বিগত কয়েক বছর ধরেই পাকিস্তান গাধা পালনের ব্যাপারে তৎপর। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯-২০২০ সালে পাকিস্তানে গাধার সংখ্যা ছিল ৫৫ লাখ। তার পর থেকে প্রতি বছরই লাখখানেক করে গাধা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে দেশে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৪ ১১:৩১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
পাকিস্তানে হু হু করে বাড়ছে গাধার সংখ্যা। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক বছরে ভারতের পড়শি দেশে গাধার সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ। বর্তমানে সে দেশে গাধার সংখ্যা ৫৯ লাখ!
০২২২
বিগত কয়েক বছর ধরেই পাকিস্তান গাধা পালনের ব্যাপারে তৎপর। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯-২০২০ সালে পাকিস্তানে গাধার সংখ্যা ছিল ৫৫ লাখ। তার পর থেকে প্রতি বছরই লাখখানেক করে গাধা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত চার বছরে চার লাখ গাধার সংখ্যা বেড়েছে ভারতের পড়শি দেশে।
০৩২২
কেন পাকিস্তান গাধার সংখ্যা বৃদ্ধির উপর জোর দিল? সেই প্রসঙ্গে আসার আগে জেনে নেওয়া যাক সে দেশের বর্তমান আর্থিক অবস্থার বিষয়ে। আর্থিক ভাবে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তান কতটা ঘুরে দাঁড়াল?
০৪২২
বিগত কয়েক বছর ধরে আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে পাকিস্তান। নতুন সরকার গঠনের পরেও ছবিটা তেমন বদলায়নি। মানুষ খেতে পাচ্ছেন না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। শাহবাজ় শরিফের মাথার উপর ঝুলছে বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা।
০৫২২
এমন অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ করেছে শাহবাজ় সরকার। তবুও অবস্থার তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। কৃষি ক্ষেত্র ছাড়া বাকি ক্ষেত্রে তেমন উন্নতি করতে পারেনি ভারতের পড়শি।
০৬২২
মঙ্গলবার পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মহম্মদ অওরঙ্গজেব ২০২৩-২৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা প্রকাশ করেছেন। সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের জন্য পাক সরকার দেশের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল, তা ছুঁতে ব্যর্থ হয়েছে।
০৭২২
পাক সরকার চেয়েছিল গত অর্থবছরে তাদের জিডিপি বৃদ্ধি হোক ৩.৫ শতাংশ। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারেনি পাকিস্তান। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে পাকিস্তানের জিডিপি বৃদ্ধির হার ২.৩৮ শতাংশ।
০৮২২
কৃষিক্ষেত্র ছাড়া মোটামুটি বাকি সব ক্ষেত্রেই বৃদ্ধির হার লক্ষ্যমাত্রার নীচে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শিল্প ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল ৩.৪ শতাংশ বৃদ্ধির। সেখানে এক বছরে পাকিস্তান শিল্প ক্ষেত্রে বৃদ্ধি করেছে মাত্র ১.২১ শতাংশ। পরিষেবা খাতে আর্থিক বৃদ্ধি পেয়েছে ১.২১ শতাংশ।
০৯২২
তবে কৃষি খাতে গত ১৯ বছরে রেকর্ড করেছে পাকিস্তান। এই খাতে আর্থিক বৃদ্ধি পেয়েছে ৬.২৫ শতাংশ। পাক অর্থমন্ত্রীর কথায়, দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মূল চালকই কৃষি।
১০২২
দেশের রাজস্ব ঘাটতি গত বছরের মতোই। সে বারও ঘাটতির হার ছিল ৩.৭ শতাংশ। বাণিজ্য ঘাটতি রয়ে গিয়েছে ৪.২ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে, যা পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থার জন্য সতর্কবার্তা।
১১২২
২০২২ সালে আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয় পাকিস্তান। গত দু’বছর ধরে মূল্যবৃদ্ধির জন্য নাজেহাল অবস্থা পাক নাগরিকদের। খাবার নিয়ে সে দেশের মানুষকে প্রকাশ্য রাস্তায় মারপিটও করতে দেখা গিয়েছে একাধিক বার।
১২২২
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমার নাম নেই পাকিস্তানে। ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠছে পাকিস্তানের আমজনতার। ২০২৩ সালে মূল্যবৃদ্ধির হার পৌঁছেছিল ৩৮ শতাংশে। আর্থিক সঙ্কট সামাল দিতে টালমাটাল অবস্থা তাদের।
১৩২২
আর্থিক সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে গাধার পালন বৃদ্ধি করছে পাকিস্তান। সেই সব গাধা বিদেশে, মূলত চিনে রফতানি করে আর্থিক লাভের আশা করছে শাহবাজ় সরকার। চিনের সঙ্গে পাকিস্তানের সখ্য বহু পুরনো। সেই বন্ধুত্বকে কাজে লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় পাকিস্তান।
১৪২২
কিন্তু কেন চিনে গাধা রফতানি করতে চায় পাকিস্তান? প্রধানত মালবাহক হিসাবে এই প্রাণীর ব্যবহার রয়েছে গোটা বিশ্বে। কিন্তু এই গাধাই বিশ্ব বাণিজ্য বাজারে অন্যতম চর্চিত বিষয়।
১৫২২
গাধা নিয়ে চিন এবং আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে দড়ি টানাটানি চলছে। এমন অবস্থায় নিজের ‘বন্ধু’কে গাধা পাঠিয়ে সাহায্য করতে চায় পাকিস্তান।
১৬২২
চিনের কাছে গাধা কেন এত অপরিহার্য? চিনা বাজারে ইজিয়াও নামে এক ওষুধের চাহিদা তুঙ্গে। সেই ওষুধ তৈরি করতে মূলত প্রয়োজন গাধার চামড়ার। সেই চামড়া সংগ্রহ করতে বিগত কয়েক বছরে বেড়েছে গাধা হত্যার ঘটনা। শুধু তা-ই নয়, চোরাচালানকারীদের নজরেও রয়েছে গাধা।
১৭২২
ইজিয়াও নিয়ে আলোচনা এখন সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম দখল করলেও চিনে এই ওষুধের ব্যবহার বহু পুরনো। ১৬৪৪ সাল থেকে এই ওষুধের ব্যবহার হয়ে আসছে ভারতের পড়শি দেশে।
১৮২২
সে সময় সাধারণত রাজপরিবারের মধ্যেই এই ওষুধের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এখন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যেই এই ওষুধের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
১৯২২
কেন এই ওষুধের ব্যবহার এত বেড়েছে? চিনাদের বিশ্বাস, এই ওষুধ রক্ত পরিস্রুত করে এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গাধার চামড়া থেকে বার হওয়া এক ধরনের তরল ইজিয়াও তৈরির অন্যতম প্রধান উপকরণ।
২০২২
ওষুধের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চিনে টান পড়তে থাকে গাধার সংখ্যায়। নিজেদের দেশে গাধার সংখ্যা কমে যাওয়ায় চিন বিদেশ থেকে গাধার চামড়া আমদানি শুরু করে।
২১২২
সে ক্ষেত্রে চিন গাধার চামড়া জোগানের জন্য নির্ভর করতে শুরু করে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের উপর। কিন্তু এই গাধা নিয়ে আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে চিনের বিরোধ চরমে ওঠে।
২২২২
চিনকে গাধা সরবরাহ করতে ‘অসম্মত’ হয় আফ্রিকার দেশগুলি। তার পরই গাধার খোঁজে অন্যান্য দেশের দিকে ‘হাত’ বাড়িয়ে দেয় চিন। এমন অবস্থায় চিনকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল পাকিস্তান।