Pakistan space agency was far ahead of India once upon a time dgtl
Pakistan Space Research
ইসরোর আগে রকেট পাঠায়! মহাকাশে ভারতের চেয়ে এগিয়ে থেকেও চার ভুলে মুখ থুবড়ে পড়ে পাকিস্তান
ইসরোর চেয়েও পুরনো এবং অভিজ্ঞ পাকিস্তানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘সুপারকো’। একসময়ে মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে অনেক ধাপ এগিয়ে ছিল পাকিস্তান।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:০৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
দ্য স্পেস অ্যান্ড আপার অ্যাটমোসফিয়ার রিসার্চ কমিশন। সংক্ষেপে ‘সুপারকো’। পাকিস্তানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাকে এই নামেই চেনে বিশ্ব। অবশ্য, চিনলেও অনেকে সুপারকোকে মনেই রাখেননি।
০২২২
মনে না রাখার প্রধান কারণ, গত কয়েক দশকে মনে রাখার মতো তেমন কোনও কাজই করেনি পাক সংস্থা। মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে তার অবদান নামমাত্র।
০৩২২
অথচ, পাকিস্তানের সুপারকো একসময় চমকে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। তাদের পারদর্শিতা, ক্ষমতা এবং কার্যকারিতা দেখে বিস্মিত হয়েছিল আমেরিকাও।
০৪২২
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বিষয়টা অবিশ্বাস্য মনে হলেও মহাকাশ গবেষণায় ভারতের ইসরোর চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ পাকিস্তানের সুপারকো। কারণ ওই সংস্থাটি তৈরি হয়েছিল ইসরোর নয় বছর আগে।
০৫২২
বিশ শতকের ষাটের দশকের একেবারে গোড়ার কথা। আমেরিকা, সোভিয়েত রাশিয়া ছাড়া মহাকাশ গবেষণা নিয়ে তখনও সে ভাবে মাথা ঘামানোর সুযোগ পায়নি অন্য কোনও দেশ। বিশ্বের দরবারে একচেটিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মত্ত ওয়াশিংটন এবং মস্কো।
০৬২২
১৯৬১ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আয়ুব খান আমেরিকা সফরে যান। তত দিনে রাশিয়া মহাকাশে পাঠিয়ে ফেলেছে প্রথম সফল কৃত্রিম উপগ্রহ এবং প্রথম মহাকাশচারী। তাদের জবাব দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন কেনেডি।
০৭২২
কেনেডি ঘোষণা করে ফেলেছিলেন, চাঁদে তাঁরাই প্রথম মানুষ পাঠাবেন। সেই অনুযায়ী তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। তেমন সময়ে দেশের মুখ্য বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতা আব্দুস সালামকে নিয়ে আমেরিকায় পা রেখেছিলেন আয়ুব।
০৮২২
সালাম সে সময়ে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী মহলে ছিলেন উঠতি তারকার মতো। সফর চলাকালীন নাসা তাঁকে আমন্ত্রণ জানায়। ওয়াশিংটনের কাছ থেকে কার্যত অবিশ্বাস্য একটি প্রস্তাব আসে ওই সফরে।
০৯২২
আমেরিকা নিজেদের চন্দ্রাভিযানের আগে পাকিস্তানকে রকেট উৎক্ষেপণের প্রস্তাব দিয়েছিল। পাক মহাকাশ গবেষণায় তখনও তেমন পরিকাঠামো ছিল না। আমেরিকার সাহায্যে শুরু হয় মহাকাশে রকেট পাঠানোর তোড়জোড়।
১০২২
সালামের নেতৃত্বে ১৯৬২ সালে মাত্র ন’মাসের মধ্যে অসাধ্যসাধন করে পাকিস্তান। তাদের তৈরি রকেট উড়ে গিয়েছিল মহাকাশে। দক্ষিণ এশিয়ায় ওই নজির ছিল প্রথম। রকেট উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে এশিয়ায় পাকিস্তান হয়েছিল তৃতীয়— জাপান এবং ইজ়রায়েলের পরেই।
১১২২
এত কম সময়ের মধ্যে পাকিস্তান যে রকেট মহাকাশে পাঠাতে পারবে, কেউ ভাবতে পারেনি। আমেরিকা একই প্রস্তাব ভারত-সহ অন্য ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় থাকা অন্য দেশগুলিকেও দিয়েছিল। কিন্তু সবার আগে কাজটি করে দেখায় পাকিস্তান।
১২২২
এর পর ষাটের দশক জুড়ে মহাকাশে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায় পাকিস্তান। ১৯৬৭ সালে করাচিতে তৈরি হয় দেশের প্রথম রকেট নির্মাণের প্ল্যান্ট। ১৯৬৯-এর মধ্যে আরও দু’টি পাক রকেট মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল।
১৩২২
তবে আশির দশকের পর থেকেই মহাকাশ গবেষণায় যেন হারিয়ে যেতে শুরু করে পাকিস্তান। ওই সময়ে মূলত চিনের সাহায্যে তারা বেশ কয়েকটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছিল। তাতে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না।
১৪২২
‘স্পেস ভিসন ২০৪৭’ নামে পাকিস্তানের মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে ২০৪৭ সালের মধ্যে আরও কিছু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়ে দেশের গবেষণা ক্ষেত্রে উন্নয়নের জোয়ার আনতে চায় ইসলামাবাদ। তবে তা কতটা বাস্তবায়িত হবে, নিশ্চয়তা নেই।
১৫২২
ভাল শুরু করেও মহাকাশ গবেষণায় ভারতের পড়শি দেশের এই দুরবস্থার ক্ষেত্রে কয়েকটি ভুল চিহ্নিত করেন বিশেষজ্ঞেরা। তার মধ্যে অন্যতম বরাদ্দ অর্থের অপ্রতুলতা।
১৬২২
সুপারকোর অনেক পরে স্থাপিত হয়েও ভারতের ইসরো ২০২৩ সালের অগস্ট মাসে চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়ে দেখিয়েছে। অভিযোগ, পাকিস্তানের সরকার মহাকাশ গবেষণাকে সে ভাবে গুরুত্বই দেয়নি। পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি ওই খাতে।
১৭২২
মহাকাশের লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ার জন্য অনেকে দায়ী করেন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে। দেশের সরকারের উপর তাদের কড়া নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন প্রশাসনিক এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সেনার প্রভাব সুপারকোকে বেশি দূর এগোতে দেয়নি বলে দাবি করা হয়।
১৮২২
অভিযোগ, পাক সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিকদের মাঝে মাঝেই সুপারকোর কোনও না কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। ওই পদের জন্য তাঁরা উপযুক্ত কি না, বিচার করা হয়নি। এ ছাড়াও আরও অনেক ভাবে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাকে প্রভাবিত করার অভিযোগ রয়েছে সেনার উপর।
১৯২২
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭৪ সালে ভারতের প্রথম পরীক্ষামূলক পরমাণু বিস্ফোরণ সফল হওয়ার পর থেকেই মহাকাশে পাকিস্তানের স্বপ্নের উড়ান মুখ থুবড়ে পড়ে। এমনটা দাবি ইসলামাবাদের এয়ার ইউনিভার্সিটির ডিন আদিল সুলতানের।
২০২২
বলা হয়, ওই সময়ের পর থেকে মহাকাশকে ব্যবহার করে সামরিক সাফল্যের দিকে নজর ঘুরিয়েছিল পাকিস্তান। মহাকাশ গবেষণায় আর মন দেওয়া হয়নি। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে শুরু করে তারা। পরমাণু বোমা তৈরিতে মনোনিবেশ করে ইসলামাবাদ।
২১২২
নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তান সফল ভাবে পরমাণু শক্তি পরীক্ষা করে। ওই সময়ে দেশটির উপর আন্তর্জাতিক মহল থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপিত হয়। ফলে মহাকাশ গবেষণায় বিদেশের সাহায্যও আর পায়নি পাকিস্তান।
২২২২
মূলত, এই চারটি কারণে পাকিস্তানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা সুপারকো সম্ভাবনার আলো দেখিয়েও অচিরে নিভে গিয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। ভারতকে ছুঁতে গেলে এখনও দীর্ঘ পথ তাদের অতিক্রম করতে হবে।
ছবি: রয়টার্স, পিটিআই, এএফপি, আনস্প্ল্যাশ এবং ফাইল চিত্র।