কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার এত কিছুর দরকার হত না। পরীক্ষার্থীরা যে উত্তর সম্বন্ধে নিশ্চিত, তা লিখতেন। বাকি খাতা সাদা রেখে দিতেন। সংশ্লিষ্ট আধিকারিক এবং পরীক্ষক তাঁকে প্রয়োজনীয় নম্বর দিয়ে পাশ করিয়ে দিতেন। এ সব ক্ষেত্রে খাতাটি এক বার আরটিআই করানো হত। তখন খাতা হাতে নিয়ে ইচ্ছেমতো উত্তর লিখে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
২০১৩ সালে ইনদওর পুলিশ প্রাক্-মেডিক্যাল পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে হাতেনাতে ধরে ২০ জন ভুয়ো পরীক্ষার্থীকে। তাঁদের সূত্রেই তদন্তকারীদের জালে ধরা পড়েন দুর্নীতি চক্রের অন্যতম মাথা জগদীশ সাগর। অভিযোগ, বহু পরীক্ষার্থীর থেকে টাকা নিয়ে তাঁদের চাকরি পেতে সাহায্য করেছেন তিনি। কয়েক বছরে হয়ে উঠেছেন বিপুল সম্পত্তির মালিক। তাঁর গ্রেফতারির পর একে একে ধরা পড়েন সঞ্জীব শিল্পকার, সুধীর রাই, সন্তোষ গুপ্ত, তরঙ্গ শর্মা-সহ দুর্নীতির অন্য মাথারা। কেউ ২৬ লাখ, কেউ ৩ কোটি— চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে এঁরা এক এক জন এক এক রকম টাকা দাবি করতেন।
অপসারিত আইপিএস অফিসার থেকে শুরু করে ব্যাপমের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, আধিকারিক, অভিযুক্তদের তালিকায় কেউ বাদ ছিলেন না। দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক বড় বড় নাম গ্রেফতারির খাতায় উঠেছে। মেডিক্যাল পরীক্ষায় ইনদওরের অরবিন্দ হাসপাতালের মুখ্য পরিচালনা আধিকারিকের পুত্রের র্যাঙ্ক হয়েছিল ১২। দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। গ্রেফতার হয়েছিলেন এমজিএম কলেজের এমবিবিএস ছাত্র মোহিত চৌধুরিও।
ইনদওরের চিকিৎসক আনন্দ রাই ব্যাপম দুর্নীতি বিষয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন। তা থেকেই তদন্ত শুরু হয়। অভিযোগ, নিয়মিত হুমকি ফোন পেতেন তিনি। তাঁকে খুন করার জন্য ‘সুপারি কিলার’ ভাড়া করা হয়েছিল। আদালতের কাছে নিরাপত্তা চেয়েও তিনি পাননি। পরে ইনদওর থেকে দূরে একটি গ্রামে তাঁকে বদলি করে দেওয়া হয়। মধ্যপ্রদেশ সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের বিরুদ্ধে বার বার সরব হয়েছেন এই প্রাক্তন বিজেপি কর্মী এবং আরএসএস সমর্থক।
মুখ্যমন্ত্রী চৌহান এবং মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল রাম নরেশ যাদবের নামও জড়িয়েছিল ব্যাপম কেলেঙ্কারিতে। এসটিএফ রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বনবিভাগে নিয়োগ দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছিল। আদালতে তা দাখিল করলে রাজ্যপাল জানান, সংবিধান দ্বারা তিনি সুরক্ষিত। তাই তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না। হাই কোর্ট তাতে সায়ও দেয়, তবে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি। ২০১৬ সালে অবসরের পর তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে।
রাজ্যপালের পুত্র শৈলেশ যাদব ব্যাপমের চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে রহস্যজনক ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ব্যাপমের সঙ্গে জড়িত ২৩ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা আদালতে জানিয়েছিল এসটিএফ। কিছু কিছু সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ব্যাপমকাণ্ডে ৮৩ পৃষ্ঠার রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। মোট ৬৩৪ জন চিকিৎসকের ডিগ্রি বাতিল করে দেওয়া হয়। রায়ের কপিতে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, ‘‘যদি আমরা নীতি এবং চরিত্রের ভিত্তিতে একটি দেশ গড়তে চাই, সে দেশে যদি আইনের শাসন বজায় রাখতে চাই, তবে কাউকেই ছাড় দেওয়া যাবে না।’’ অভিযুক্ত চিকিৎসকেরা বিনামূল্যে কয়েক বছর চিকিৎসা এবং সমাজসেবার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ডিগ্রি বাতিল আটকাতে চেয়েছিলেন। শীর্ষ আদালতে তা গ্রাহ্য হয়নি।
একাধিক হিন্দি ছবি এবং ওয়েব সিরিজ়ে মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম দুর্নীতির ছায়া দেখা গিয়েছে। এই কেলেঙ্কারির উপর ভিত্তি করেও ছবি তৈরি হয়েছে। তবে ব্যাপম দুর্নীতির তদন্তের শিখরে পৌঁছনো যায়নি বলেই দাবি করেন অনেকে। যখনই তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার কোনও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তখনই কোনও না কোনও অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছে। অতীতের গর্ভে চাপা পড়ে গিয়েছে সত্য। দেশের সবচেয়ে আলোচিত এবং সবচেয়ে বড় দুর্নীতির মধ্যে অন্যতম হয়ে আছে ব্যাপম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy