িও মুর্শিদাবাদে।
২৭৩১
রবিবার দত্তপুকুরের বিস্ফোরণের ঘটনার পর সোমবার সকালে বেরুনান পাকুড়িয়ার ওই বাজি কারখানার একাংশে ভাঙচুর চালিয়েছেন সাধারণ মানুষ। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে পুলিশও। পুলিশ এসে ওই কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। লাগানো হয়েছে ‘ডু নট ক্রস’ লেখা নিরাপত্তা বলয়।
২৮৩১
স্থানীয়দের অভিযোগ, দত্তপুকুরে এত বড় ঘটনার পরও কোনও হেলদোল নেই প্রশাসনের। এলাকার আশপাশে এই ধরনের আরও অবৈধ কারখানা খুঁজে পাওয়া যেতে পারে বলেও তাঁদের দাবি।
২৯৩১
প্রসঙ্গত, রবিবার সকালে ‘বাজি’ কারখানার বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দত্তপুকুর এলাকার মোচপোল গ্রাম। বিস্ফোরণের অভিঘাতে এতটাই বেশি ছিল যে, যার আওয়াজ শোনা গিয়েছিল প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরের বারাসত শহরেও। কারখানার আশপাশের বাড়িতেও ফাটল ধরে গিয়েছিল।
৩০৩১
সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতও হয়েছেন অনেকে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই বিস্ফোরণে কারখানার মালিক ছিলেন কেরামত আলি। সূত্রের খবর, ওই বিস্ফোরণে তাঁরও মৃত্যু হয়েছে।
৩১৩১
ঘটনার বীভৎসতায় এখনও আতঙ্ক কাটছে না মোচপোল গ্রামের বাসিন্দাদের। বাজি কারখানাকে কেন্দ্র করে সেই আতঙ্কই এ বার ছড়িয়ে পড়ছে বেরুনান পাকুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যেও।