Pakistan is totally dependent on Chinese weapon, is it a big concern for India dgtl
Pakistan Dependency on Chinese War Equipment
ট্যাঙ্ক-কামান থেকে ড্রোন বা লড়াকু জেট, ভরসা শুধুই ড্রাগন! নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছে পাক সেনা?
হাতিয়ার আমদানির ক্ষেত্রে পুরোপুরি চিনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে পাকিস্তান, বলছে ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর রিপোর্ট। ভারতের জন্য পোয়াবারো, না কি থাকছে ড্রাগন-কাঁটার ভয়?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:০২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাড়ছে চিনা নির্ভরতা। বর্তমানে অধিকাংশ হাতিয়ারই ড্রাগনভূমি থেকে আমদানি করছেন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা। আন্তর্জাতিক সমীক্ষক সংস্থা থেকে এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা। বিষয়টি নয়াদিল্লির কাছে কতটা উদ্বেগের, তা নিয়ে চলছে কাটাছেঁড়া। ভারতের সাবেক সেনা অফিসারদের একাংশ অবশ্য একে ‘শাপে বর’ হিসাবেই দেখছেন।
০২২০
সম্প্রতি পাক ফৌজের হাতিয়ার সক্ষমতা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ বা এসআইপিআরআই। তাদের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ইসলামাবাদের আমদানি করা অস্ত্রের ৮১ শতাংশ এসেছে বেজিং থেকে। আগে এই পরিমাণ ছিল ৭৪ শতাংশ। এককথায়, রাওয়ালপিন্ডির সেনা অফিসারদের কাছে অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে ড্রাগনের হাতিয়ারের উপর নির্ভরশীলতা।
০৩২০
এসআইপিআরআই জানিয়েছে, যত সময় গড়াচ্ছে ততই চিনের সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পাকিস্তানের সামরিক অংশীদারি। সাধারণ সৈনিকদের ব্যবহার করা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে শুরু করে লড়াকু জেট বা যুদ্ধজাহাজ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বেজিঙের হাতিয়ার কিনছে ইসলামাবাদ। এতে তারা যে নিজের কবর নিজেরাই খুঁড়ছে, তা সমীক্ষা রিপোর্টে স্পষ্ট করা হয়েছে।
০৪২০
চিন-পাকিস্তান অস্ত্র সরবরাহ সমঝোতার সর্বশেষতম উদাহরণ হল, ‘জে-৩৫এ’ স্টেলথ যুদ্ধবিমান। ড্রাগনের থেকে ৪০টি পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেট কেনার ব্যাপারে চূড়ান্ত পর্যায়ে কথাবার্তা চালাচ্ছে ইসলামাবাদ। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের মন্ত্রিসভা ইতিমধ্যেই এর অনুমোদন দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে, আর্থিক লেনদেনের অঙ্ক কী দাঁড়াবে, তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি।
০৫২০
প্রসঙ্গত, ঘরের মাটিতে বিপুল পরিমাণে প্রতিরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনের চেষ্টা দীর্ঘ দিন ধরেই চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। কিন্তু, নানা কারণে ইসলামাবাদের সেই স্বপ্ন এখনও পূরণ হয়নি। ফলে বিদেশ থেকে অস্ত্র আমদানি করা ছাড়া রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তাদের সামনে আপাতত দ্বিতীয় রাস্তা খোলা নেই। এসআইপিআরআইয়ের সমীক্ষকদের দাবি, দেশীয় প্রযুক্তিতে হাতিয়ার তৈরির ক্ষেত্রেও ব্যাপক ভাবে চিনের উপর নির্ভরশীল ইসলামাবাদ।
০৬২০
উদাহরণ হিসাবে ‘জে-১৭’ যুদ্ধবিমানের কথা বলা যেতে পারে। এই চিনা লড়াকু জেটের আদলে ঘরের মাটিতে যুদ্ধবিমান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে ইসলামাবাদের। কিন্তু, বেজিং থেকে প্রযুক্তি এবং কাঁচামাল সংগ্রহ না করতে পারলে, প্রকল্পটি একচুলও এগোবে না। ফলে একে পাকিস্তানের নিজস্ব লড়াকু জেট আখ্যা দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের বেশ আপত্তি রয়েছে।
০৭২০
একই কথা পাক নৌসেনার যুদ্ধজাহাজ এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। গত কয়েক বছরে দূরপাল্লার নজরদারি ড্রোন, টাইপ ০৫৪এ গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ফ্রিগেট এবং ৬০০-র বেশি ভিটি-৪ ট্যাঙ্ক আমদানি করেছে ইসলামাবাদ। এই সমরাস্ত্রগুলির সব ক’টি সরবরাহ করেছে কোনও না কোনও চিনা প্রতিরক্ষা সংস্থা।
০৮২০
ভারতের সাবেক সেনা অফিসারদের দাবি, হাতিয়ারের ব্যাপারে চিনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ভবিষ্যতে পকিস্তানকে বড় বিপদের মুখে ফেলবে। এখনই ৬৩ শতাংশ অস্ত্র ইসলামাবাদকে সরবরাহ করছে বেজিং। আগামী দিনে একে ৯০ বা ৯২ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ড্রাগনের। এতে শাহবাজ় সরকারের উপর প্রভাব এবং নানা ধরনের চাপ বজায় রাখতে সক্ষম হবেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
০৯২০
দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানকে নিয়ে চিনা নীতি আজীবন একই রকম থাকবে, তা ভাবার কোনও কারণ নেই। বেজিঙের কাছে ইসলামাবাদের গুরুত্ব কমলে বা দুই দেশের সম্পর্কে কোনও কারণে চিড় ধরলে বিপাকে পড়বেন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে আর্থিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলে অস্ত্রের সরবরাহের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে পাক ফৌজ।
১০২০
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে পাকিস্তানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইসলামাবাদ পরমাণু হাতিয়ার তৈরি করলে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। এ ছাড়া গত কয়েক দশক প্রকাশ্যেই সন্ত্রাসবাদকে মদত দিয়ে এসেছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই (ইন্টার সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স)। এর জেরে ইসলামাবাদকে অস্ত্র বিক্রির থেকে ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়েছে ওয়াশিংটন।
১১২০
প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে আমেরিকা দূরত্ব তৈরি করতেই সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে চিন। এ ক্ষেত্রে বেজিঙের কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সব সময় শক্তিশালী প্রতিবেশী হিসাবে দেখতে চায় ড্রাগন। পাশাপাশি, ইসলামাবাদ ও ওয়াশিংটনের সম্পর্কে ফাটল ধরিয়ে তার ফয়দা তোলার পরিকল্পনা রয়েছে প্রেসিডেন্ট শি-র।
১২২০
বিশ্লেষকদের দাবি, বেজিং যে ভাবে পাক ফৌজকে হাতিয়ার সরবরাহ করে চলেছে, তাতে ভবিষ্যতে তারা যে ইসলামাবাদের উপর নানা ধরনের শর্ত আরোপ করবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, আর্থিক দিক থেকে বর্তমানে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে রয়েছে শাহবাজ় শরিফ সরকার। তা ছাড়া ড্রাগনের দেওয়া অস্ত্র নিয়ে রণক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সমস্যার মুখে পড়তে পারে পাক সেনা।
১৩২০
চিনের তৈরি কোনও অস্ত্রই এখনও পর্যন্ত যুদ্ধে ব্যাপক ভাবে ব্যবহার হয়েছে, তেমনটা নয়। ফলে সেগুলির দীর্ঘমেয়াদি নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তার পরেও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হওয়ার দিকে কোনও রকমের হেলদোল নেই পাক সরকারের। বেজিংকে ‘অভিন্নহৃদয় বন্ধু’ বলে ঘোষণা করেছে ইসলামাবাদ। ফলে ভবিষ্যতে পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটি যে অস্ত্র নির্মাণের চেয়ে ক্রয়ের দিকে বেশি নজর দেবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
১৪২০
অন্য দিকে এই সমস্যাগুলির কারণেই বর্তমানে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বর্তমানে বহু অস্ত্র সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করছে ভারত। তালিকায় রয়েছে বিমানবাহী রণতরী, লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টার থেকে শুরু করে সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন। আর এর জন্য বেসরকারি উদ্যোগকে ঢালাও উৎসাহ দিচ্ছে সরকার।
১৫২০
স্বাধীনতার পর রাশিয়া থেকে সর্বাধিক হাতিয়ার আমদানি করত ভারত। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে সেই নীতি বদল করে নয়াদিল্লি। প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে পুরোপুরি মস্কোর উপর নির্ভরশীল না হয়ে অন্য দেশের সঙ্গেও এ ব্যাপারে চুক্তি করেছে এ দেশের সরকার।
১৬২০
এ ব্যাপারে বায়ুসেনার রাফাল লড়াকু জেট বা অ্যাপাচে হেলিকপ্টার, স্থলবাহিনীর ব্যবহার করা টাভোর রাইফেল এবং নৌসেনার ফ্রিগেট শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ ‘আইএনএস তুশিল’-এর কথা বলা যেতে পারে। রাফাল এবং অ্যাপাচে কপ্টার ফ্রান্স এবং আমেরিকার থেকে কিনেছে ভারত। টাভোর এসেছে ইজ়রায়েলের থেকে। আর ‘আইএনএস তুশিল’-এর নির্মাণকারী দেশ হল রাশিয়া।
১৭২০
বর্তমানে বিদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি সরবরাহের দিকে জোর দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে হাতিয়ার নির্মাণও শুরু করেছে ভারত। যেমন রাশিয়ার সঙ্গে মিলে ‘ব্রহ্মস’ সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র এবং একে-২০৩ নামের অ্যাসল্ট রাইফেল দেশের মাটিতেই তৈরি করছে নয়াদিল্লি।
১৮২০
ভারতের ঘরোয়া সামরিক সরঞ্জামের শিল্প নেহাত ছোট নয়। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের মোড় ঘোরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিওর (ডিফেন্স রিসার্চ ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন) পিনাকা মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চার। হাতিয়ারটির পাল্লা এবং শক্তি পরবর্তী দশকগুলি বৃদ্ধি করেন এ দেশের সামরিক গবেষকেরা। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে এই অস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৯২০
ভারতের থেকে পিনাকা কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ফ্রান্স। এই নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কথাবার্তা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। অন্য দিকে রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘ব্রহ্মস’ সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র ফিলিপিন্সকে বিক্রি করেছে মোদী সরকার। এই ক্ষেত্রণাস্ত্রটি কেনার ব্যাপারে আগ্রহী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশ। সেই তালিকায় আছে ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার এবং ভিয়েতনাম।
২০২০
এত কিছুর পরও ভারতের তিন বাহিনী হাতিয়ারের ব্যাপারে রুশ নির্ভরশীলতা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে এমনটা নয়। এখনও বহু অস্ত্রের সরঞ্জাম মস্কোর থেকে আমদানি করে থাকে নয়াদিল্লি। তবে এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আত্মনির্ভর হওয়া নয়, আগামী দিনে হাতিয়ার রফতানিতে বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে মোদী সরকার। এতে কেন্দ্র কতটা সফল হয়, তার উত্তর দেবে সময়।