Pankaj Dheer, who played the role of Karna in B R Chopra's mythological series Mahabharat dgtl
Pankaj Dheer
কেরিয়ারের শুরুতে ব্যর্থতা, ধারাবাহিকে অভিনয় করে জনপ্রিয়, এখন কী করছেন ‘মহাভারত’-এর কর্ণ?
সত্তরের দশকের শেষের দিকে ‘বেখবর’ নামের ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান পঙ্কজ ধীর। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অমরীশ পুরীও।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৩ ১৪:৩৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
শৈশব থেকেই ফিল্মজগতের মধ্যে বড় হয়ে ওঠা। অভিনয় নিয়েই কেরিয়ার গড়ে তোলার ইচ্ছা থাকলেও কেরিয়ার শুরুতে বার বার ব্যর্থতার সম্মুখীন হন। কিন্তু ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনশীল। আশির দশকে জনপ্রিয় পৌরাণিক ধারাবাহিকে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন পঙ্কজ ধীর। এমনকি ভারতের দু’টি মন্দিরে তাঁর ছাঁচে গড়া মূর্তিও রয়েছে।
০২১৪
পঙ্কজের বাবা সিএল ধীর ছিলেন তৎকালীন বলিপাড়ার নামকরা পরিচালক। ‘জব জব ফুল খিলে’র মতো ছবি পরিচালনা করেছিলেন সিএল ধীর। হিন্দি ছবিতে কাজ করবেন বলে পূর্ব আফ্রিকা থেকে মুম্বইয়ে যান তিনি। চিত্রনাট্য লেখার কাজ থেকে শুরু করে পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে ফিল্মের সেটে যেতেন পঙ্কজ। এ ভাবেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর।
০৩১৪
ছোট থেকে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও আর্থিক অভাবের কারণে সহ-পরিচালনার কাজ শুরু করেন পঙ্কজ। পঙ্কজের বাবা ‘এক চাদর ময়লি সি’ ছবির পরিচালনা করছিলেন। ছবির শুটিং প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর ছয়-সাত দিন কাজ করলেই শুটিং শেষ হয়ে যেত। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে ছবির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এই ছবির জন্য প্রচুর খরচ করে ফেলেছিলেন সিএল ধীর। লোকসানের ধাক্কা সামলাতে পারেননি পঙ্কজের বাবা।
০৪১৪
সংসার সামলাতে আর অভিনয় নয়, সহ-পরিচালনার মাধ্যমে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন পঙ্কজ। ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পরওয়ানা’ ছবিতে সহ-পরিচালনার মাধ্যমে কাজ শুরু করেন তিনি। সত্তরের দশকে একাধিক হিন্দি ছবিতে সহ-পরিচালনা করতে দেখা যায় তাঁকে। সহ-পরিচালনার কাজ করলেও ফিল্ম সেটে উপস্থিত থেকে অভিনয়ের খুঁটিনাটির দিকে নজর রাখতেন পঙ্কজ।
০৫১৪
‘পুনম’, ‘সুখা’ এবং ‘মেরা সুহাগ’ নামের হিন্দি ছবিতে স্বল্পদৈর্ঘ্যের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় পঙ্কজকে। দক্ষিণী অভিনেতা কমল হাসনের প্রাক্তন স্ত্রী সারিকার নজরে পড়েন পঙ্কজ। সারিকা তাঁর ছবি ‘তিতলিয়া’তে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের জন্য পঙ্কজকে প্রস্তাব দেন। দ্বিতীয় অভিনেতা হিসাবে পঙ্কজকে অভিনয় করতে দেখা যাবে বলে আশ্বাসও দেন সারিকা। রাজ বব্বরও সেই ছবিতে অভিনয় করবেন বলে জানা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই ছবির কাজ শুরু করতে পারেননি সারিকা।
০৬১৪
সত্তরের দশকের শেষের দিকে ‘বেখবর’ নামের ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান পঙ্কজ। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অমরীশ পুরীও। ‘বেখবর’ ছবিতে অভিনয় করে পারিশ্রমিক হিসাবে ৩১ হাজার টাকা পেয়েছিলেন পঙ্কজ। একই ছবিতে অভিনয়ের জন্য পারিশ্রমিক হিসাবে ১১ হাজার টাকা পেয়েছিলেন অমরীশ। এই ছবিতে অমরীশের থেকে বেশি উপার্জন করলেও কেরিয়ারের দৌড়ে পঙ্কজকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন অমরীশ।
০৭১৪
অভিনেতা হিসাবে সফল হতে পারছিলেন না পঙ্কজ। শেষ পর্যন্ত ডাবিংয়ের কাজ শুরু করেন তিনি। পরিচালক বিআর চোপড়ার স্টুডিয়োতে ইংরেজি ছবির হিন্দি ভাষায় ডাবিং করা হত। সেই কাজই করতেন পঙ্কজ। বিআর চোপড়া যে ‘মহাভারত’ ধারাবাহিক তৈরি করছেন সে খবর জানতে পারেন পঙ্কজ। ধারাবাহিকের জন্য অডিশন দিতে যান তিনি।
০৮১৪
‘মহাভারত’ ধারাবাহিকে প্রথমে অর্জুন চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব পান পঙ্কজ। কিন্তু যখন তিনি বিআর চোপড়ার কাছে জানতে পারেন যে চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে দাড়ি-গোঁফ কাটতে হতে পারে, তখন তিনি আপত্তি জানান। অর্জুনের চরিত্রে পঙ্কজ অভিনয় করতে চান না শুনে পরিচালক পঙ্কজকে সেট থেকে ধাক্কা দিয়ে বার করে দেন।
০৯১৪
কয়েক মাস পর আবার পঙ্কজের ডাক পড়ে ‘মহাভারত’-এর সেটে। কর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব পান পঙ্কজ। নিজের মতো করে কর্ণের চরিত্রটিকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন পঙ্কজ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমাকে দর্শক এত ভালবাসা দিয়েছে যে পাঠ্যবইয়ে কর্ণের কথা উঠলে সেখানে কর্ণের সাজসজ্জায় আমার ছবি থাকে। এমনকি ভারতের দু’টি জায়গায় (হরিয়ানার কারনাল এবং ছত্তীসগঢ়ের বস্তার) যে কর্ণের মন্দির রয়েছে সেখানেও আমার শরীরী গঠনে মূর্তি তৈরি করে পুজো করা হয়।’’
১০১৪
কর্ণের চরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন পঙ্কজ। কিন্তু এই ধারাবাহিকের শুটিং চলার সময় কম আঘাত সহ্য করতে হয়নি তাঁকে। শুটিং চলাকালীন রথ থেকে ঝাঁপ দিতে গিয়ে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন তিনি। আবার তির লেগে সেলাই পড়েছিল পঙ্কজের চোখের পাশে। সেই অবস্থাতেই শুটিং করেছিলেন তিনি।
১১১৪
নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে অভিনয়ের পাশাপাশি ছবি প্রযোজনাও করতে দেখা যায় পঙ্কজকে। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইক্কে পে ইক্কা’ ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় অক্ষয় কুমারকে। এই ছবিতে অভিনয় করে যা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন সেই টাকা দিয়ে মুম্বইয়ে বাড়ি কিনেছিলেন অক্ষয়। ধীরে ধীরে পঙ্কজ এবং অক্ষয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
১২১৪
২০১০ সালে পঙ্কজ যখন অভিনয় শেখানোর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলেন তখন তার উদ্ধোধন করতে উপস্থিত ছিলেন অক্ষয়। স্ত্রী এবং পুত্র নিকিতিন ধীর এবং পুত্রবধূকে নিয়ে বর্তমানে মুম্বইয়ে থাকেন পঙ্কজ।
১৩১৪
বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিকিতিনও অভিনয়ে নেমেছেন। ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘যোধা আকবর’, ‘দবং ২’, ‘হাউসফুল ৩’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন নিকিতিন। এ ছাড়াও গুটিকতক তেলুগু ভাষার ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি হিন্দি ধারাবাহিকেও অভিনয় করেন নিকিতিন।
১৪১৪
‘কানুন’, ‘চন্দ্রকান্তা’, ‘যুগ’ এবং ‘সসুরাল সিমর কা’র মতো হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন পঙ্কজ। সারা জীবনের কেরিয়ারে চল্লিশটিরও বেশি ছবি এবং ধারাবাহিকে কাজ করেছেন তিনি। ২০১৯ সালে ‘পয়সন’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ়ে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় পঙ্কজকে। বর্তমানে ‘অজুনি’ নামের হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন তিনি। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, তাঁকে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে।