Pakistani cinema is dying reports suggest nearly 40 percent screens have shut down since 2018 dgtl
Pakistani cinema
একে একে ঝাঁপ বন্ধ করছে পড়শি দেশের প্রেক্ষাগৃহ, নিজের নাক কেটে বলিউডের যাত্রাভঙ্গ করছে ললিউড?
পাকিস্তানে মাল্টিপ্লেক্স সংস্কৃতির উত্থান মূলত ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছিল। এর ফলে পাকিস্তানি সিনেমার জগতে এক নতুন পর্বের সূচনা হয়েছিল।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫ ১০:৪২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
ভাল সিনেমা ও দর্শকদের পছন্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারার কারণে ধসে পড়ছে পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক জগতের একটি প্রধান অংশ। হলিউডের সঙ্গে নামের সাযুজ্য রেখে ‘ললিউড’ নামে ডাকা হয় পাকিস্তানের ফিল্ম জগৎকে। ভাল ছবির অভাবে ধুঁকছে পাকিস্তানের প্রেক্ষাগৃহগুলি। একে একে বন্ধ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী একক পর্দার প্রেক্ষাগৃহও।
০২১৬
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গিয়েছে গোটা পাকিস্তান জুড়ে। চলচ্চিত্র পরিবেশক নাদিম মান্ডভিওয়ালা ‘দ্য প্রিন্ট’কে জানিয়েছেন, ৩৬টি প্রেক্ষাগৃহের ৫৮টি পর্দা এখনও পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরও ন’টি অস্থায়ী ভাবে বন্ধ রয়েছে।
০৩১৬
পাকিস্তানের বক্স অফিসের ভাঙনের পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। ভাল বিষয়বস্তুর অভাব, অর্থনৈতিক চাপ এবং দর্শকদের পছন্দের পরিবর্তন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলির মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তান ফিল্ম ফেডারেশনের প্রধান শাহজ়াদ রফিকের মতে সিনেমার দুনিয়া টিকিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত চলচ্চিত্রের সরবরাহ প্রয়োজন।
০৪১৬
বিচ্ছিন্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাতে নগদ অর্থের অভাবে এই শিল্পটির প্রায় লাটে ওঠার জোগাড়। সিনেমা আর জনসাধারণের নাগালের মধ্যে নেই এবং পাক অভিজাত শ্রেণির একাংশ আর এতে আকৃষ্ট হন না বলে মনে করছেন তিনি। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কয়েক জন অবশ্য সহজ চাঁছাছোলা ভাষায় বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তাঁদের দাবি, পাকিস্তানি সিনেমার আর কোনও বাজার নেই। এই ইঙ্গিত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
০৫১৬
পাকিস্তানে মাল্টিপ্লেক্স সংস্কৃতির উত্থান মূলত ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছিল। এর ফলে পাকিস্তানি সিনেমার জগতে এক নয়া পর্বের সূচনা হয়েছিল।
০৬১৬
মাল্টিপ্লেক্স সিনেমার দিকে ঝুঁকে পড়ার ফলে ঐতিহ্যবাহী একক পর্দার প্রেক্ষাগৃহগুলিতে নতুন সিনেমা মুক্তি পাওয়া কমতে শুরু করে। একক পর্দার প্রেক্ষাগৃহে দর্শক আসন ফাঁকা হতে শুরু করে। এর ফলে গড় পাকিস্তানিদের কাছে সিনেমা দেখার সুযোগ ক্রমশ কমে যায়। শাহজ়াদ জানিয়েছেন, মাল্টিপ্লেক্সে যাওয়ার খরচ আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র টিকিটের দাম জনপ্রতি ২ হাজার পাকিস্তানি টাকা।
০৭১৬
একটি পরিবারের কাছে একটি সিনেমা দেখার অর্থ হল যাতায়াত এবং বিরতিতে খাবার-সহ অন্তত ১৫ হাজার পাকিস্তানি টাকা খরচ করা। বর্তমানে অনেকের কাছেই এই খরচটি বিপুল। এক জন পাকিস্তানি নাগরিক যদি মাসে ৫০ হাজার পাকিস্তানি টাকা আয় করেন, তিনি এক বার সিনেমা দেখতে গিয়ে ১৫ হাজার টাকা খরচ করার যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পান না।
০৮১৬
আর্থিক কারণে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি এক রকম বড় পর্দায় সিনেমা দেখার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মাল্টিপ্লেক্সগুলি কেবল বড় বড় শহরগুলির উচ্চবিত্ত গ্রাহকদের ভরসার উপর চলছে। তুলনামূলক ছোট শহরগুলির কম আয়ের দর্শকদের কাছে টানতে পারছে না প্রেক্ষাগৃহগুলি।
০৯১৬
আল জ়াজ়িরার সাংবাদিক ফিল হোয়াডের মতে, আশির দশকে পাকিস্তানে সামরিক শাসনের সময় লাহোরে পাকিস্তানি চলচ্চিত্র শিল্প স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। ২০০৩ সালে করাচিতে তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতারা যখন কম বাজেটের ছবি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন, তখন আবার নতুন করে একটু একটু করে মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করে পাকিস্তানের সিনেমা শিল্প।
১০১৬
পাকিস্তানের মাটিতে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নিষিদ্ধ হয়েছে অনেক বলিউডি ছবি। মুক্তির ক্ষেত্রে জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞাও। বলিউডের বহু ছবি দেখা থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে পাক নাগরিকদের। সেই ১৯৬২ সাল থেকেই ভারত থেকে পাঠানো অনেক ছবি পাকিস্তানে মুক্তি পায়নি।
১১১৬
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারতীয় ছবি, বিশেষ করে বলিউডের মূল ধারার ছবির কালোবাজারিতে আখেরে ক্ষতি হচ্ছিল পাক সরকারেরই। বিপুল রাজস্ব ক্ষতির মুখে পড়েছিল পড়শি দেশ। পাকিস্তানের রাজস্ব আয়ের বড় অংশ আসে চলচ্চিত্র ব্যবসা থেকে। ২০০৬ সালে যখন বলিউডের সিনেমার উপর থেকে ৪০ বছরের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়, তখন এটি স্থানীয় চলচ্চিত্র জগতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে।
১২১৬
২০১৫ সালে সলমন খানের ‘বজরঙ্গি ভাইজান’-এর ব্যাপক বাণিজ্যিক সাফল্যের পর ২০১৬ সালে আবারও ভারতীয় সিনেমা নিষিদ্ধ করা হয়। হৃতিক রোশনের ‘কাবিল’ মুক্তির পর ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কেবল সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে মুক্তি পায় ‘সঞ্জু’, ‘গালি বয়’ এবং ‘সিম্বা’। এদের মধ্যে ‘সঞ্জু’ সেই বছর পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক হিট হয়ে উঠেছিল জানান নাদিম।
১৩১৬
পুলওয়ামা হামলার পর ২০১৯ সালে আবারও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর ফলে সে দেশের বলিউড ভক্তদের ভিড়ে গমগম করা সিনেমা হলগুলি খালি হয়ে যায়। মান্ডভিওয়ালার মতে, বলিউডি সিনেমার দাপট সত্ত্বেও ২০১৯ সালের মধ্যে দেশে পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের বাজার ৫০ শতাংশ জায়গা দখল করেছিল। ধীরে ধীরে এটি বেড়ে ওঠার আশাও করা হচ্ছিল।
১৪১৬
ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রদর্শন বন্ধ করায় সিনেমা হলগুলি বিপুল রাজস্বের উৎস হারাতে থাকে। ফলস্বরূপ সেই প্রভাব গিয়ে পড়ে পাকিস্তানি চলচ্চিত্র প্রকল্পের তহবিলেও। এখনও পর্যন্ত যে অগ্রগতি হয়েছিল তা থমকে যায়।
১৫১৬
অন্য দিকে পাকিস্তানি সিনেমার স্থান দখল করে নিচ্ছে টিভি, ওটিটি। চলচ্চিত্র সমালোচকদের মতে পাকিস্তানি সিনেমা এখন তার প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।
১৬১৬
সে দেশে আগে ১০০টিরও বেশি স্ক্রিন ছিল। এখন ৬০টি সিনেমা হল চলছে টিমটিম করে। প্রতি বছর মাত্র একটি-দু’টি সিনেমা নির্মিত হলেও সিনেমা হলে দর্শকদের উপর এর প্রভাব খুব কমই পড়ে। মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য একটি নির্দিষ্ট ধরনের সিনেমা তৈরি করা সম্ভব না হলে পাকিস্তানে সিনেমা হলগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবেই থেকে যাবে বলে জানিয়েছেন সে দেশের খ্যাতনামী পরিচালক সইফ হাসান।